School Open: ১১০০-র মধ্যে হাজির মাত্র ৪০! প্রথম দিনের হাজিরায় আশঙ্কা বাড়ছে স্কুল কর্তৃপক্ষের
School Open: প্রধান শিক্ষকের মতে, সদ্য সরকারি ঘোষণা হয়েছে যে বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস শুরু হবে। ফলে তাদের জানাতে একটু সময় লাগছে ছাত্রছাত্রী এবং অবিভাবকদের একাংশকে। সেটাও উপস্থিতির হার কম হওয়ার একটা কারণ হতে পারে।
বাঁকুড়া: করোনা মহামারীর প্রভাবে গত দু বছর স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়া থেকে অভিভাবক সকলেই দাবি ছিল দ্রুত খোলা হোক স্কুল। করোনার প্রভাব ধীরে ধীরে কমায় রাজ্য সরকারও সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল খোলার। সেই মর্মে আজ থেকেই খুলেছিল স্কুল। কিন্তু খোলার প্রথম দিনেই বাঁকুড়ায় ধরা পড়ল বিপরীত চিত্র। বৃহস্পতিবার প্রথম দিন অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার চার শতাংশেরও কম। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে স্কুল শুরুর দিনেই বাঁকুড়া শহরের বঙ্গ বিদ্যালয়ের এই বিপরীতধর্মী ছবি কি অন্য কথা বলছে? আশঙ্কিত স্কুলের শিক্ষক থেকে অবিভাবক সকলের মনে নতুন আশঙ্কার মেঘ উঁকি দিচ্ছে। সকলের মনেই চিন্তা তবে কি গত দু বছর ধরে স্কুলে না আসার পর নিউ নর্ম্যাল জীবনের শুরু হতেই স্কুলের প্রতি অনিহা তৈরি হয়েছে পড়ুয়াদের!
বাঁকুড়া শহরের অন্যতম নামী ও প্রাচীন স্কুল বঙ্গ বিদ্যালয়। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১১০০। করোনা মহামারীর পূর্ববর্তী স্বাভাবিক সময়ে স্কুলে পড়ুয়াদের দৈনিক উপস্থিতির হার থাকত ৬০ শতাংশেরও উপরে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ স্কুল খোলায় স্কুলে উপস্থিতির হার যে বৃদ্ধি পাবে সে ব্যাপারে একপ্রকার নিশ্চিতই ছিলেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। কিন্তু স্কুল খুলতেই দেখা গেল উল্টোপুরাণ। সব মিলিয়ে এদিন স্কুলে এসেছে মাত্র ৪০ জন পড়ুয়া। এর মধ্যে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার সবথেকে কম।
কেন এমনটা হল? এ ব্যাপারে স্কুলের পড়ুয়াদের দাবি অধিকাংশের দাবি প্রাইভেট টিউশানির সঙ্গে স্কুলের সময়ের তালমেল না হওয়ায় এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে অন্য কথা বলছেন স্কুলের শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি একদিকে প্রচারের অভাব অন্যদিকে সামনে সরস্বতী পুজো ও সপ্তাহ শেষ হতে চলায় অনেকেই এই সপ্তাহে আর স্কুলে আসেনি। তবে তাঁরা আশাবাদী সামনের সপ্তাহেই বৃদ্ধি পাবে উপস্থিতির হার। এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ চৌধুরি বলেন, ‘ছাত্র ছাত্রীদের ইচ্ছের একেবারে যে অভাব রয়েছে তা নয়। তাদের আগ্রহ রয়েছে স্কুলে আসার, স্কুলের পঠনপাঠনের মধ্যে থাকার আর পড়াশুনোর পাশাপাশি নিজেদের বন্ধবান্ধবদের সঙ্গে