ভোট পরবর্তী হিংসায় কোমর বেঁধে কোচবিহারে সিবিআই, জানেই না জেলা প্রশাসন
হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কোচবিহারে ভোট পরবর্তী হিংসার মোট ৫ টি মামলার দায়িত্ব নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
কোচবিহার: বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন, এবং ভোট মেটা ইস্তক রাজ্যের যে যে জেলাগুলির নাম বারবার অশান্তির কারণে শিরোনামে উঠে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম কোচবিহার। ‘ভোট পরবর্তী হিংসার’ অন্যতম ভরকেন্দ্র এই জেলাতেই এ বার তদন্তে নামতে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কোচবিহারে ভোট পরবর্তী হিংসার মোট ৫ টি মামলার দায়িত্ব নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
৫ মামলার মধ্য একটি সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের পেটলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হারাধন রায়ের মৃত্যু। দ্বিতীয়টি আদাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের হকদহতে অনিল বর্মণের অস্বাভাবিক মৃত্যু। তৃতীয়, দিনহাটা শহরের জনৈক অজয় রায়ের জমি-বাড়ি দখল এবং বাড়িঘর ভাঙচুর নিয়ে রুজু হওয়া মামলা। সব বিষয়ে খতিয়ে দেখতে শনিবার সিবিআই-এর একটি বিশেষ দল আসছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানি রাজ জানিয়েছেন, তাদের কাছে কেন্দ্রীয় সংস্থার গতিবিধি নিয়ে কোনও তথ্য নেই।
গত ২ মে ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরদিন জামাদরবসে তৃণমূলের কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে হারাধন রায়ের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। এলাকার তৃণমূল কর্মী মিজানুর মিঞাঁ, আনারুল মিঞাঁ, কপিল মিঞাঁদের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ তোলে। ঘটনাস্থল থেকে দিনহাটা হাসপাতালে নিয়ে আসার মুহূর্তেই মৃত্যু হয় তাঁর। এ ঘটনায় হারাধন রায়ের বাবা বিনোদ রায় বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রুজু করেছে বলে জানা যায়।
দ্বিতীয় মামলাটি রয়েছে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের আদাবারি গ্রাম পঞ্চায়েতের হকদহতে। গত ২৯ মে বিজেপি কর্মী অনিল বর্মণের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বাড়ির পাশেই একটি গাছ থেকে। পরিবার এবং কর্মীদের তরফ থেকে এই মৃত্যুকে খুন বলে দাবি করা হয়। কারণ বিজেপি কর্মীদের দাবি, ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই অনিল বর্মণে উপর চাপ সৃষ্টি করছিল তৃণমূল। বেশ কয়েকবার তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এরপরই তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। প্রথমে এই ঘটনায় মাথাভাঙ্গা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও মামলায় নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা তাঁর বাড়িতে ঘুরে গেলে অনেকটা চাপে পড়েই মামলা নেয় সংশ্লিষ্ট থানা।
তৃতীয় মামলাটি রয়েছে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের পুরসভার অন্তর্গত অজয় রায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর-সহ সম্পত্তি লুট এবং জমি-বাড়ি দখল করা নিয়ে। গত ৬ মে শাসকদলের একটি “গুণ্ডাবাহিনী” দিনহাটা শহর তছনছ করে দেয় বলে অভিযোগ। প্রায় ৮ জন বিজেপি কর্মীর বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় বলেও দাবি। সেই দিনই উদয়ন গুহর উপর আক্রমণ হয়। তারপর থেকে বাড়িছাড়া হন অজয় রায়। এরপর পুলিশের সামনেই তাঁর বাড়িতে তাণ্ডব চলে। বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়, ভেঙে ফেলা হয় দুটি চার চাকা গাড়ি-সহ বাড়ির দামি দামি আসবাবপত্র। এরপর ধাপে ধাপে শহরের বিডিও অফিসের সামনে অবস্থিত তাঁর তিন তলা বাড়িও তৃণমূলের যুব নেত্রী মৌমিতা ভট্টাচার্য দখল করে নেন বলে অভিযোগ।
এখানেই শেষ নয়। শহরের বোর্ডিং পাড়ায় অবস্থিত তাঁর জমি বেদখল করে বাজার বসানোর অভিযোগ ওঠে। দিনহাটা থানায় অজয় রায়ের মা এবং স্ত্রী বারবার গেলেও প্রথমে পুলিশ এই অভিযোগগুলি নিতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে হাইকোর্টের নির্দেশে মানবাধিকার কমিশনের একটি দল ঘুরে যায় অজয় রায়ের বাড়িতে। তারপরেই চাপে পড়ে মামলা নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
এই মামলাগুলি ছাড়াও শীতলকুচি, তুফানগঞ্জের আরও কয়েকটি মামলার বিষয়ে সিবিআই তদন্ত করবে বলে জানা গিয়েছে।প্রসঙ্গত, ভোট-পরবর্তী হিংসায় গুরুতর অপরাধের ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সিবিআইএর দল ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় খুন এবং ধর্ষণ-সহ বড় ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি ঘুরছে এবং তথ্য সংগ্রহ করছে। আরও পড়ুন: তদন্তে যেতেই ঘিরে ধরল একদল, খুলে দেওয়া হল সিবিআইয়ের গাড়ির চাকার হাওয়া