Dengue: ফের ডেঙ্গুর থাবায় মৃত্যু ব্যবসায়ীর, জমা জলেই বাড়ছে বিপদ, দাবি এলাকাবাসীর
North 24 Pargana: মৃতের পরিজনেরা জানিয়েছেন, সৈকতবাবু বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। সঙ্গে গায়ে হাত-পা ব্যথা ছিল। করোনা পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তারপরেই চিকিত্সক ডেঙ্গু পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন।
উত্তর ২৪ পরগনা: ফের ডেঙ্গুতে (Dengue) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক ব্যবসায়ীর। অভিরূপ সাহার মৃত্যুর এক সপ্তাহ না কাটতেই ফের ডেঙ্গুতেই প্রাণ গেল সৈকত রায় নামে ওই ব্যবসায়ীর। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি বরানগরের ঘোষপাড়া লেনে। জানা গিয়েছে, ৩৪ বছরের ওই ব্যবসায়ী গত তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। সঙ্গে গা-হাত-পা ব্যথা। বেলঘড়িয়ার বেসরকারি নার্সিংহোমে তাঁর মৃ্ত্য়ু হয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “জায়গায় জায়গায় জল জমেছে। সেখান থেকেই ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। আমাদের এলাকায় প্রায় সাত-আটজন আক্রান্ত হয়েছেন। এভাবে জল জমে আরও বিপদ বাড়ছে। জানি না, পরে কী হবে। পুরসভার পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হোক দ্রুত, আপাতত এটুকুই চাইছি।”একটানা বৃষ্টির জেরে জল-ভোগান্তি বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে নতুন করে ডেঙ্গির (Dengue) আশঙ্কাও মাথাচারা দিচ্ছে।
মৃতের পরিজনেরা জানিয়েছেন, সৈকতবাবু বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। সঙ্গে গায়ে হাত-পা ব্যথা ছিল। করোনা পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তারপরেই চিকিত্সক ডেঙ্গু পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। তখনই ডেঙ্গু ধরা পড়ে। যদিও এই মৃত্যুতে ভাঙেনি বরানগর পুরসভার এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর। যদিও,পুরসভার তরফে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
বেহালার জেমস লং সরণির বাসিন্দা অভিরূপ সাহার বয়স ছিল মাত্র ১৯। চারদিন ডেঙ্গি জ্বরে ভোগার পর ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। সাহা পরিবার সূত্রে খবর, পড়াশোনায় মেধাবী ছিল বি.টেকের ছাত্র অভিরূপ। গত ১০ সেপ্টেম্বর, গণেশপুজো উপলক্ষে সে বরাহনগরে মামা বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে পৌঁছেই দুর্গাপুজোয় আনন্দ করবে বলে পুজোর শপিং-ও সেরে ফেলেছিল এই কিশোর।
বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন, অর্থাৎ গত ১৬ সেপ্টেম্বর বেহালার বাড়িত ফিরে যায় অভিরূপ। শুক্রবার সকাল থেকেই ধুম জ্বর আসে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করলে প্রথমে ভাইরাল জ্বর বলেই তাঁরা অনুমান করেন। কিন্তু টানা বমি শুরু হয় ওই কিশোরের। অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ায় ১৯ তারিখ রাতে পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিরূপকে ভর্তি করে তার পরিবারের লোকজন। তার একদিন পরেই হাসপাতালেই মৃত্যু হয় অভিরূপের।
জমা জলের বহর দেখে ডেঙ্গি আতঙ্কে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীরা। আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ-সহ হাসপাতাল চত্বরের সর্বত্র দু’দিন ধরে জল জমে রয়েছে। জমা জল ঠেলে জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন রোগীর পরিজনেরা। চিকিৎসকদের বক্তব্য, কোভিডের মধ্যে মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গি সংক্রমণ। ডেঙ্গির নতুন স্ট্রেন উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানে প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল চত্বরে জল জমে মশার বংশবৃদ্ধিরই পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বেগ সম্পর্কে সহমত পোষণ করে বেসরকারি হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার সিমরদীপ গিল বলেছেন, “হাসপাতাল থেকেই ডেঙ্গি ছড়ানোর পরিবেশ তৈরি হলে সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক।” দ্রুত জমা জল সরানোর পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আর্জি জানিয়েছেন সিওও।
গত বছর করোনারা প্রকোপের মাঝে ডেঙ্গি জ্বর খুব বেশি ছড়ায়নি। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, গত বার এত বেশি বৃষ্টিও হয়নি। ডেঙ্গি মশাবাহিত রোগ হওয়ার কারণে জমা জলে ডেঙ্গির মশা জন্ম নেয় সবথেকে বেশি। ঠিক যে কারণে ডেঙ্গি থেকে বাঁচার জন্য জল যাতে কোথাও না জমে সে দিকে নজর দিতে বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে গোটা দক্ষিণবঙ্গেই জল জমে একাকার পরিস্থিতি। আগামী কদিন যাবতও এই অবস্থা বজায় থাকবে বলেই জানাচ্ছে আবহওয়া দফতর। ফলে করোনা নিয়ে খানিক স্বস্তি এলেও ডেঙ্গি যে রাজ্য সরকারের পরবর্তী মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে, সেই সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: Kamarhati: ফের ডায়ারিয়া কাড়ল তাজা প্রাণ, পৌরসভার জল ‘পানের অযোগ্য’ দাবি স্থানীয়দের