Suvendu Adhikari: ব্যারাকপুরে অর্জুন-বিহীন বিজেপির সাংগঠনিক সভা, পদ্মের ‘অধিকার’ ধরে রাখতে পারবেন শুভেন্দু?
Suvendu Adhikari: শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যেভাবে সক্রিয়, তাতে আপাতভাবে মনে হতেই পারে, বিজেপির জন্য আগামিকালের এই বৈঠক মসৃণই হতে চলেছে। কিন্তু তারপরই বেশ কিছু প্রশ্ন বার বার ঘুরেফিরে আসছে শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক অন্দরমহলে।
ব্যারাকপুর : ব্যারাকপুর-ভাটপাড়া-জগদ্দল। রাজনীতির পরিভাষায় এই এলাকাগুলির কথা উঠলেই প্রথমেই উঠে আসে অর্জুন সিংয়ের নাম। এক কথায় অর্জুন সিংকে ঘিরেই বার বার আবর্তিত হয়েছে শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে মমতার সঙ্গ ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় তিন বছর পদ্মে সংসার করে মোহভঙ্গ। এখন আবার ঘরের ছেলে ফিরে এসেছে ঘরে। ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে আগামিকাল, বুধবার শিল্পাঞ্চলে যাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাংগঠনিক বৈঠক করবেন স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে। অর্জুন পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যারাকপুরে পদ্মের স্ট্র্যাটেজি কী হবে, তা বুঝিয়ে দেবেন এলাকার পদ্ম নেতাদের। বুধবার ব্যারাকপুরের পদ্ম বৈঠকে প্রধান বক্তা শুভেন্দুই। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যেভাবে সক্রিয়, তাতে আপাতভাবে মনে হতেই পারে, বিজেপির জন্য আগামিকালের এই বৈঠক মসৃণই হতে চলেছে। কিন্তু তারপরই বেশ কিছু প্রশ্ন বার বার ঘুরেফিরে আসছে শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক অন্দরমহলে।
প্রথমেই যে প্রশ্নটি উঠে আসছে, তা হল ব্যারাকপুরে অর্জুন-বিহীন বিজেপিতে শুভেন্দুর সাংগঠনিক সভা কতটা সফল হবে? বিগত তিন বছরে ব্যারাকপুরে বিজেপির যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়েছে, তাতে একটি অনস্বীকার্য ভূমিকা ছিল অর্জুন সিংয়ের। লোকবল থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল অনেকটাই অর্জুন নির্ভর। এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, অর্জুন এখন তৃণমূলে ‘কামব্যাক’ করায় ব্যারাকপুরে বিজেপিকে আঁতস কাচ দিয়ে খুঁজে বের করতে হচ্ছে। কারণ, অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অনুগামীরাও যাঁরা এতদিন বিজেপির একটি বড় শক্তি ছিল, তাঁরা এখন প্রায় সকলেই তৃণমূলের সঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারী আগামিকাল ব্যারাকপুরে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন।
এদিকে বিজেপির জেলা স্তরের নেতাদের একাংশও স্বীকার করছেন, অর্জুন চলে যাওয়ায় দলের একটি বড় ক্ষতি হয়েছে। শাসক দলের থেকে আবার কিছুটা বক্রোক্তির সুরেই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বিজেপির ব্যারাকপুরের সংগঠন এখন এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে যে লোকবলের সেই অভাব যাতে প্রকাশ্যে চলে না আসে, সেই কারণেই হোটেলের একটি ঘরের মধ্যে বৈঠক করা হচ্ছে।
অর্জুন যখন বিজেপিতে ছিলেন তখন তিনি যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলি করেছেন, তখন বার বার তাঁকে মানসিকল ও শারীরিকভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে। কখনও তৃণমূল কর্মীদের দ্বারা আবার কখনও পুলিশের দ্বারা। বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলে ফিরেই এক নজির গড়লেন সাংসদ অর্জুন সিং। শুভেন্দুর ব্যারাকপুরে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্জুন সিং। তাঁর বক্তব্য, রাজনৈতিকভাবে লড়াই থাকতে পারে। কিন্তু যে কোনও রাজনৈতিক দল তাঁর সাংগঠনিক সভা করতেই পারে। এর পাশাপাশি অর্জুন সিং আরও জানিয়েছেন, এমন কোনও কাজ করা যাবে না, যাতে বিজেপি অকারণে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যায় বা মানুষের সমর্থন বিজেপির দিকে চলে যায়।
এদিকে তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিক আবার দাবি করেছেন, ব্যারাকপুরে শুভেন্দুর সভা করতে আসা বা না আসায় তৃণমূলের কিছু যায়-আসে না। তাঁর বক্তব্য, শুভেন্দু বাবু এর আগে আসানসোলের দায়িত্ব ছিলেন, ভবানীপুরের দায়িত্ব ছিলেন। কিন্তু সে সব জায়গায় বিজেপি গো-হারা হেরেছে। তাই শুভেন্দুর সভা নিয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যাথা নেই। তাঁর কথায়, “শুভেন্দুর এখন আর সেই গুরুত্ব নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদের হাত মাথায় না থাকলে সবই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যায়।” এদিকে আবার ৩০ মে ব্যারাকপুরে অভিষেকের সভা রয়েছে। অর্জুন সিংয়ের দাবি, বিজেপির প্রায় ৯০ শতাংশই সেইদিন তৃণমূলে যোগ দেবেন। অর্জুন বিহীন বিজেপির এই নড়বড়ে পরিস্থিতির মধ্যে শুভেন্দুর সাংগঠনিক সভা কতটা সফল হবে, ভোকাল টনিক দিয়ে সংগঠনকে কতটা চাঙ্গা করতে পারবেন শুভেন্দু, সেই দিকেই এখন নজর রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের।