Sundarban Kalipuja: পুজোর রাতে অরণ্যকালীকে দেখতে আসত দক্ষিণরায়, সুন্দরবনে এ এক অন্য শ্যামার আরাধনা
Kalipuja: বসিরহাটের মধ্যে সুন্দরবনের যে অংশ পড়ে, সেখানে হাড়োয়া ব্লক। হাড়োয়া দিয়ে বয়ে গিয়েছে বিদ্যাধরী নদী। সেই নদীর ধার ঘেঁষে গেলে শালিপুর গ্রামপঞ্চায়েতের খলিসাদি গ্রাম। এ গ্রামেই অরণ্যকালী বিরাজমান। শোনা যায়, একবার বিদ্যাধরী নদী ফুলেফেঁপে উঠেছিল। ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছিল সে। সুন্দরবনের দু'পার একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সে বছর। চারদিকে যেন মড়ক লাগার জোগাড়।
উত্তর ২৪ পরগনা: ফি বছর দুর্যোগ ভাসিয়ে নিয়ে যায় সুন্দরবনকে। তবে এ ছবি আজকের নয়। আড়াইশো বছরের বেশি সময় ধরেই সুন্দরবনে করাল থাবা বসায় বন্যা। সেই বন্যা থেকেই বাঁচতে এখানে অরণ্যকালীর আরাধনা শুরু। ২৫০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। তবে আজও দীপান্বিতা অমাবস্যায় হাড়োয়াবাসী ভক্তিভরে অরণ্যকালীর আরাধনা করে। কত ইতিহাসের সাক্ষী এই পুজো। কত গল্পকথা এই পুজোকে ঘিরে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই গল্প শুনে বড় হয়েছে। অরণ্যকালী যেন এখানকার ঘরের মেয়ে।
বসিরহাটের মধ্যে সুন্দরবনের যে অংশ পড়ে, সেখানে হাড়োয়া ব্লক। হাড়োয়া দিয়ে বয়ে গিয়েছে বিদ্যাধরী নদী। সেই নদীর ধার ঘেঁষে গেলে শালিপুর গ্রামপঞ্চায়েতের খলিসাদি গ্রাম। এ গ্রামেই অরণ্যকালী বিরাজমান। শোনা যায়, একবার বিদ্যাধরী নদী ফুলেফেঁপে উঠেছিল। ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছিল সে। সুন্দরবনের দু’পার একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সে বছর। চারদিকে যেন মড়ক লাগার জোগাড়। গাছপালা, মানুষ সব যেন ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সুন্দরবনকে বাঁচাতে এক সাধু বিদ্যাধরীর পাশে অরণ্যকালীর পুজো করেন। সেই থেকেই এই পুজোর প্রচলন।
এরপর সময়ের হাত ধরে গ্রামে তৈরি হয় মন্দির। এখন সকলে ডাকে অরণ্য কালীবাড়ি বলে। গ্রামের ভট্টাচার্যরা পুজোর ভার পান। বংশক্রমে এখনও তাঁরাই পুজো করেন। এলাকার লোকজনের কথায়, অরণ্যকালী তাঁদের মনের সমস্ত ডাক শোনে। খালি হাতে ফেরায় না কাউকে।
কথিত আছে, প্রতি বছর কালীপুজোর রাতে এই মন্দিরে আসত দক্ষিণরায়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুজো সেরে মন্দির ছাড়তেন পূজারি, গ্রামের লোকেরা। প্রতি বছর কালীপুজোর ঠিক সাতদিন আগে এই মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন হয়। আসে নতুন প্রতিমা। গ্রামের লোকেরা সারা বছর তার পুজো করে। শ্যামাপুজো উপলক্ষে এলাকার মানুষ উৎসবে মেতে ওঠেন। জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হয় পুজোর দিন।
ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্য পিঙ্কি ভট্টাচার্য বলেন, “এক সাধুবাবা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সুন্দরবনকে বাঁচাতে ধ্যানে বসেছিলেন। আড়াইশো তিনশো বছর আগের ঘটনা। সে সময় এখানে জঙ্গলই বেশি ছিল। এত বসতি ছিল না। শুনেছি পুজোর রাতে প্রতিবার বাঘ আসবেই। এখন তো সেসব ভয় নেই। রাতে এখন খুব আনন্দ হয়। বাজি ফাটানো, হইহই হয় খুব।”