Abhishek Banerjee: উত্তরবঙ্গ আলাদা নয়, একটাই নাম বাংলার, পশ্চিমবঙ্গ : অভিষেক
Abhishek Banerjee: ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে উত্তরে সংগঠনের মাটি শক্ত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। রবিবার চা শ্রমিকদের সমাবেশে যোগ দিলেন অভিষেক।
জলপাইগুড়ি: দীর্ঘদিন থেকেই উত্তরবঙ্গে (North Bengal) বিজেপি শক্ত জমি রয়েছে। একাধিক নেতার পাশাপাশি শেষ লোকসভা ভোটে জন বার্লাকে সামনে রেখে আদিবাসীদের ভোটের একটা বড় অংশ নিজেদের দিকে টানতে সমর্থ হয় পদ্ম শিবির। কার্যত উত্তরের সমস্ত লোকসভা আসনই তাঁদের দখলে। এমতাবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাটি শক্তি করতে ময়দানে নেমে পড়েছে ঘাসফুল শিবির। রবিবার জলপাইগুড়ি মালবাজারে চা শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধরণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhisekh Banerjee)। এদিন কিছু চা শ্রমিকদের অভিষেকের একান্ত আলাপচারিতারও কথা রয়েছে বলে আগেই শোনা গিয়েছিল। এদিনের সভায় অভিষেক ছড়াও রয়েছেন ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়, মলয় ঘটক, উদয়ন গুহ, সাবিনা ইয়াসমিন, গৌতম দেব সহ তৃণমূলের বহু নেতা-মন্ত্রী। মঞ্চে উঠেই চা শ্রমিকদের পাশে থাকার বার্তা দিতে দেখা গেল অভিষেককে। একইসঙ্গে নানা ইস্যুতে তুলোধনা করলেন বিরোধীদের। ঠিক কী কী বললেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।
KEY HIGHLIGHTS
- চা শ্রমিকদের পাশে আছে তৃণমূল। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত চা-শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা সোচ্চার হব। শ্রমিকদের স্বার্থে যতদূর যেতে হয় যাব।
- সিপিএম আমলে ২০১১ সালে চা শ্রমিকদের হাজিরা ছিল ৬৭ টাকা। কিন্তু, সেটা এখন বেড়ে হয়েছে ২৩২ টাকা। গত জুন মাসে ৩০ টাকা বেড়েছে।
- ৩ মাসের মধ্যে প্রত্যেক শ্রমিকের হাতে আইডি কার্ড পাবেন।
- উত্তরবঙ্গ কথাটা নিয়ে আমার আপত্তি রয়েছে। কোনও উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, গৌড়বঙ্গ নয়। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, দার্জিলিং থেকে দেগঙ্গা একটাই বঙ্গ। সে বঙ্গের নাম পশ্চিমবঙ্গ। অন্য কোনও বঙ্গল নয়।
- আজকের এই সমাবেশ কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ নেউ। পুরসভা নেই, বিধানসভা নেই, লোকসভা নেই। পঞ্চায়েত ভোটও দেরি। আমি বলেছিলাম প্রতি ২ মাসে আসব। শেষ ১২ জুলাই এসেছিলাম। এবার ২ মাস শেষ হওয়ার আগেই এসেছি। তাই এই সমাবেশ কথা রাখার সমাবেশ। আপনার জন্য কাজ করার জন্য শপথ নেওযার সমাবেশ এটা। ভোটের সময় যাঁরা আসে বহিরাগতরা, পরিযায়ী পাখির মতো, আর ভোটের পর তাঁদের কাউকে দেখতে না পাওয়া গেলে তাঁর উপর আপনারা আশা-ভরসা রাখবেন?
