৫হাজার টাকা দিলেই মিলছে মার্কশিট! জাল শংসাপত্রের ‘আঁতুড়ঘর’ শিলিগুড়ি

Fake Certificate: শিলিগুড়ি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, এক ছাত্রী কলেজের তৃতীয় সেমেস্টারে ভর্তি হতে মার্কশিট-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে আসে। সেইসব নথিপত্র দেখেই সন্দেহ হয় কলেজ অধ্যক্ষের

৫হাজার টাকা দিলেই মিলছে মার্কশিট! জাল শংসাপত্রের 'আঁতুড়ঘর' শিলিগুড়ি
অভিযুক্ত ছাত্রী, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 04, 2021 | 2:35 PM

শিলিগুড়ি: কলেজে ভর্তি হতে এসেছিলেন এক ছাত্রী। সঙ্গে ছিল মার্কশিট, শংসাপত্র। তারপরেই হাতেনাতে ধরা পড়ল জাল মার্কশিট, শংসাপত্র তৈরির বিরাট চক্র। উত্তরবঙ্গ-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের লোগো নকল করে ভুয়ো সার্টিফিকেট, মার্কশিট তৈরির চক্রের মূল পাণ্ডাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শিলিগুড়ি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, এক ছাত্রী কলেজের তৃতীয় সেমেস্টারে ভর্তি হতে মার্কশিট-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে আসে। সেইসব নথিপত্র দেখেই সন্দেহ হয় কলেজ অধ্যক্ষের। অভিযোগ, ওই সার্টিফিকেটে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্য়ালয়ের নাম থাকলেও সেখানে যে উত্তীর্ণ হওয়ার যে তারিখ দেওয়া ছিল তা গত বছরের। তা দেখেই প্রথম সন্দেহের উদ্রেক। অধক্ষ্য আরও জানান, কলেজে তৃতীয় সেমেস্টারের ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনেই হয়েছে। সেখানে ওই ছাত্রী অফলাইনে কেন ভর্তি হতে আসছে তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অধ্যক্ষ। পরে শংসাপত্রগুলি হাতে পাওয়ার পর সন্দেহ আরও পোক্ত হয়। তখনই ওই ছাত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসল ঘটনা সামনে আসে। অভিযোগ, ওই ছাত্রী ৫হাজার টাকার বিনিময়ে ওই নকল সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে।

এরপরেই পুলিশ এসে ওই ছাত্রীকে আটক করে। তাকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন অরূপ সরকার নামে এক ব্যক্তির থেকে ওই জাল নথি সংগ্রহ করেছিলেন ওই পড়ুয়া। অভিযুক্ত অরূপ সরকার নামের ওই ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে ধৃত অরূপ দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির বাসিন্দা। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি শিলিগুড়িতে বসবাস করছিলেন। কলেজে ভর্তি হতে না পেরে ওই পড়ুয়াও ‘বিকল্প পথের’  সন্ধানে ছিল। সেখান থেকেই কোনওভাবে অরূপের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ৫হজার টাকার বিনিময়ে অরূপ তাকে ভর্চি হওয়ার জন্য় প্রয়োজনীয় সমস্ত শংসাপত্র ও নথি তৈরি করে দেবে বলে জানান। তারপর সেই জাল শংসাপত্র নিয়েই কলেজে যায় ওই ছাত্রী। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, শুধু ওই ছাত্রী নয়, ধৃত অরূপের ফাঁদে পড়েছে শিলিগুড়ির অনেকেই। সেখানেই ওই কারবারি জাল চক্র চালাত বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে, অরূপের সঙ্গে আর কেউ যুক্ত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ সুজিত ঘোষ বলেন, “আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনে ছিল। সেখানে ওই ছাত্রী অফলাইনে ভর্তি হতে আসায় আমাদের একটু সন্দেহ হয়। তবে, ধরে নিই, হয়ত কোনওভাবে অনলাইনে ভর্তি হতে পারেনি ওই পড়ুয়া। এরপর মেয়েটি তার সমস্ত সার্টিফিকেট আমাদের জমা দেয়। সার্টিফিকেট দেখেই বুঝতে পারি ওগুলো তৈরি করা। ভুল তারিখ ও ভুলভাবে কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সত্যি বেরিয়ে পড়ে।”

তবে জাল মার্কশিট কারবারিদের চক্র এই প্রথম নয়, এর আগে মালদাতেও এমনই একটি বিরাট চক্রের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে  শংসাপত্র ও মার্কশিট জাল করার অভিযোগ উঠেছিল গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাল শংসাপত্র তৈরির কাজে জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরেই অধ্যাপক ও অশিক্ষক কর্মীদের একাংশ অভিযোগ এমনটাই। TV9 -এর খবরের জেরে সামনে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সক্রিয় জাল চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের নোডাল অফিসার রাজীব পুততুণ্ড বলেন, “কিছু মার্কশিট উদ্ধার হয়েছে। দেখলাম, সেই  মার্কশিটে যে স্নাতকোত্তর পড়ুয়ার নামে করা হয়েছে সেখানে সই রয়েছে সুনন্দ দাসের। কিন্তু, ২০১৯-এ সুনন্দ দাস ছিলেন না ওই পদে। তখনই বুঝতে পারি মার্কশিটটি জাল। এরকম একাধিক জাল শংসাপত্র বেরিয়েছে।” অনতিপরেই, বিশ্ববিদ্য়ালয়ে তদন্তের জেরে ধরা পড়ে সেই জাল কারবারির দল। আরও পড়ুন: ‘সোনার চাঁদ’ শ্যামের ৪ কোটি টাকার বিস্কুট-বাঁট রামের লকারে, চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের!