সাংবাদিককে চড় মারার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে
এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বুধবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবের সদস্য ওই সাংবাদিক
জলপাইগুড়ি: সাংবাদিককে চড় মারার ঘটনায় এবার ময়নাগুড়ি থানায় দায়ের হল লিখিত অভিযোগ। মঙ্গলবার বিকেলে ময়নাগুড়ি ফুটবল ময়দানের একটি অনুষ্ঠানে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তৃণমূল বিধায়কের রোশানলে পড়েন সাংবাদিক। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যে ওই সাংবাদিককে চড় মারা হয় বলে অভিযোগ। এদিন রাতেই বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীর (Anantadeb Adhikari) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সাংবাদিক।
ময়নাগুড়ি জল্পেশ মন্দিরে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক অনুষ্ঠানের সভামঞ্চ থেকে জেলাপরিষদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী। এর আগেও ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধেও একাধিক ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ, এই সব খবর করায় এদিন সাংবাদিককে ডেকে এনে হুমকি দেন অনন্তদেব। এই নিয়ে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হওয়ার পর মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিককে ঠাঁটিয়ে চড় মারেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছেন বিধায়ক। তাঁর সাফাই, “অনেক দিন ধরেই আমার বিরুদ্ধে একের পর এক খবর করছিল। এভাবে কী মাথা ঠান্ডা রাখা যায় বলুন!”
সাংবাদিককে চড় মারার ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। বিধায়কের এই আচরণে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশও। প্রাক্তন সাংবাদিক তথা উত্তরপাড়া তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, “এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। গণতন্ত্রের পক্ষে খারাপ। এটা সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণ নেমে আসা। যদি কোনও ব্যাবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে দলের বিরুদ্ধে ভুল বার্তা যাবে। দৃষ্টান্তমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত।” তৃণমূল মুখপাত্র তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, “সাংবাদিককে যদি উনি চড় মেরে থাকেন তাহলে ঠিক করেননি। তবে তেমন কোনও প্ররোচনা ছিল কিনা সেটাও দেখা দরকার।”
সাংবাদিককেই চড় ময়নাগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীর। গোটা ঘটনায় সর্বত্র নিন্দার ঝড়। #TV9Bangla । #TV9BanglaDigital pic.twitter.com/VjxiJkoix7
— TV9 Bangla (@Tv9_Bangla) January 5, 2021
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কিষাণ কল্যাণী জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকে ঘটনাটা শুনেছি। ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। তৃণমূল সাংবাদিকদের সঙ্গে সবসময় ভাল ব্যবহার করে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের তরফ থেকে লিখিত দেওয়া হলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিন্দায় সরব বিজেপিও। এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রবীণ সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলেন, “সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। সাংবাদিককে আঘাত করা মানে গণতন্ত্রকে আঘাত করা। এই ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা করছি। মনে করি যিনি একাজ করেছেন সকল স্তরের সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।”
আরও পড়ুন- ‘অ্যান্টি খবর করা যাবে না’, সাংবাদিককে ডেকে ‘চড় মারলেন’ তৃণমূল বিধায়ক
এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বুধবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবের সদস্য ওই সাংবাদিক। এই মর্মে এক ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছেন ওই প্রেসক্লাবের সভাপতি পিনাকপ্রিয় ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। নিন্দা করা হয়েছে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের সাংবাদিক দের সম্মিলিত সংগঠন কনফেডারেশন অব সিকিম অ্যান্ড নর্থ বেঙ্গল জার্নালিস্ট।