- প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বন্ধ থাকা বীরপাড়া, লঙ্কাপাড়া, তুলসিপাড়া সহ ৭টি চা বাগান কেন্দ্র সরকার অধিগ্রহণ করবে। নতুন করে খোলার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু, বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী আর বাস্তবায়িত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি যা বলে করে না। তৃণমূল কংগ্রেস যা বলে তা করে।
- অনেকের অভিযোগ ছিল পিএফ, গ্যাচুইটি না পাওয়া নিয়ে। আপনাদের পিএপ, গ্যাচুইটির দাবি ন্যায্য। আমি শ্রমমন্ত্রীকে বলব ৬টা চা বলয়ের ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার চা শ্রমিকের সবার যেন আগামীদিনে একটা করে আইডি কার্ড তৈরি হয়। তিন মাসের মধ্যে এটা শ্রম দফতরকে সুনিশ্চিত করতে হবে। ৩১ জানুয়ারি মধ্যে প্রতিটা শ্রমিকের হাতে আইডি কার্ড পৌঁছে যাবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।
- অনেক সময় চা মালিকদের বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের পিএফ, গ্যাচুইটি না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পিএফ, গ্যাচুইটি কেন্দ্রের বিষয়। এই টাকা প্রতিটা শ্রমিকের অ্য়াকাউন্টে বিজেপি সরকারকে পাঠাতে হবে। আমরা এর জন্য তিন মাসের সময় দিচ্ছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে পে স্লিপ দেওয়ার জন্য আমি শ্রমমন্ত্রীর কাছেও অনুরোধ করেছি। তারপরেও মালিকরা টাকা দেবেন না তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে হবে।
- কাল থেকেই পিএফ-গ্যাচুইটির দাবিতে বড় আন্দোলন শুরু হবে। প্রতিটা চা বাগানে আন্দোলন হবে। তার পরে কাজ না হলে জেলার পিএফ অফিস ঘেরাও করবেন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি কাজ না হয় তাহলে ১ জানুয়ারি থেকে উত্তরঙ্গে বিজেপির সাংসদের বাড়ি ঘেরাও করবেন। কলকাতা থেকে আমি আসব। দরকারে দিল্লি অবধি আমরা যাব।
- বিজেপি ভাষণ দেয়, মমতা বন্দোপাধ্যায় রেশন দেয়। জন বার্লা বাড়ি বানিয়েছে, মল বানিয়েছে। আপনাদের দিয়েছে হাঁসের ডিম।
- তৃণমূল কংগ্রেস হাই কোয়ালিটির ডিভিডি। চালালে শুনতেও পাবেন, দেখতেও পাবেন। বিজেপি হচ্ছে ভাঙা অডিও ক্যাসেট। চোখে দেখতে পাবেন না। শুনতে পাবেন।
- তৃণমূল কংগ্রেস হাই কোয়ালিটির ডিভিডি। চালালে শুনতেও পাবেন, দেখতেও পাবেন। বিজেপি হচ্ছে ভাঙা অডিও ক্যাসেট। চোখে দেখতে পাবেন না। শুনতে পাবেন।
- আমার কথার পরেই নতুন তৃণমূল নিয়ে অনেক জল্পনা হয়েছে। অনেকে অনেক রকম লিখছে, বলছে, দেখাচ্ছে। তারমানে কী পুরনো তৃণমূল বাদ? আমি তো বলিনি পুরনো তৃণমূল বাদ। নতুন তৃণমূল মানে মানুষ যেভাবে তৃণমূলকে দেখতে চাইছে, তৃণমূলকে সেভাবে তৈরি করা, প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা বদ্ধ পরিকর। এই যে নতুন ব্লক, টাউন কমিটি বেরিয়েছে আপনারা দেখেছেন কাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, কাদের ব্লকের সভাপতি করা হয়েছে।
- আগামীদিনে পঞ্চায়েতেও দেখবেন শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন হবে। আমরা আমাদের কথা নিয়ে মানুষের কাছে যাব। বিরোধীরা বিরোধীদের কথা নিয়ে মানুষের কাছে যাবে। মানুষ একপক্ষকে গ্রহণ করবে, একপক্ষকে বর্জন করবে। ২০১১ সালে সিপিএমকে সরিয়ে যে তৃণমূল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শকে সামনে রেখে লড়াই করেছিল সেই তৃণমূলকে মানুষ দেখতে চায়। শ্রমিকের দাবি-দাওয়া নিয়ে, কৃষকের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় যাঁরা আন্দোলন করে সেই তৃণমূলকে মানুষ দেখতে চায়। সেই তৃণমূলকে মানুষ দেখতে চায় যে তৃণমূল খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী,যুবশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ফর্ম ফিলাপ করে দিয়ে তাঁদেরকে সাহায্য করে।
- যদি কেউ দলকে ভাঙিয়ে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, ঠকিয়ে, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাজনীতি করে দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। রাজ্য নেতা থেকে বুথ স্তরের নেতা সবাইকে বলছি।
- ইডি-সিবিআইয়ের ভয়ে বিজেপিতে যাঁরা যোগদান করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে বিজেপি কী ব্যবস্থা নিয়েছে? মলয় ঘটকের বাড়িতে সিবিআই রেড করেছে। তাঁর বাড়ি থেকে ১৪ হাজার টাকা পেয়েছে। যাতায়াতের খরচও ওঠেনি। ৮-১০ ঘণ্টা ধরে রেড করে ১৪ হাজার টাকা! এই হচ্ছে ইডি-সিবিআই। আর যাঁদের কাগজে মুড়ে টাকা নিতে দেখা যাচ্ছে তাঁরা এখন বিজেপিতে গিয়ে সবাইকে চোর বলছে।