গল্পগুজব করার। তবে আজকে উপস্থিতির হার অনেকটাই কম। সেটা দেখে আমাদের খারাপ লাগছে। কিন্তু মনে হচ্ছে সরস্বতী পুজো তো এসে গেল,আগামী পরশু দিন। তাই হয়ত অনেকেই ভেবে নিয়েছে যে সরস্বতী পুজোর আগে পড়াশুনো হবে না। সাধারণত ছাত্রছাত্রীরা দেখে থাকে যে সরস্বতী পুজোর আগেরদিন বা তার আগেরদিন পুজোর প্রস্তুতি থাকে, ওরা নিজেরাও অংশগ্রহণ করে। তাই ভেবে নিয়েছে যে পুজোর আগে হয়ত ভাল ক্লাস হবে না। তাই উপস্থিতির হার হয়ত কম। তবে আশা করছি পুজোর পর আগামী সোমবার থেকে হয়ত ছাত্রছাত্রীদের ভিড় উপচে পড়বে।’
প্রধান শিক্ষকের মতে, সদ্য সরকারি ঘোষণা হয়েছে যে বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস শুরু হবে। ফলে তাদের জানাতে একটু সময় লাগছে ছাত্রছাত্রী এবং অবিভাবকদের একাংশকে। সেটাও উপস্থিতির হার কম হওয়ার একটা কারণ হতে পারে। অন্যদিকে স্কুলের শিক্ষক গৌতম চৌধুরির বক্তব্য, ‘আসলে এতদিন তো ওরা বাড়িতেই বসেছিল, ফলে একটা অভ্যাসের ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ফলে নিয়মিতভাবে ওদের স্কুলে আসতে একটু সময় লাগবে। আজ আবহাওয়াও অনেকটা খারাপ ছিল, তার উপর করোনা পরিস্থিতিতেও অনেকেই হয়ত আশঙ্কিত। আবার হয়ত সর্দিকাশিতে ভুগতে হবে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আজকে হয়ত উপস্থিতির এই ছবিটা এমন হত না। এটা আজকের দিনের জন্যই আমি বলব। তবে বাকি স্বাভাবিক উপস্থিতির হার বাড়তে আরও দুতিনদিন সময় লাগবে, ওদের অভ্যাসের কারণে। তার উপর সরস্বতী পুজোও একটা কারণ হতে পারে।’
অন্যদিকে ওই স্কুলেরই এক ছাত্রী অদৃজা দাসের কথায়, ‘আজকে অনেকদিন পর তো স্কুল খুলল। তবে স্কুলে সেরকম কেউ আসেনি। আমাদের ক্লাসে ১১০ জনের মতো ছাত্রছাত্রী রয়েছে। সাইন্সের আপাতত চারজনই আমরা এসেছি, আর্টসেরও হয়ত কিছুজন এসেছে। তবে উপস্থিতির হার বলতে গেলে একদমই নেই। আমরা এটা আশা করিনি, ভেবেছিলাম মোটামুটি ৩০জন অন্তত আসবে। কী করে যে ক্লাস করাবেন স্যারেরা জানি না। তবে করোনা তো এখনও যায়নি বাড়ির লোক হয়ত তাই বেরতে দিচ্ছে না, তবে স্কুল খোলায় আমরা খুশি।’ আরেক ছাত্রী দেবস্মিতা দাসের কথায়, ‘আমাদের একদাশ শ্রেণির সাইন্স বিভাগে একদমই ছাত্রছাত্রী আসেনি। আমাদের ক্লাসে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৭১ জন, তার মধ্যে মাত্র চারজন এসেছে। আমাদের সবার মধ্যে একটা উত্তেজনা ছিল যে কখন স্কুল খুলবে, কবে স্কুল যাব। কিন্তু স্কুলে এসে সেটা দেখতেই পাচ্ছি না। অনেকেই বলছে স্কুলে পরে যাব আগে টিউশানি যেতে হবে। তবে আশা করছি দু একদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ আপাতত সকলেই আশায় বুক বাঁধছেন স্কুল যখন খুলেছে, ধীরে ধীরে সবকিছুই আবার আগের মতোই হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন: School Reopening: রাজ্যে ফের খুলল স্কুল, অক্ষরে অক্ষরে মানা হচ্ছে কোভিড বিধি