‘মোদীর যত দাড়ি বাড়ছে তত করাপশনও’, রাফাল ‘কাঁটায়’ কটাক্ষ কল্যাণের

Kalyan Banerjee: ফ্রান্সের আর্থিক অপরাধ দমন বিভাগ পার্কি ন্যাশিউনা ফিনাঁঁসা বা পিএনএফ জানিয়েছে,  নরেন্দ্রমোদীর সফরের সময় রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তি ঘিরে নতুন করে ওঠা দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বিচারবিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে ম্যাক্রঁ সরকার। 

'মোদীর যত দাড়ি বাড়ছে তত করাপশনও', রাফাল 'কাঁটায়' কটাক্ষ কল্যাণের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 05, 2021 | 7:59 PM

হুগলি: কেন্দ্রের সাত বছরের বিজেপি শাসনে সবচেয়ে বিতর্কিত দুর্নীতির নাম বোধহয় রাফাল চুক্তি। সেই রাফাল নিয়েই ফের নতুন করে অস্বস্তিতে মোদী সরকার। রবিবার, সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে কটাক্ষের সুর ঘনালো শ্রীরামপুর সাংসদের কণ্ঠে। রাফাল-বিতর্কে এ বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবিবার, কল্যাণ বলেন, “রাফাল কেন আরও কতশত দুর্নীতির খবর আসবে এ বার এক এক করে খালি দেখতে থাকুন। মোদীর দাড়ি যত বাড়ছে তত করাপশনও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যত রকম অপরাধ করাপশন আছে বিজেপি তার মাস্টারমাইন্ড। দুর্নীতিগ্রস্ত একটা সরকার। আমরা চাই ফ্রান্স সরকার এর তদন্ত করুক। তাহলেই তো সামনে আসবে আসল গল্প। যারা এর সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ করা হোক। ২০২৪ সালের পর আর মোদী সরকার থাকবে না। ওদের কেনা গোলাম সিবিআইও আর বাঁচাতে পারবে না।”

প্রসঙ্গত, ফ্রান্সের আর্থিক অপরাধ দমন বিভাগ পার্কি ন্যাশিউনা ফিনাঁঁসা বা পিএনএফ জানিয়েছে,  নরেন্দ্রমোদীর সফরের সময় রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তি ঘিরে নতুন করে ওঠা দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বিচারবিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে ম্যাক্রঁ সরকার।  নিয়োগ করা হয়েছে বিচারকও। ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত আন্তঃসরকারি চুক্তিটি গত জুন মাসে তদন্তের স্বার্থে খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের তদন্তমূলক সংবাদমাধ্যম ‘মিডিয়া পার্ট’। ইতিমধ্যেই যৌথ সংসদীয় কমিটির মাধ্য়মে রাফাল তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। ‘হ্যাশট্য়াগ রাফালস্ক্যাম’ দিয়ে টুইট করে নরেন্দ্র মোদীকেই নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

রাফাল নিয়ে বরাবরই চাপা অস্বস্তিতে মোদী সরকার। ২০১৫ সালে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা থেকেই শুরু এই বিতর্কেক ঝড়। সেসময় মোদীর ফ্রান্স সফরের আগেআগেই ফ্রান্সের রাফাল নির্মাতা সংস্থা দাসো-র সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল অনিল অম্বানীর সংস্থার। তারপরেই ৫৯ হাজার কোটি টাকায় ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষর হয় সেই সফরে। সেই চুক্তিস্বাক্ষরের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেি সরব হয়েছিল কংগ্রেস। কারণ, কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, মনমোহন সিং-এর শাসনে যখন যুদ্ধবিমানগুলি কেনা হয়েছিল তখন তার দাম যা ছিল তার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি দামে কম সংখ্যক যুদ্ধবিমান কেনে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের তরফে আরও দাবি করা হয়, মনমোহনের আমলে চুক্তি মোতাবেক রাফালের প্রযুক্তির হস্তান্তর পেত ভারত। কিন্তু, মোদী জমানায় হওয়া চুক্তিতে এমন কোনও উল্লেখ নেই বলেই দাবি করে কংগ্রেস।

এখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। মোদী সরকারের বিরুদ্দে আর্থিক তছরূপের অভিযোগ তুলতে শুরু করে কংগ্রেস। মামলা হয় একাধিক। এমনকী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সরাসরি নিশানা করে বলেন, “চৌকিদার চোর হ্যায়”। জল গড়ায় সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত। মোদী সরকারের তরফে সেই সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। ২০১৯ সালে সুপ্রিমকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ মামলাটিতে দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দেন। ২০১৮-তে রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবি খারিজ করে দিয়েছিল পিএনএফ। ‘সঠিক তথ্যপ্রমাণ না থাকাই’ মূল ‘কারণ’ বলে দাবি করেছিল পিএনএফ।

চলতি বছরে ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম মিডিয়াপার্টের একাধিক রিপোর্টে রাফাল দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ নথি ও তথ্য়প্রমাণ-সহ উঠে আসে। তাদের প্রতিবেদনে রাফাল নির্মাতা সংস্থা দাসো অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে চুক্তির মধ্যস্থতাকারীকে ৭.৮ লক্ষ ইউরো অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬ কোটি টাকা ‘উপহার’ দেওয়ার অভিযোগ তোলে ‘মিডিয়াপার্ট’। এরপরেই পিএনএফের কাছে রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবী জানানো হয়। এর ভিত্তিতেই এতদিনে ফের রাফাল নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফরাসি সরকার।

এখন, এই রাফাল তদন্তের জেরে মোদী ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতৃত্বের নাম জড়াতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে বিজেপি। যার আঁচ  লাগতে পারে খোদ নরেন্দ্র মোদীর গায়েও। ভারতে, আসন্ন নির্বাচনগুলিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা কেন্দ্রীয় বিজেপির। বঙ্গভোটে ভরাডুবির পর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে এখন থেকেই ঘর গোছাচ্ছে পদ্ম শিবির। সেখানে নতুন ধরনের বিতর্ক রাজনৈতিকভাবে বড় ক্ষতি করতে পারে বলেই আশঙ্কা দলীয় নেতৃত্বের।

আরও পড়ুন: ‘তৃণমূল ধ্বংস করে তবেই ব্যবসায় মন দেবেন, কঠিন প্রতিজ্ঞা’, পোস্টার-বিতর্কে উত্তপ্ত ভাতার