দুয়ারে সরকার শিবিরে মিলছে ‘অমৃতসমান’ মুড়ি-ঘুগনি!

Duare Sarkar: স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আসানসোল পৌরনিগমের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুয়ারে সরকার শিবিরে এদিন প্রায় আট থেকে দশ হাজার মানুষের সমাগম হয়। ভোররাত থেকে মিঠানি কোলিয়ারি, ধেমোমেন, পাটমোহনা, বেজডি-সহ একাধিক গ্রামের মানুষেরা শিবিরে এসে ভিড় করেন।

দুয়ারে সরকার শিবিরে মিলছে 'অমৃতসমান' মুড়ি-ঘুগনি!
মুড়ি-ঘুগনি বিতরণ, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 25, 2021 | 2:58 PM

পশ্চিম বর্ধমান: ‘অতিথি দেব ভবঃ’। সংস্কৃতের এই শ্লোকই যেন মাথায় নিয়ে চলছে দুয়ারে সরকারের শিবির (Duare Sarkar)। সেখানে লক্ষ্মী ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধার পাশাপাশি লাইন পড়েছে মুড়ি-ঘুগনির জন্য়। বুধবার কুলটির মিঠানিতে দেখা গেল এমনই অভিনব দৃশ্য। আয়োজক এলাকারই একটি স্থানীয় ক্লাব।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আসানসোল পৌরনিগমের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুয়ারে সরকার শিবিরে এদিন প্রায় আট থেকে দশ হাজার মানুষের সমাগম হয়। ভোররাত থেকে মিঠানি কোলিয়ারি, ধেমোমেন, পাটমোহনা, বেজডি-সহ একাধিক গ্রামের মানুষেরা শিবিরে এসে ভিড় করেন। কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। কিন্তু, খিদে পেলেও লাইন ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই। তাই স্থানীয় নবারুণ ক্লাবের সহায়তায় গ্রামের মানুষই এগিয়ে আসেন সমস্যা সমাধানে। শিবিরে আসা সকল গ্রাহকের হাতে হাতে দেওয়া হয় মুড়ি-ঘুগনি। ক্লাবের সদস্যরাই সকলের হাতে খাবার তুলে দেন।

কিন্তু, দুয়ারে সরকারের শিবিরে এর আগে একাধিকবার বিভিন্ন দুর্নীতির ছবি এসেছে। এমনকী, শিবিরে সরকারি আধিকারিক ছাড়া আর কারও উপস্থিত থাকার অনুমতি নেই। খাওয়াদাওয়া বা ভোজের ব্যবস্থা সেখানে দূরস্ত। তাহলে, কেন এইভাবে ক্লাবের সদস্যরা খাবার এগিয়ে দিলেন? উত্তরে, নবারুণ ক্লাবের এক সদস্য স্পষ্টই বলেন, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। আমাদের ক্লাবও কোনও বিশেষ দলের অনুদানে নির্ভরশীল নয়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ দুয়ারে সরকারের শিবিরে এসেছেন। সারাদিনের ব্যাপার। তাই আমরা খুব স্বল্প আয়োজন করেছি। যাতে, যাঁরা শিবিরে আসছেন তাঁদের কোনও কষ্ট না হয়।” ওই ক্লাবেরই অন্য এক সদস্য জানিয়েছেন, “আমরা একা নই। আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা গ্রাম। গ্রামবাসীরাও এই মুড়ি-ঘুগনির স্বল্প আয়োজন সফল করতে সাহায্য করেছেন। আমরা তো পাত পেড়ে ভোজ করাচ্ছি না। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, সাধ্য়মতো ব্যবস্থা করেছি।”

এদিন, দুয়ারে সরকারের শিবিরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ফর্ম নিতে আসা এক মহিলা বলেন, “সেই ভোররাত থেকে লাইন দিয়েছি। ফর্মের জন্য। খাওয়াদাওয়া নেই। কখন বাড়ি যাব, তাও জানি না। সেখানে এই ছেলেরা যা করল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খিদে পেটে পুরো অমৃত। এরকম আতিথেয়তা কোথায় দেখা যায়! এতক্ষণ না খেয়ে থাকলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। ওই মুড়ি-ঘুগনির জন্যই এ যাত্রা বেঁচে গেলাম।”

গত ১৬ অগস্ট থেকে রাজ্যে চালু হয়েছে দুয়ারে সরকার প্রকল্প। কিন্তু, চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্য়েই নানা দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছে। কোথাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি, কোথাও বা শিবিরেই মাংস-ভাতে এলাহী ভোজের ব্যবস্থা। প্রতিবারই, দুর্নীতির নেপথ্যে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। অথচ, সরকারের তরফ থেকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুয়ারে সরকার প্রকল্পে কোনওরকম দলীয় কর্মসূচি পালন করা চলবে না। সেখানে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে, কোনও দলের সঙ্গে হাত না মিলিয়ে এইভাবে শিবিরে ভোজের আয়োজনকে কার্যত সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে তা কতটা নিয়মসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। যদিও, এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আরও পড়ুন: ‘দাড়ি কাটব না টুপি খুলব?’, সিপিএমের ‘স্বীকারোক্তি’-তে প্রশ্ন আইএসএফের