‘খারাপ ভাববেন না,’ মঞ্চে বক্তৃতার মাঝেই খৈনি চেয়ে খেলেন বিধায়ক, মুহূর্তে ভাইরাল ভিডিয়ো

Manaranjan Bapari: "ডানদিক থেকে বাঁদিকে ঢুকে গেল। ভদ্রলোকের পানের দোকান ছিল। তাকে, তার ছেলেকে আরও তিন-চারজনকে চাপা দিল বাস। আমি বেঁচে গেলাম খৈনি হাতে ছিল বলে। তাই খৈনিকে কেউ ছোট করে দেখবেন না।''

'খারাপ ভাববেন না,' মঞ্চে বক্তৃতার মাঝেই খৈনি চেয়ে খেলেন বিধায়ক, মুহূর্তে ভাইরাল ভিডিয়ো
ভাইরাল ভিডিয়োর স্ক্রিনশট
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 11, 2021 | 12:15 AM

হুগলি: ‘বল্লভভাই প্যাটেল তো কংগ্রেসের নেতা, তাঁর মূর্তি কেন মোদী বানাচ্ছেন…’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বক্তব্য রাখছিলেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তারই মাঝে পাশে বসে থাকা দলীয় কর্মীর হাত থেকে খৈনি নিয়ে খেলেন বিধায়ক। সঙ্গে সঙ্গে সভায় উঠল হাসির রোল। মুহূর্তে ভাইরাল হল ভিডিয়ো।

এবার বিধানসভা ভোটে যতজন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার, তাঁদের আপন করে নিতে ক্ষমতার জন্য পরিচিত মনোরঞ্জন ব্যাপারী। বলাগড়ের এই তৃণমূল বিধায়ক গলায় গামছা নিয়ে সাদামাটা পোষাকে ঘুরে বেড়ান। তিনি রিকশা চালিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যান। আবার টোটো চালিয়ে মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছে সমস্যার কথা শোনেন। মানুষের অভাব যন্ত্রণার কথা জেনে ফেসবুকে লেখেন, রাজনীতিতে না এলেই ভাল হত। এহেন নেতার সভার মাঝে খৈনি খাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

শনিবার বলাগড়ে পেট্রোপন্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচী করেন মনোরঞ্জনবাবু। মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় তাঁর একহাতে ছিল মাইক্রোফোন। অন্য হাতে চায়ের কাপ। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বক্তব্য রাখছিলেন। তুলে আনছেন কেন বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি গড়েছে মোদী সরকার। তার পর চা শেষ করেই এক দলীয় কর্মীর দিকে বিধায়ক হাত বাড়িয়ে দেন খৈনির জন্য। কর্মী তাঁর হাতে খৈনি দিতেই মুখে পুরে দেন। হাসির রোল ওঠে সভায়। তাই দেখে বিধায়ক অবশ্য বলেন ‘খারাপ ভাববেন না।’

এরপর খৈনি কী করে তাঁর জীবন বাঁচিয়েছে তা বর্ণনা শুরু করেন দলিত সাহিত্যিক তথা অধুনা বিধায়ক। তিনি বলতে থাকেন, ১৯৭১ সাল রাজা এসি মল্লিক রোডের বাঁদিকে একজন জুতো সেলাই করে খৈনি খায়। তাঁরা তখন শোলে সিনেমা দেখে খৈনি খাওয়া শিখেছেন বটে। তবে কিনতে পারেন না পয়সার অভাবে। (শোলে সিনেমা রিলিজ করে ১৯৭৫ সালে)।

মনোরঞ্জনবাবু বলতে থাকেন, “ওর কাছ থেকে খৈনি চাই। ও বানায় আমাদের দেয়। আমরা তখন খেতাম রুটি আর আলুর দম। ভাত খাওয়ার পয়সা নেই। যদি জোটে সেটা রাতে। দোকানে দাঁড়িয়ে খৈনি মুলছিলাম। উল্টোদিকে রাজলক্ষ্মী মিষ্টির দোকান। ওপার থেকে একজন ডাকল মনা একটু খৈনি দিয়ে যা।

আমি রাস্তা পার করে ওপারে গেলাম, গড়িয়ার দিক থেকে একটা ডবলডেকার বাস আসছিল। ডানদিক থেকে বাঁদিকে ঢুকে গেল। ভদ্রলোকের পানের দোকান ছিল। তাকে, তার ছেলেকে আরও তিন-চারজনকে চাপা দিল বাস। আমি বেঁচে গেলাম খৈনি হাতে ছিল বলে। তাই খৈনিকে কেউ ছোট করে দেখবেন না।”

এরপরেই বিধায়ক হিটলার নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তাঁর এই বক্তব্যে হাসির রোল ওঠে। তবে একজন বিধায়কের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই ধরনের দলীয় কর্মসূচীর মাঝে খৈনি খাওয়া নিয়ে গুঞ্জনও শুরু হয়েছে তৃনমূলের অন্দরে। মুখে কেউ কিছু না বললেও বিধায়কের এই ধরনের ‘ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ’ ভালভাবে দেখছেন না নেতৃত্ব। একজন বিধায়ক, একজন জনপ্রতিনিধি যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কিছু বলেন তখন অনেকে তা শোনেন। তার কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ কাঙ্খিত নয় বলেই মনে করছেন দলের কর্মী সমর্থকদের একাংশও। আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গকে পৃথক করা বিজেপির গেমপ্ল্যান, বার্লার মন্ত্রিত্বেই প্রমাণিত: গৌতম দেব