চাকরি দেওয়ার নামে ১ লক্ষ টাকা দাবি, ‘সামান্য ভুলে’ গ্রেফতার ভুয়ো মানবাধিকার কমিশনের অধিকর্তা!

Fake Human Rights Officer:জলপাইগুড়ির বাসিন্দা প্রতারিত অপু সরকারের অভিযোগ, সম্প্রতি এক বন্ধুর মাধ্যমে মৈনাকের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। মৈনাক নিজেকে হিউম্য়ান রাইটসের অফিসার বলে  পরিচয় দেন বলে অভিযোগ।

চাকরি দেওয়ার নামে ১ লক্ষ টাকা দাবি, 'সামান্য ভুলে' গ্রেফতার ভুয়ো মানবাধিকার কমিশনের অধিকর্তা!
ধৃত মৈনাক চক্রবর্তী, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 11, 2021 | 1:29 PM

জলপাইগুড়ি: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডের রেশ কাটেনি, তারপরেই ধরা পড়েছে ভুয়ো সিবিআই কৌঁসুুলি  সনাতন রায় চৌধুরী, ভুয়ো সিআইডি রাধারানি বিশ্বাস, এ বার সেই তালিকায় নাম লেখালেন মৈনাক চক্রবর্তী নামে এক যুবক। নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের অধিকর্তা (Human Rights Officer) বলে এক যুবককে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল মৈনাকের বিরুদ্ধে।

জলপাইগুড়ির বাসিন্দা প্রতারিত অপু সরকারের অভিযোগ, সম্প্রতি এক বন্ধুর মাধ্যমে মৈনাকের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। মৈনাক নিজেকে হিউম্য়ান রাইটসের অফিসার (Human Rights Officer) বলে  পরিচয় দেন বলে অভিযোগ। অপুকে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করিয়ে দেবেন এই আশ্বাস দিয়ে ১ লক্ষ টাকা চান মৈনাক। অভিযোগ,  অগ্রিম হিসেবে ৩০ হাজার টাকার দাবি করেন তিনি। অপু  স্পষ্টই জানান, তিনি ওত টাকা দিতে পারবেন না। তবে নূন্যতম ১০ হাজার টাকা তিনি পাঠাতে পারেন। মৈনাক জানান টাকা যেন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়। সেইমতো অপুকে অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস ও গুগল পে নম্বর পাঠান মৈনাক। টাকা পাঠাতে গিয়ে সন্দেহ হয় অপুর। খোঁজ নিয়ে জানেন যে অ্যাকাউন্ট নম্বরটি দেওয়া হয়েছে সেটি আসলে স্থানীয় ত্রিমূর্তি নামে একটি রিসর্টের মালিকের অ্যাকাউন্ট নম্বর। খোঁজ নিয়ে জানেন, ওই ত্রিমূর্তি রিসর্টেই আছেন মৈনাক। অপু বুঝতে পারেন তাঁকে ঠকানো হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে রিসর্টে গিয়ে খোঁজ করতেই মৈনাকের দেখা পান প্রতারিত যুবক। খবর দেওয়া হয় থানাতেও।

প্রতারিত যুবকের কথায়, “ছেলেটির সঙ্গে আমার তিন চারদিন আগে আলাপ। আমাকে মানবাধিকার কমিশনের অধিকর্তা (Human Rights Officer) বলে এক লক্ষ টাকা চায়। আমার এক বন্ধুই ওর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। ছেলেটি আমাকে বলে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেবে। ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম চেয়েছিল, কিন্তু আমি দিতে পারিনি। বলেছি, ১০ হাজার টাকা দেব। অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে গিয়ে অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস দেখেই আমার প্রথম সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি অ্যাকাউন্ট ডিটেইলসটা আমাদের ত্রিমূর্তি রিসর্টের ম্যানেজারের। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দিই। পুলিশ এসে ওকে পাকড়াও করে। ওর সামান্য ভুলেই ও ধরা পড়ল।”

ত্রিমূর্তি রিসর্টের মালিক ও ম্যানেজার জানিয়েছেন মৈনাক চক্রবর্তী গত সপ্তাহে রিসর্টে আসেন। তারপর থেকে রিসর্টেই ছিলেন। শনিবার রাতে তাঁর ঘর ছেড়ে দেওয়ার কথা। এক সপ্তাহে তাঁর বিল হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। টাকা দেওয়ার জন্য তিনি অ্যাকাউন্ট ডিটেলেইস ও গুগল পে নম্বর চান। জানান, গুগল পে-তেই ১৮ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু, তার আগেই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়, তিনি নাকি জালিয়াতি কাণ্ডে যুক্ত।

শনিবার রাতেই মেটেলি থানার পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক তদন্তের পর বেশ কয়েকটি অসঙ্গতি ধরা পড়েছে গোয়েন্দাদের চোখে। প্রথমত, অভিযুক্তের সঙ্গে আলাপ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি অভিযোগকারী। দ্বিতীয় কোনও প্রমাণ বা নথি ছাড়াই কেবল মৈনাকের মুখের  কথা বিশ্বাস করে নিলেন অপু? তাহলে কি মৈনাক এমন কিছু দেখিয়েছিলেন যা প্রামাণ্য় নথি হিসেবে কাজ করেছিল? এরকম নানা অসঙ্গতি এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে। জানা গিয়েছে মৈনাক কোচবিহারের বাসিন্দা। তবে তিনি কেন জলপাইগুড়ি এসেছিলেন কেনই বা এই প্রতারণাকাণ্ডে জড়ালেন, এর পেছনে আরও কোনও বড় চক্র আছে  কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। আরও পড়ুন: বিজেপির ফাঁদে পা নয়, স্বাধীন রাজ্য চায় কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি