HS Student: নিজের সমস্যা নিয়ে গবেষণাই লক্ষ্য, হুইল চেয়ারেই গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জিতের স্বপ্ন
HS Student: শরীরের অক্ষমতাকে মেনে নিয়েছে জিৎ। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। সেখান থেকেই শুরুটা করতে চায় জিৎ। আর সেটাই তার লক্ষ্য। গবেষণা করতে চায় নিজের শারীরিক অক্ষমতা নিয়েই। একটা বছর সতেরোর ছেলের এই মনের জোরই তো আসল, বলছেন তাঁর শিক্ষকরা।
হুগলি: বয়স তখন তিন। বাবার সঙ্গে বাইকে ঘুরতে বেরিয়েছিল ছোট্ট জিৎ। মা বাড়িতেই ছিলেন। সেই দিনটাই জীবনের কাল হয়েছিল। পথে দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে যান বাবা। জিৎ-কে অবশ্য রক্ষা করা গিয়েছিল। কিন্তু স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগে মারাত্মক। চিকিৎসকরা তখনই জবাব দিয়েছিলেন। যখন থেকে ছোট্ট দুটো পায়ে হাঁটা শুরু করেছিল জিৎ, তখনই নিয়তি তার থেকে সেই ক্ষমতা কেড়ে নেয়। চলনশক্তি আজীবনের মতো হারায় জিৎ। কথায় বলে না, ভগবান যখন কিছু কেড়ে নেয়, তখন দেয়ও আরও অনেক বেশি! জিতের হাঁটার ক্ষমতা চলে যায়, কিন্তু উপচে পড়ে তার মনের জোর। ছোট্ট জিৎ বড় হয়। হুইলচেয়ারের চাকা গড়িয়ে আরও চওড়া হয় তার মানসিক জোর। একা মায়ের লড়াই বড় করে জিৎকে। সে আজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। ভরসা সেই উইল চেয়ার আর অদম্য শক্তি।
এবারে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে গোঘাটের সাতবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র জিৎ মণ্ডল। কিন্তু তার পরীক্ষা আর পাঁচটা পরীক্ষার্থীর থেকে অনেকটাই আলাদা। আর সেই কারণে জিৎ আজ আলোচনায়।
জিৎ বলে, “ডাক্তারকাকু বলে দিয়েছেন, আমি আর ঠিক হবে না। পড়াশোনাটা ঠিকভাবে চালিয়ে যেতে চাই। আমার লক্ষ্য বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। নিজের শরীর, নিজের সমস্যাটা নিয়েই আসলে পড়াশোনা করতে চাই। ডাক্তাররা জবাব দিয়েছেন। কিন্তু আমি গবেষণা করে দেখতে চাই, আমার সমস্যা আদৌ ঠিক হওয়ার কিনা।”
শরীরের অক্ষমতাকে মেনে নিয়েছে জিৎ। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। সেখান থেকেই শুরুটা করতে চায় জিৎ। আর সেটাই তার লক্ষ্য। গবেষণা করতে চায় নিজের শারীরিক অক্ষমতা নিয়েই। একটা বছর সতেরোর ছেলের এই মনের জোরই তো আসল, বলছেন তাঁর শিক্ষকরা।
আপাতত পরিবারের রোজগার বলতে চাষবাস। বড় হয়ে মায়ের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য জিতের। তা দু’পায়ে নয়, মননের ওপর জোর দিয়েই। হুইলচেয়ারে পরীক্ষাকেন্দ্রে মায়ের সঙ্গে আসে জিৎ। সঙ্গে থাকেন এক মামাও। ছেলেকে দেখে শক্তি পান তার মাও।
জিতের মা বলেন, “অসুবিধা তো আছেই। জিতের পরীক্ষার জন্য একটু সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ও ওর লক্ষ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আপাতত বাবার বাড়ি থেকে সাহায্য পাই।” বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্নদের কোটায় ১০০০ টাকা করে পায় জিৎ। সে টাকা পড়াশোনাতেই কাজে লাগে। সংসারে সমস্যা রয়েছে, দুঃসময় দেখেছেন জিতের মা। স্বামীকে হারিয়েছেন, সন্তানকে অসুস্থ হতে দেখেছেন, এখন তিনি কেবল দেখতে চান সন্তানের সাফল্য। হুইলচেয়ারে ভরসা করেই সেই সাফল্য আসুক জিতের জীবনে।