Hooghly : ‘মা-বাবা নেই’, পুলিশকে বলল ছোট্ট সায়ন, ছেলের কথা শুনে হতবাক শোভারানি দেবী
Hooghly : ‘বাড়িতে কেউ নেই, মা-বাবা মারা গিয়েছে’, পুলিশকাকুকে উত্তর ছোট্ট সায়নের, এদিকে ছেলের নিখোঁজের খবরে ছুটে এলেন মা।
চুঁচুড়া : তখন সবে স্কুলে বেজেছে টিফিনের ঘণ্টা। শিশুদের কোলাহলে গমগম করছে স্কুল চত্বর। অন্য বন্ধুরা খেলা করলেও দেখা নেই কাঁকিনাড়ার সায়ন প্রামানিকের! শুরু হয় খোঁজ। কিন্তু, আশেপাশে কোথাও দেখা মেলেনি ক্লাস সিক্সের (Class Six) এই পড়ুয়ার। অন্যদিকে চুঁচুড়া স্টেশনে (Chinsurah Station) সেই সময় আপনভোলা এক শিশুকে নিয়ে নাজেহাল অবস্থা পুলিশের। সূত্রের খবর, চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে স্কুলের পোশাক পড়া এক ছাত্রকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তার বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করেন পুলিশ কর্মীরা। কে কে আছে বাড়িতে? উত্তরে পুলিশকাকুদের খুদে জানায় কেউ নাকি নেই তার বাড়িতে। মা-বাবা মারা গিয়েছে। সে এখন একাই থাকে বাড়িতে। যদিও তার কথা শুনে সন্দেহ হয় পুলিশের। আরও একটু জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সে জানায় তার আত্মীয় পরিজন বলতে নবদ্বীপে এক দিদি রয়েছে। সেই দিদির নম্বরও দেয় পুলিশকে।
কালবিলম্ব না করে দ্রুত সেই দিদিকে ফোন করে পুবিশ। জানায় সায়নের কথা। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় গোটা ঘটনা। পুলিশ জানতে পারে প্রায়শই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে সায়নের। মাসে এক দুবার এরকম ঘটনা ঘটায় সে। ধরা পড়লেই একই উত্তর দেয় সকলকে। ইতিমধ্যেই খবর যায় সায়নের মায়ের কাছে। ততক্ষণে ওই শিশুকে উত্তরপাড়ায় শিশুদের একটি হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। শিশুটির মা শোভারামী দেবীর দাবি, কেন তাঁর ছেলে এরকম আচরণ করে তাঁদের জানা নেই। বাড়িতে কোনও অভাবও নেই। কিন্তু, প্রয়াশই স্কুল থেকে পালিয়ে যায় সায়ন। জিজ্ঞেস করলেই বলে বাড়িতে থাকতে মন চায় না। চোখে চোখে রেখেও কোনও লাভ হয় না। আপাতত বাড়ির লোকেরা ঠিক করেছেন কিছুদিন ওই ছোট্ট শিশুকে হোমেই রাখা হবে।
ছেলের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শোভারাণী প্রামাণিক বলেন, “এর আগেও দুদিন স্কুল থেকে পালিয়ে ছিল। মাঝে যে লকডাউন হল, তারপর থেকে ও এমন করছে। ও যদি জিজ্ঞেস করি তুই কী চাস! বলে কিছুই চাই না। এদিকে আমাদের ঘরে খাওয়া-দাওয়ার কোনও সমস্যা নেই। মাছ-মাংস সবই হয়। খাবার কোও কষ্ট নেই। তারপরেও ও এরকম করে। আমি যখন কাজে যাই ওকে তালা বন্ধ করে যাই। স্কুলেও ওকে রোজ আমি ছেড়ে দিয়ে আসি। টিফিন টাইমেও আমাকে ওর জন্য স্কুলে গিয়ে থাকতে হয়। না হলেই পালিয়ে যায়। আজ তো চুঁচুড়া থানা থেকে খবর পাই। তখনই জানতে পারি ও পালিয়ে গিয়েছে। আমার ভাইঝির নম্বর দিয়েছিল। পুলিশ ওকেই ফোন করে জানায়। আজ শনিবার ছিল। টিফিনে আমার ওকে আনতে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ও এরকম করেছে। পুলিশ জানিয়েছে চুঁচুড়া স্টেশনের কাছ থেকে পেয়েছে। তারপর ওকে চাইল্ড হোমে পাঠিয়েছে। এদিকে যতবারই ও ধরা পড়ে তখনই বলে মা-বাবা মরে গিয়েছে। কেন যে এরকম করে জানি না। এ বছর সিক্সে উঠেছে। প্রতি মাসেই এক দুবার পালিয়ে যায়। বাড়ির লোক বলছে এখন কদিন ওকে হোমে রেখে দিতে এবার দেখা যাক।”