Freedom Fighter: ‘এখনকার রাজনীতি সেবার নয়, লুটেপুটে খাওয়ার!’ আক্ষেপ নেতাজি-ভক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীর

রাজনীতির এই ‘অবনমন’ যে তাঁকে পীড়া দেয়, তা তাঁর কথাতেই ধরা পড়েছে। স্বাধীনতার উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

Freedom Fighter: ‘এখনকার রাজনীতি সেবার নয়, লুটেপুটে খাওয়ার!’ আক্ষেপ নেতাজি-ভক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীর
স্ত্রীকে পাশে নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী রাধাকৃষ্ণ কর্মকার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 14, 2022 | 7:49 PM

গোঘাট: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দেশপ্রেমে আকৃষ্ট হয়ে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। কিশোর বয়সেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সঙ্গে। তাঁর কাছে রাজনীতির অর্থ মানুষের সেবা। সেই রাধাকৃষ্ণ কর্মকার হুগলির আরামবাগের গোঘাটের বাসিন্দা। বর্তমান তাঁর বয়স ৯৬ বছর। চোখে ভাল দেখেন না। কানেও শোনেন কম। থাকেন ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, স্বাধীনতা সংগ্রামী রাধাকৃষ্ণের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল টিভি৯ বাংলা। বয়সের ভারে জীর্ণ রাধাকৃষ্ণ বললেন সেদিন ও আজকের রাজনীতির তফাৎ। দুর্নীতির পাঁকে নিমজ্জিত রাজনীতির খোঁজ তিনি এখন আর তেমন রাখেন না বলেও জানিয়েছেন টিভি৯ বাংলাকে।

প্রাক স্বাধীনতা সময়ে রাজনীতি এবং বর্তমান সময়ের রাজনীতির নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এই প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামীকে। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “সে কালের রাজনীতি ছিল মানুষের সেবা করা। আজকের রাজনীতি মানুষের সেবা করা নয়। দু’টো পয়সা করা। লুটেপুটে খাওয়া।” এই ধরনের রাজনীতিতে নেতারা জেলা যাওয়াতেও অবাক নন তিনি। রাজনীতির এই ‘অবনমন’ যে তাঁকে পীড়া দেয়, তা তাঁর কথাতেই ধরা পড়েছে। স্বাধীনতার উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে বলেছেন, “ভারত স্বাধীন হল। স্বাধীন হওয়ার পর প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেকে স্বাধীন হবে। তা আর কোথায় হল।” দেশের কাজ, মানুষের কাজের জন্য তিনি কিশোর বয়সে রাজনীতিতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতি পয়সার লড়াই বলে মনে করেন তিনি। এ নিয়ে বলেছেন, “বর্তমানের রাজনীতিতে পয়সার লড়াই। যাঁদের পয়সা আছে, তাঁদের এতে আসা ভাল।” এই ঘটনায় তাঁর দুঃখ হলেও কিছু এসে যাবে না বলে মনে করেন তিনি। বলেছেন, “আমার দুঃখ হলেই বা কী হবে, না হলেই বা কী হবে!” আগে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে অনেকে যোগাযোগ করতেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে আক্ষেপ এই বর্ষীয়ান স্বাধীনতা সংগ্রামীর।

ব্রিটিশ শাসনে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে হুগলির আরামবাগের গোঘাটে জন্ম রাধাকৃষ্ণ কর্মকারের। ছোটবেলায় স্কুলে পড়াশোনার সময়ই মা মারা যান। মানুষ হন মা ও দিদির কাছে। ছোটবেলা থেকেই ছিল দেশপ্রেম। নেতাজির অন্ধ ভক্ত ছিলেন। গোঘাটের বাঙ্গাই এলাকায় নেতাজিকে দেখেছেন কাছ থেকে। মেদিনীপুরেও গিয়েছেন নেতাজির ভাষণ শুনতে। কংগ্রেস ভেঙে ফরওয়ার্ড ব্লক তৈরি করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। কিশোর বয়সেই দেশপ্রেমে ও কৃষক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগদান করেন। মানুষের সেবায় আজীবন নিয়োজিত থেকেছেন। রাজনীতি করেছেন নিজের জমি, পুকুর ডোবা বিক্রি করে। বর্তমানে রাধাকৃষ্ণর বাবুর বয়স ৯৬ বছর। চোখে দেখতে পান না ভালো ভাবে, কথাবার্তা শুনতে পান। কিন্তু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন না। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মন্ত্রী, নেতাকর্মীরা খোঁজ রাখতেন কিন্তু এখন খোঁজ আর রাখেন না। বর্তমানে ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে বাস করেন। ভাঙা শরীরে এখন আর পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন না। সারাদিন নেতাজির ছবির নীচে তক্তার উপরে বসে থাকেন।