Justice Abhijit Gangopadhyay: জলকষ্টের কথা শুনতে চেয়ার ছেড়ে নেমে এলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, অভিভূত কানু সান্যালের গ্রাম
Justice Abhijit Gangopadhyay: জানা গিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের সেবদুল্লা গ্রামে জলের সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন প্রকল্পে গ্রামে কাজ শুরু হয়। অভিযোগ, প্রকল্প চালু হলেও সেবদুল্লা গ্রামের ১০৭ টি পরিবার জল পাচ্ছেন না।
জলপাইগুড়ি: বিচারপতির আসন ছেড়ে আধিকারিকদের চেয়ারে বসে মামলা শুনলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতিকে অন্য মেজাজে দেখে অভিভূত আইনজীবী থেকে কানু সান্যালের গ্রামের বাসিন্দারা। মামলার শুনানির দিন এলেই কলে জল আসে। আবার শুনানি হয়ে গেলে আর দেখা মেলে না জলের। অভিযোগ উঠেছে এমনটা। বিষয়টি ঠিক কী? কেনই বা গ্রামবাসীরা জল পাচ্ছেন না তার কারণ জানতে মামলার বাদী-বিবাদী সব পক্ষকেই মঙ্গলবার তাঁর এজলাসে ডেকে পাঠান বিচারপতি। সূত্রের খবর, এদিন শুনানি চলাকালীন অভিযোগকারীদের কথা শুনতে না পেয়ে নিজের আসন ছেড়ে নিচে নেমে আধিকারিকদের চেয়ারে বসে পড়েন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেখান থেকেই দেন নির্দেশ।
জানা গিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের সেবদুল্লা গ্রামে জলের সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন প্রকল্পে গ্রামে কাজ শুরু হয়। অভিযোগ, প্রকল্প চালু হলেও সেবদুল্লা গ্রামের ১০৭ টি পরিবার জল পাচ্ছেন না। ওই সমস্যার সমাধান চেয়ে গ্রামের বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট নকশাল নেতা দীপু হালদার, শান্তি নাগাসিয়া, ছোটন মুন্ডা সহ সেবদুল্লা গ্রামের ১০ জন বাসিন্দা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। প্রসঙ্গত, এই সেবদুল্লা গ্রাম বিশিষ্ট নকশাল নেতা কানু সান্যালের গ্রাম নামেই আশপাশের এলাকায় পরিচিত।
বহু আবেদন নিবেদনের পরেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন জলকষ্টে থাকা কিছু পরিবার। যার মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী চা শ্রমিকদের পরিবারের সদস্য। সোমবার মামলাটি উঠেছিল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। বিষয়টি শোনার পর সমস্যার মূল খুঁজতে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর এজলাসে ডেকে পাঠান অভিযোগকারীদের।
শুনানির শুরুতে গ্রামবাসীদের বক্তব্য ভাল করে শুনতে পাচ্ছিলেন না বিচারপতি। শুনতে না পেয়ে নিজের আসন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর গ্রামবাসীদের সামনে এসে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এজলাসের আধিকারিকদের চেয়ারে বসে মামলা শোনেন।
বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন CPIML কানু সান্যাল গোষ্ঠীর রাজ্য সম্পাদক দীপু হালদার। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জলকষ্ট। কানু সান্যাল বেচে থাকার সময় আমরা ঝোড়ার জল খেতাম। এরপর আমরা PHE দপ্তরে আবেদন করলে আমাদের গ্রামে কল লাগিয়ে দেওয়া হয়। জল সমস্যা মিটে যায়। এরপর উদ্যোগ নেওয়া হয় বাড়ি বাড়ি কানেকশন দিয়ে জল পৌঁছে দেওয়ার। আমার বাড়িতেও সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর আমার বাড়ির কল দিয়ে জল পড়ছে দেখিয়ে দিয়ে আমার থেকে আধার কার্ডের জেরক্স নিয়ে নেওয়া হয়। তার পর থেকে আর জল পাচ্ছিলাম না। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে দরবার করে সুরাহা না হওয়ায় আমরা আদালতের দারস্থ হই।
এই মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, নকশালবাড়ির সেবদুল্লা গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে জলকষ্টতে জর্জরিত। সমস্যা সমাধানে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করা যায় এই মামলার যখনই শুনানির দিন আসে তখনই কল দিয়ে জল পড়তে শুরু করে। যেই শুনানি হয়ে যায় আবার জল বন্ধ হয়ে যায়। আমার মনে হয় সমস্যা বুঝতে বিচারপতি আজ মামলাকারীদের তাঁর এজলাসে ডেকে পাঠান বিচারপতি। কিন্তু, শুনানি শুরু হওয়ার পর দেখা যায় বিচারপতি তাঁদের কথা ভাল করে শুনতে পাচ্ছিলেন না। এরপর বিচারপতি নিজেই নিচে নেমে এসে মামলা শোনেন। একজন বিচারক বিচারপ্রার্থীদের কাছে এসে মামলা শুনছেন। এই দৃশ্য আমি প্রথম দেখলাম। আমি অভিভূত।
সরকার পক্ষের আইনজীবী হীরক বর্মন বলেন, যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। কারণ, এই প্রকল্পের কাজ এখনও চলছে। মাঝেমধ্যে হাতির হানা কিংবা ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য পাইপ ফেটে জল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিচারপতি আজ মামলাকারীদের ডেকেছিলেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে ৫ জন জানিয়ে গিয়েছেন তাঁরা জল পাচ্ছেন। আজ অন্যদেরও ডেকেছিলেন। সবকিছু শোনার পর আগামীকাল ওই প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের AEO, PHE দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার সহ অন্যদের ফের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।