South Dinajpur: ভোটের ঠেলায় নতুন গরমিল! রাতারাতি ‘ভুতুড়ে রাস্তা’ কে করছে, জানেন না অনেকেই
South Dinajpur: রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হতেই গ্রামবাসীদের হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ৷ রাস্তা তৈরিতে বাধা দেওয়া হলেও ভয় দেখিয়ে জোর করে রাস্তা তৈরি করা হয়।
তপন: কোথাও ১ কোটি, কোথাও ১২ লক্ষ, একই রাস্তার একাধিক খরচের খতিয়ানে ছড়াচ্ছিল বিভ্রান্তি। এদিকে বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুই দু’টি বোর্ড লাগানো রয়েছে রাস্তাশ্রী প্রকল্পের। আর সে কারণেই শুক্রবার রাস্তা তৈরির কাজ শুরুর আগে রাস্তা আটকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন ধূপগুড়ি (Dhupguri) ব্লকের মাগুড়মারি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত (Panchayat) এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে এবার কার্যত একই ছবি দেখতে পাওয়া গেল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের গুড়াইল গ্রাম পঞ্চায়েতের নবাব নগর চাইপাড়া এলাকায়। রাস্তা বেশ খানিকটা তৈরি হলেও কোন প্রকল্পে কারা রাস্তা তৈরি করল, কত খরচ হল, কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল সবই অজানা আম-আদমির। লাগানো হয়নি কোনও বোর্ড। আর তাতেই বাড়ছে বিভ্রান্তি। শুধুমাত্র গ্রামবাসীরা নয় স্থানীয় তৃণমূল (Trinamool Congress) পরিচালিত পঞ্চায়েত সদস্যদেরও জানা নেই পুরো বিষয়টি। রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হতেই গ্রামবাসীদের হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। রাস্তা তৈরিতে বাধা দেওয়া হলেও ভয় দেখিয়ে জোর করে রাস্তা তৈরি করা হয় বলে দাবি গ্রামবাসীদের। আর এই ছবি দেখেই কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat election) মুখে ঝড়ের গতিতে রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে গলদ থেকে যাচ্ছে কী গোড়াতেই?
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের গুরাইল গ্রাম পঞ্চায়েতের নবাব নগর চাইপাড়া এলাকায় ৭৫ মিটার ঢালাই রাস্তা তৈরি হয়েছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৭৫ মিটার রাস্তা হয়। তপন ব্লকের গুড়াইল গ্রাম পঞ্চায়েত পথশ্রী প্রকল্পে একাধিক রাস্তা হয়েছে। তার মধ্যে নবাব নগর থেকে কুপদহ হয়ে চাইপাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তাও অন্তর্ভূক্ত ছিল। পুরো রাস্তা হয়নি। অভিযোগ, মাঝখানের মাত্র ৭৫ মিটার ঢালাই করে দিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন নির্মাণকারী সংস্থা। গ্রামবাসীদের বক্তব্য কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রকল্পের হিসাব না দিয়েই নির্মাণকারী সংস্থা মাঝখানে ৭৫ মিটার ঢালাই করে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। এই ঢালাই রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সাধারণত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে কোন রাস্তা শেষ বা শুরু থেকে করা হয়। তবে এক্ষেত্রে পুরো উল্টো। মাঝখানে থেকে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
কে করছে রাস্তা? জানা নেই কারও
গ্রামবাসীরা আচমকা দেখেন হঠাৎ করে গতকাল থেকে গ্রামের রাস্তাটি তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তার কাজ কে করছে জানতে চান গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তাও জানতে চান। কিন্তু কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। এদিকে ঢালাই রাস্তাতেও নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এর প্রতিবাদ জানান গ্রামবাসীরা। এমনকি কাজ বন্ধ করতেও বলা হয়৷ কিন্তু গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে রাস্তার কাজ করা হয় বলেই অভিযোগ। আবার ওই রাস্তাটি পাকা হওয়ার কথা রয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা দেবুল রায়, সঞ্জয় রায় ও বিরেন রায়রা বলছেন, রাস্তাটি হঠাৎ করেই তৈরি করা হয়েছে। মাঝখান থেকে করা হয়েছে ঢালাইয়ের কাজ। কে রাস্তাটি করল তা অজানা। কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তাও অজানা। জানতে চাইলে কোনও উত্তর মেলেনি। এমনকি ঢালাই রাস্তা তৈরি করতে গেলে নীচে যে ইট ও বালি দিতে হয় সেসব না দিয়েছে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী।
শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর
এই ছবি সামনে আসতেই দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, “শুধুমাত্র গুড়াইল নয়, তপন ব্লকজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার কাজে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। আমরা বলতাম বামফ্রন্ট আমলে মাছ চুরি হতো। তবে বর্তমান তৃণমূলের আমলে পুকুর চুরি হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত উন্নয়নের পুরো টাকা খেয়ে ফেলছে। এ বিষয়ে জেলাশাসকের উচিত পুরো ঘটনা তদন্ত করে কারা কারা এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া।”
এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি সুভাষ চাকি জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু তৃণমূল সমর্থক দলের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন। রাস্তাটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে এ বিষটি তার কানে এসেছে। কোন রাস্তায় এমনভাবে যেন তৈরি না হয়, তার জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে এবং শিডিউল মেনে কাজটি করার কথা বলা হয়েছে। যেই জায়গায় রাস্তাটি করা হচ্ছে সে জায়গাটি খারাপ থাকায় সেখানে আগে কাজ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তাপস রায় বলেন, গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেই রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে। তবে ওই রাস্তার জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা তার জানা নেই। এই বিষয়টি ঠিকাদার বা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভালো বলতে পারবে। অন্যদিকে এই বিষয়ে জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা জানান, এ নিয়ে কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।