নিছক প্রতারক নাকি চিনের কোনও বড় পরিকল্পনা সফল করতেই ভারতে হান, উত্তর খুঁজছে গোয়েন্দারা
একবার নয় এর আগে চারবার ভারতে এসেছিলেন হান (Hun Zunwe)। গুরুগ্রামে তাঁর হোটেল ব্যবসাও রয়েছে।
মালদহ: বাংলায় ‘চিনা গুপ্তচর’-এর প্রবেশ ঘিরে নানা প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে। ধৃত হান জেনুই কোনও সাধারণ অপরাধী নাকি চিনের ‘সিক্রেট এজেন্ট’, তা জানতে মালদহে এনআইএ-আইবি। সূত্রের খবর, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW)-এর জেরার মুখেও পড়তে হতে পারে তাঁকে। শনিবারই আদালতে তোলা হবে হানকে।
একবার নয় এর আগে চারবার ভারতে এসেছিলেন হান। গুরুগ্রামে তাঁর হোটেল ব্যবসাও রয়েছে। সেই হান জেনুইকে চিনের গুপ্তচর বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ ও নেপালের ভিসা নিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। চিনা নাগরিককে জেরা করে উঠে আসছে নানা তথ্য। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে মালদহে গিয়েছে লখনউয়ের এটিএসও।
গত বৃহস্পতিবার কালিয়াচকের মিলিক সুলতানপুর সীমান্ত এলাকা থেকে হান জুনেইকে পাকড়াও করে বিএসএফ। সীমান্তে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি। তা দেখেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সন্দেহ হয়। তাঁকে মহদিপুর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করা হয়। ইতিমধ্যেই তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য হাতে উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের।
হান জুনেই চিনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। ৩৬ বছর বয়সী এই যুবকের জন্ম ১৯৮৫ সালে। জুনের গোড়ায় বাংলাদেশ পৌঁছন হান। ২ জুন বিজনেস ভিসা নিয়ে ঢাকা যান। ৮ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকায় হোটেল ভাড়া নেন তিনি। সেখানে দু’দিন থেকে ভারতে ঢোকেন। কিন্তু সীমান্তেই বিসএসএফের হাতে ধরা পড়ে যান। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এই প্রথম নয়। এর আগে চারবার ভারতে এসেছেন তিনি। ২০১০ সালে হায়দরাবাদে যান, ২০১৯-এ দিল্লি ও গুরুগ্রাম মিলিয়ে তিনবার আসেন এ দেশে।
আরও পড়ুন: রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ রাজ্যপাল সকাল সকাল চাণক্য-কবিগুরুর শরণে
শুধু কি ভারতে আসা যাওয়া? এ দেশে সম্পত্তিও আছে তাঁর। স্টার স্প্রিং নামে গুরুগ্রামে হোটেল আছে হানের। সেখানে ভারতীয় ও চিনা কর্মীরা কাজ করেন। হানকে জেরা করতে এনআইএ মালদহে। তদন্তকারীরা জানান, হানের তিন সহযোগী গত বছর লখনউ এটিএসের হাতে ধরা পড়ে। গত জানুয়ারি মাসে লখনউ এটিএস জুলাই ও এলিস নামে দুই চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করে। এদের কাছ থেকেই হদিশ মেলে সাং জিয়ান নামে চিনের আরও এক নাগরিকের। তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীরা দেখতে পান, ধৃত তিন জনই ভারতীয় নামে প্রচুর ভারতীয় সিম কার্ড তুলছিল। সেই সিম কার্ড তারা চিনে পাঠাচ্ছিল।
তাঁদের সূত্রেই হানের কথা প্রথম জানা যায়। হান ও তাঁর স্ত্রী-র নামে মামলা করে এটিএস। হানকে জেরা করে বড়ষড় ষড়যন্ত্রের হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। গোটা ভারত জুড়ে চিন একটা প্রতারণার জাল বুনেছে। ‘মাল্টি লেভেল মার্কেটিং’ এর নাম করে তারা জাল বুনেছিল। পাওয়ার ব্যাঙ্ক ও ইভেন্ট প্ল্যান্ট বলে দুটি অ্যাপকে ডেভলপ করেছিল তারা। সেই অ্যাপের মাধ্যমেই তারা ভারতে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লগ্নি করাচ্ছিল। সেই টাকা দ্বিগুণ করিয়ে দেওয়ার নাম করে।
সেই কারণে ভারতের ভিসা পাননি হান। এরপর বাংলাদেশ ও নেপালের ভিসা নিয়ে ঘুরপথে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেন। লক্ষ্য ছিল, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ধরে ফেলেন বিএসএফ জওয়ানরা। ভারতে আসার লক্ষ্য কী হানের? তিনি কি নিছক অপরাধী নাকি গুপ্তচর? সেসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।