Balurghat news: নেশামুক্তি কেন্দ্রে অত্যাচারের কারণেই মৃত্যু? কোন রহস্য লুকিয়ে বালুরঘাটে?

Balurghat news: নেশা ছাড়াতে পরিবারের তরফ থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বালুরঘাট ব্লকের পরানপুর এলাকায় এক নেশা মুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। অভিযোগ, ভর্তি করার তিন দিন পর (১৬ সেপ্টেম্বর) ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হয়।

Balurghat news: নেশামুক্তি কেন্দ্রে অত্যাচারের কারণেই মৃত্যু? কোন রহস্য লুকিয়ে বালুরঘাটে?
তদন্তে নেমেছে পুলিশ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 19, 2022 | 10:04 PM

বালুরঘাট: নেশামুক্তি কেন্দ্রে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ। মৃত ব্যক্তির নাম ধনিরাম রায়। বয়স ৩৮ বছর। মৃতের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের ফকিরগঞ্জ এলাকায়। শুক্রবার বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছিল। কে বা কারা ওই ব্যক্তির দেহ সেখানে ফেলে রেখে গিয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তপৃক্ষ ও পুলিশের সন্দেহ ছিল, ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল। সেই মতো ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সেই সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, বালুরঘাটের পরানপুর এলাকায় এক নেশা মুক্তি কেন্দ্রে ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রবিবার ভোরেই দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের ইতিমধ্যেই ১০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ধৃতদের নাম রণদীপ ঘোষ ও বাবুল মিয়া। উভয়েরই বয়স ২৫ বছর। সোমবার সকালে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও রঘু চাকি নামে বছর ২৪-এর এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেও আজ আদালতে পেশ করা হয়। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সেই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।

কুমারগঞ্জ ব্লকের ফকিরগঞ্জের বাসিন্দা ধনিরাম রায়। পেশায় কাঠ মিস্ত্রী। বাড়িতে স্ত্রী রয়েছে। প্রায় ১৮ বছরের বিবাহিত জীবন। কিন্তু দম্পতির কোনও সন্তান ছিল না। এদিকে বিগত বেশ কয়েক মাস থেকেই মদ্যপান বেড়ে গিয়েছিল কাঠমিস্ত্রী ধনিরামের। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে মাঝেমধ্যেই অশান্তি লেগে থাকত বাড়িতে। শেষে পরিবারের লোকেরা এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। নেশা ছাড়াতে পরিবারের তরফ থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বালুরঘাট ব্লকের পরানপুর এলাকায় এক নেশা মুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। অভিযোগ, ভর্তি করার তিন দিন পর (১৬ সেপ্টেম্বর) ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হয়। নেশা মুক্তি কেন্দ্রের যারা কর্মী, তাঁদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ, প্রথমে ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের সামনে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের নজর এড়াতে তড়িঘড়ি নেশা মুক্তি কেন্দ্রের কর্মীরা ওই ব্যক্তিকে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের নেশামুক্তি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর সহ বিভিন্ন জায়গাতেই বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গাতেই এমন নেশামুক্তি কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলির মধ্যে কোনটির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, কোনটির নেই… তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উত্তর শুরু করেছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই তথ্য জোগাড় করতে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। সূত্র মারফত এমনই জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বালুরঘাটের পরানপুরের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রটিকে সিল করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ওই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই বিষয়ে মৃতের আত্মীয় রবীন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন, তাঁর জামাইবাবু কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। বেশ কিছু দিন ধরেই মদ্যপান করছিলেন। তার জন্য গত ১৩ সেপ্টেম্বর পরানপুর নেশামুক্তি কেন্দ্রে তারা রেখেছিলেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহ কেউ ফেলে রেখে গিয়েছে। এমনকী তাঁর শরীরে দাগ রয়েছে। এরপরই বালুরঘাটে এসে জানতে পারেন মৃত ব্যক্তি তাঁর জামাইবাবু ৷ অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র যেখানে, সেই এলাকারই বাসিন্দা সুরজিৎ উরাও। তিনি জানিয়েছেন, চার পাঁচ মাস আগে এই নেশামুক্তি কেন্দ্রটি চালু হয়েছিল। সব মিলিয়ে ১০-১৫ জন পেশেন্ট ছিল এখানে। এই কেন্দ্র থেকে মাঝে মধ্যেই চিৎকারের আওয়াজ পেতেন। আর যখন চিৎকার হত তখন জোরে গান বাজানো হত।

অন্যদিকে এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, “এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ জেলায় যে সব নেশা মুক্তি কেন্দ্রগুলি রয়েছে, তার কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”