North Bengal: হাসপাতালের বেডে গাদাগাদি আক্রান্ত শিশুদের! কেন অব্যবস্থা, প্রশ্ন বিজেপি বিধায়কের
Mystery Fever: হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশুদের জন্য বরাদ্দ বেডের সংখ্যা ৩৬। তারমধ্যে ১০ টি আইসিইউ শয্যা। সেখানে আক্রান্ত ৬৭। অর্থাত্, সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক শয্যার জোগান দেওয়া কার্যত অসম্ভবের পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে বলেই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
উত্তরবঙ্গ: অজানা জ্বরের (Mystery Fever) আতঙ্ক কমছেই না। বৃহস্পতিবার সকালেও নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩২জন শিশু। মালদায় ইতিমধ্যেই অজানা জ্বরে প্রাণ গিয়েছে ৩জনের। অন্যদিকে, হাসপাতালগুলিতে দেখা গিয়েছে প্রবল শয্যা-সঙ্কট। উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় এই ছবিতে কার্যত উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। একদিকে যেমন মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চরম অব্যবস্থার ছবি যেমন প্রকাশ্যে তেমনই দূর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে সরাসরি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে দুষলেন কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে।
বৃহস্পতিবার, মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে দেখা যায়, বেডের অভাবে একটি শয্যাতেই দুই থেকে তিনজন শিশু গাদাগাদি করে শুয়ে রয়েছে। চার ফুট বাই ছয় ফুটের সেই বেডে জ্বরে (Mystery Fever) আক্রান্ত প্রায় তিন-চারজন শিশু গাদাগাদি করে শুয়ে রয়েছে। বেড না পেয়ে হাসপাতালের করিডরে, বাথরুমের সামনে কখনও বা মেঝেতেই ভিড় করেছেন শিশুর পরিবার। প্রত্যকেরই একই উপসর্গ। জ্বর, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছে আক্রান্তদের মধ্যে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬৭ জন শিশু নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে খবর সূত্রের।
কেন এই অব্যবস্থা? হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশুদের জন্য বরাদ্দ বেডের সংখ্যা ৩৬। তারমধ্যে ১০ টি আইসিইউ শয্যা। সেখানে আক্রান্ত ৬৭। অর্থাত্, সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক শয্যার জোগান দেওয়া কার্যত অসম্ভবের পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে বলেই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাই বিকল্প কী হতে পারে তা নিয়ে দ্রুত আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সূত্রের খবর, মাল ব্লক জুড়েই শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি থাবা বসিয়েছেন ডেঙ্গু। চন্দনা সরকার, মহাবেতুন বেগম, মুক্তা বানুর মতো মায়েদের বক্তব্য, বাচ্চাদের দু’-তিনদিন ধরেই টানা জ্বর-সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ রয়েছে। কোনওভাবেই জ্বর সারছে না।
মাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার চিকিত্সক সুরজিত্ সেন বলেন, “জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের চিকিত্সা চলছে। আমরা সকল শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখার চেষ্টা করছি। আক্রান্তদের ডেঙ্গু, কোভিড সবরকম পরীক্ষাই করা হয়েছে।”
এদিকে, অজানা জ্বর নিয়ে জেলায় আক্রান্ত শিশুদের বিষয়ে খোঁজখবর করেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য় আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করলেন কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে। অজানা জ্বর ও হাসপাতালগুলির অব্যবস্থার প্রসঙ্গে সরাসরি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককেই নিশানা করেন বিধায়ক। তিনি বলেন, “জেলায় একটা মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। কিন্তু কোনও পরিকাঠামো নেই। একটা বেডের মধ্য়ে তিন-চারজন বাচ্চা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুয়ে রয়েছে। নামেই মেডিক্য়াল কলেজ। জেলা জুড়়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কোনও চিহ্নই নেই।” তবে বিধায়ক ক্ষোভ প্রকাশ করলেও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস অবশ্য কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, বুধবার পর্যন্ত কোচবিহারে অজানা জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্য়া ১১৩। গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৬ জন শিশু। হাসপাতাল থেকে মুক্ত ৫৪। জ্বরে মৃত্যু হয়েছে ১ শিশুর। ইতিমধ্যেই অজানা জ্বরের মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ভবনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে আট সদস্যের বিশেষ কমিটি। সেই বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। সেই বৈঠকের সূত্র ধরে বিকেলে ফের জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, ডেপুটি সিএমওএইচ টু, এমএসভিপি, জেলা হাসপাতালের সুপার, নিকু-পিকু-আইসিইউ ইনচার্জ এবং প্রতিটি হাসপাতালের একজন শিশুরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ কমিটির উপস্থিতিতে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য সচিব।
জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে অবশেষে মুখ খোলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বছরের এ সময় প্রতিবারই শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এ বছর সংখ্যাটা বেশি। তার মানে এই নয় যে কিছুই ঘটেনি। রোগ যখন হচ্ছে। শিশুদের আইসিইউয়ে ভর্তি যখন করতে হচ্ছে তখন কিছু একটা কারণও নিশ্চিত রয়েছে।” পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কী কী পদক্ষেপ করতে চলেছে তাও স্পষ্ট করেন স্বাস্থ্য় অধিকর্তা।
রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Murshidabad: অজানা জ্বরে আক্রান্ত ১৫০, মেডিক্যাল কলেজে মেঝেতেও শুয়ে শিশুরা!
আরও পড়ুন: Jalpaiguri: জাপানি এনকেফালাইটিসের সংক্রমণ নয়, অজানা জ্বর নিয়ে মুখ খুললেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক