‘রাস্তায় লাঠি নিয়ে কেউ ভোটারদের রুখতে পারবে না’, উদয়নের কি বোধদয় না বার্তা?
Udayan Guha : গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উদায়নের বিরুদ্ধেই অশান্তি তৈরির একাধিক অভিযোগ ছিল। আজ সেই উদয়ন গুহর মুখেই এখন গায়ের জোর না খাটানোর বার্তা।
বামনহাট : ত্রিপুরায় তৃণমূল আক্রান্ত হলে, বাংলায় বিজেপিকে রেয়াত করা হবে না। বিতর্কিত মন্তব্য ছিল উদয়ন গুহর। সেই উদয়ন শনিবার দলীয় কর্মিসভায় বলছেন, ‘রাস্তায় লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে কেউ ভোটারদের রুখে দিতে পারবে না।’ তাঁর এই মন্তব্য হুঙ্কার না বোধদয় সন্দিহান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ, এই মুহূর্তে উদয়ন গুহকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু বিষয় চর্চা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। তাই তাঁর এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এ দিন বামনহাটে তৃণমূলের এক কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কর্মিসভার নেতৃত্বে ছিলেন উদয়ন গুহ। কর্মীদের চাঙ্গা করতে গা গরম করা বক্তব্যের মধ্যেই বলে ফেলেন, “রাস্তায় লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে কেউ ভোটারদের রুখে দিতে পারবে না।” উদয়ন বাবু আরও বলেন, “মানুষ যাঁকে ভোট দেবে, তিনিই ভোট পাবেন এবং জিতবেন। গায়ের জোর খাটানো চলবে না। কোনওভাবেই কারও উপর চাপ তৈরি করা হবে না। কোনওরকম প্ররোচনামূলক কাজ করা যাবে না।”
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই এলাকা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভুঁরি ভুঁরি অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। অবাধে ভোট লুঠ, বিরোধীদের দাঁড়াতে না দেওয়া থেকে একাধিক অভিযোগ ছিল। সে সব অভিযোগ তৃণমূল উড়িয়ে দিলেও দিনহাটার ভাগ্য নির্ধারণ কোন পথে হবে তার একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন শাসকদলের দাপুটে নেতা।
সম্প্রতি ত্রিপুরায় তৃণমূলে কর্মীদের উপর হামলার পর শাসানি দিয়েছিলেন উদয়ন গুহ। বলেছিলেন, তৃণমূল যদি ত্রিপুরায় আক্রান্ত হয়, তাহলে ভেটাগুড়িতেও বিজেপির কাউকে রেয়াত করা হবে না। উদয়নের মুখে বরাবরই এমনই বিতর্কতি কথা শোনা যায়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উদায়নের বিরুদ্ধেই অশান্তি তৈরির একাধিক অভিযোগ ছিল। আজ সেই উদয়ন গুহর মুখেই এখন গায়ের জোর না খাটানোর বার্তা।
প্রশ্ন উঠছে, কেন উদয়নের এমন ভোলবদল? কিছুদিন আগে পর্যন্তও তিনি ফেসবুকে বিভিন্নভাবে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন। কখনও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে বিজেপির আঁতাত নিয়ে, আবার কখনও অন্য কোনও ইস্যুতে। বিরোধীদের হুমকি দিতেও দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে।
তবে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিধানসভার উপনির্বাচন রয়েছে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে দলের মধ্যে গুরুত্ব হারিয়েছেন উদয়ন। দিনহাটার প্রশাসক পদে এখন আর তিনি নেই। শুধুমাত্র দলের জেলা চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন তিনি। এখন তৃণমূলের মতো সভাপতি কেন্দ্রিক দলে চেয়ারম্যানের ভূমিকা কী, তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায়। তাহলে কি মানুষের কাছে নিজের ভাবমূর্তি শোধরানোর জন্যই এই ধরনের মন্তব্য?
এছাড়়া এই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের খবরও মাঝে মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে। বিশেষ করে দিনহাটা ১ ও দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকে দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। সেই সমস্যা সামাল দিতে রীতিমতো কালঘাম ছুটেছিল তৃণমূলের। সেই অন্তর্দ্বন্দ্ব থামাতেই কি এই ধরনের মন্তব্য ? উদয়ন গুহর এই মন্তব্যের পর এখনও পর্যন্ত জেলা বিজেপির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আরও পড়ুন : ‘মুকুলবাবু যতদিন আমাদের দলে ছিলেন কেস হয়েছে, এখন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে হবে’, সিআইডি তলব প্রসঙ্গে দিলীপ