Malbazar Flash Flood: ‘ফোনটা ধর তো’ বলেই হড়পার জলে ঝাঁপ, ১০ জনকে বাঁচিয়ে গাঁয়ের মানিক এখন হিরো
Dhupguri: মহম্মদ মানিক জানান, প্রতিমা বিসর্জন দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে মালবাজারে গিয়েছিলেন। সেই সময় আচমকাই হড়পা বান আসে।
জলপাইগুড়ি: মালবাজারে হড়পা বানে জলে ডুবতে থাকা ১০ জনকে একাই বাঁচিয়ে এখন গ্রামের হিরো মহম্মদ মানিক। দশমীতে মাল নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় হড়পা বানে যে বিপর্যয় ঘটে তাতে ৮ জন মারা গিয়েছেন। বরাত জোরে রক্ষা পেয়েছেন শতাধিক। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে রক্ষা করেন মানিক। তেসিমলা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার এই যুবকও মাল নদীর ধারে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলেন। হঠাৎই হড়পা বানে চোখের সামনে মানুষগুলোকে ভেসে যেতে দেখে আর আশপাশ কিছু তাকিয়ে দেখেননি তিনি। সোজা ঝাঁপ মারেন জলের স্রোতে।
মহম্মদ মানিক জানান, প্রতিমা বিসর্জন দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে মালবাজারে গিয়েছিলেন। সেই সময় আচমকাই হড়পা বান আসে। অনেকে ভেসে যাচ্ছেন দেখে নিজের মোবাইল ফোনটা এক বন্ধুর হাতে দিয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। প্রায় ১০ জনকে উদ্ধার করেন তিনি। উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর পায়ের আঙুলও কেটে যায়। এরপরই দমকল কর্মীরা তাকে মাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়েও দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন মানিক ভাইরাল।
ডুয়ার্সের মালবাজার শহরের পাশাপাশি আশেপাশের বিভিন্ন চা বাগান এলাকা থেকে পুজো উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন দিতে আসেন এই মাল নদীতে। আর সেই বিসর্জন দেখতে ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬-৮ হাজার মানুষ বুধবার এসেছিলেন বিসর্জন ঘাটে। হঠাৎই হড়পা বান আসে সে নদীতে। এরপরই জলের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষগুলোকে। এখনও অবধি বহু মানুষের খোঁজ নেই। অনেকে আবার গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মৃত্যুকে চোখের এতটা সামনে থেকে চাক্ষুষ করে কেউ কেউ আবার ভীত, কুঁকড়ে গিয়েছেন ভয়ে।
ইতিমধ্যেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধিকাংশই প্রশ্ন তুলেছে নিরাপত্তা নিয়ে। ডুয়ার্সের নদীগুলিতে হড়পা বান আগেও এসেছে। এদিকে অভিযোগ, বিসর্জনের সময় নদীর ধারে সিভিল ডিফেন্সের মাত্র আটজন কর্মী ছিলেন। সঙ্গে তাঁদের শুধু দড়ি ছিল। আর কোনও কিছুই ছিল না। সিভিল ডিফেন্স অফিসার পল্লববিকাশ মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের কাছে সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার কম আছে। ৮ জনকে পাঠানো হয় মাল মহকুমার জন্য।”
মহম্মদ মানিকের কথায়, “নদীতে লাফিয়ে পড়ে ১০-১২ জনকে আমি উদ্ধার করে ধারে নিয়ে যাই। ভয়ঙ্কর সেই ছবি। একের পর এক লোক ভেসে যাচ্ছে।” মানিকের এমন সাহসিকতায় গর্বে বুক ফুলে গিয়েছে বন্ধু পরিজনদের। মানিকের এক প্রতিবেশী রাবু প্রধান বলেন, “ও প্রায় প্রায়ই রক্তদান করে। মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা ওর চিরকালের।”