Howrah: স্বাস্থ্যসাথীর রাজ্যে শয্যাশায়ী বাবাকে সুস্থ করতে রিকশা চালাচ্ছে ক্লাস সিক্সের ঝিলিক!

Girl Pulling Rickshaw: বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গ্রাম থেকে উলুবেড়িয়া শহরে ভ্যান রিকশা চালিয়ে সামান্য কিছু উপার্যন, তাই নিয়ে রাতে বাড়ি ফেরা। স্বাস্থ্যসাথীর রাজ্যে এমনই ছবি ধরা পড়ল হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়।

Howrah: স্বাস্থ্যসাথীর রাজ্যে শয্যাশায়ী বাবাকে সুস্থ করতে রিকশা চালাচ্ছে ক্লাস সিক্সের ঝিলিক!
মেয়েটা প্রাণপণে রিকশা চালাচ্ছে... নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 11, 2021 | 5:15 PM

হাওড়া: তার বয়সী আর পাঁচটা বাচ্চা খেলাধুলো করছে। কিন্তু ছোট্ট ঝিলিকের সে সবের জো নেই। অসুস্থ বাবার চিকিৎসায় পরিবারের একমাত্র ভরসা যে সে। সারাদিন বাবাকে রিকশায় চাপিয়ে ঘুরছে ঝিলিক। বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গ্রাম থেকে উলুবেড়িয়া শহরে ভ্যান রিকশা চালিয়ে সামান্য কিছু উপার্যন, তাই নিয়ে রাতে বাড়ি ফেরা। স্বাস্থ্যসাথীর রাজ্যে এমনই ছবি ধরা পড়ল হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়।

১১ বছর মাত্র বয়স তার। পড়াশোনাও করছে। এবারই ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছে ছোট্ট ঝিলিক। এদিকে বাবাকে সুস্থ করতে বহু জায়গায় ছুটেছে। প্রশাসনের তরফে জুটেছে আশ্বাস আর তারিখ। কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই কারও ভরসায় না থেকে বাবাকে সুস্থ করতে ভ্যান রিকশা কে সঙ্গী করেছে ছোট্ট ঝিলিক। শহর ঘুরে ঘুরে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করছে সে।

উলুবেড়িয়া থানার হিরাপুর দক্ষিণ রামচন্দ্রপুরের সুশান্ত মণ্ডল। ৫০ বছরের প্রৌঢ় গত কুড়ি বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। বছরের পর বছর গড়িয়েছে, পর পর একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। পেশায় শ্রমিক সুশান্ত ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জকারী। তাঁর শারীরিক অসুস্থতায় সংসারে নেমে আসে তীব্র অভাব অনটন। তার পর কোনওক্রমে চলছে সংসার। এদিকে পরিবারে স্ত্রী ও কন্যা ছাড়া আর কেউ নেই সুশান্তের। এখন পরিবারের একমাত্র ভরসা এই ছোট্ট ঝিলিক। তার দাদা বা ভাই কেউ নেই। পরিবারের এই বিপদে এখন সেই ভরসা।

তাই এক দিকে বাবার চিকিৎসার খরচ তোলা অন্যদিকে অভাব-অনটন সংসারটাকে চালাতে দুটো টাকা রোজগারের জন্য রিকশা নিয়ে বেরিয়েছে বছর এগারোর বালিকা। যে বয়স পড়াশোনা ও খেলাধুলোর, ঝিলিক তখন নেমেছে এক ভয়ঙ্কর লড়াইতে।

বাবার একটা ভ্যান রিকশা ছিল। সেটাই এখন তার অস্ত্র। প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে পড়ে শয্যাশায়ী বাবাকে নিয়ে। কোনওদিন সঙ্গে থাকেন মা। মেয়ে ভ্যান চালিয়ে নিয়ে যায়। ঘোরে গ্রামে-গ্রামে। রামচন্দ্রপুর থেকে দীর্ঘ রাস্তা ধরে উলুবেড়িয়া শহরে পৌঁছে যাওয়া একটু বেশি সাহায্যের আশায়। কখনও কোনও সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্য মেলে। কখনও সারাদিনের একটু খাবার জোটে না। খালি হাতে ফিরতে হয় বাড়ি। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পা হাতে যন্ত্রণা কাবু করে দেয় তাকে। তারই মাঝে বই নিয়ে একটু পড়তে বসে ঝিলিক। আবার ডাক পড়লেই মায়ের সঙ্গে সংসারের কাজে হাত লাগাতে হয়। বাবাকে সাহায্য করতে হয়। বাবা যে একা একা কিছুই করতে পারেন না।

ছোট্ট ঝিলিকের কথায়, “প্রতিদিন বাবাকে নিয়ে রিকশা চালিয়ে ঘুরি। ভাই বা দাদা কেউ তো নেই… আজ সারাদিন খাওয়া-দাওয়া হয়নি। প্রায় দিন এমনই হয়। তার পর রাতে একটু পড়তে বসি।” প্রশাসনিক সাহায্য পাননি? ঝিলিকের মা জানান অনেক ঘুরেছেন। পঞ্চায়েত থেকে সাহায্যের আশ্বাস এসেছে শুধু। কাজের কাজ কিছু হয়নি। অগত্যা মেয়েই তুলে নিয়েছে সংসারের ভার, বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব। বলতে বলতে চিকচিক করে ওঠে তাঁর চোখ।

আরও পড়ুন: Paschim Medinipur: সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, রাতের অন্ধকারে দাদাকে মারতে রিভলবার হাতে দুয়ারে ভাই!