Coal Scam: কয়লাকাণ্ডে হাজিরা চার লালা ‘ঘনিষ্ঠ’র, আরও প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে চলছে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ
CBI: গরু ও কয়লা পাচারের অন্য একটি মামলায় ফেরার থাকা বিনয় মিশ্রর ভাই বিকাশ মিশ্র বর্তমানে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে কলকাতার এসএসকেএমে ভর্তি রয়েছেন।
আসানসোল: কয়লাকাণ্ডে জামিনে মুক্ত থাকা চারজন হাজিরা দিলেন আসানসোল সিবিআই আদালতে। কয়লাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালার সহযোগী হিসাবে সিবিআইয়ের খাতায় নাম রয়েছে জয়দেব মণ্ডল, নীরদবরণ মণ্ডল, গুরুপদ মাজি ও নারায়ণ নন্দের। এই চারজনকেই গ্রেফতার করে সিবিআই। পরে তাঁরা জামিন পান। শনিবার সিবিআই আদালতে তাঁরা হাজিরা দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি।
গ্রেফতার হওয়ার ৫৬ দিন পর জামিন পান জয়দেব মণ্ডল, নীরদবরণ মণ্ডল, গুরুপদ মাজি ও নারায়ণ নন্দ। জামিনের মূল শর্তই ছিল নির্দিষ্ট দিনে হাজিরা দিতে হবে আদালতে। সেইমতো শনিবার আদালতে তাঁরা হাজির হন। এদিন এই চারজনের হয়ে আসানসোল সিবিআই আদালতে তাঁদের দুই আইনজীবী শেখর কুণ্ডু ও সোমনাথ চট্টরাজ সওয়াল করেন। তাঁরা বলেন, চারজনের জামিন স্থায়ীভাবে দেওয়া হোক বা বরাবরের জন্য বহাল থাকুক। অন্যদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার এই সওয়ালের বিরোধিতা করেন।
দুই পক্ষের সওয়াল-জবাবের শেষে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী চারজনের জামিন বহাল রাখেন। পাশাপাশি আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। এই দিন ফের চারজনকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। গ্রেফতার হওয়ার ৫৬ দিন পরে জয়দেব মণ্ডলরা ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছিলেন। জামিন দেওয়ায় শর্ত হিসাবে সেই সময় বিচারক বলেছিলেন, চারজন বিদেশে যেতে পারবেন না এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি তাঁদের সিবিআইয়ের কাছে পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে এবং অফিসাররা যখন ডাকবেন তখন হাজির হতে হবে।
২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কলকাতার নিজাম প্যালেসে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল এই চারজনকে। ইতিমধ্যেই সিবিআই আদালতে বিচারকের কাছে জানিয়েছে, বেআইনি কয়লা কারবারের মূল কাণ্ড লালার হাত ধরেই চলত। সেই কারবার থেকে লালা ১৩৭৪ কোটি টাকার সম্পত্তি হয়েছে। একইসঙ্গে সিবিআই আদালতকে জানায়, লালার সবরকম কাজে সহযোগিতা করতেন জয়দেব মণ্ডল, নীরদবরণ মণ্ডল, গুরুপদ মাজি ও নারায়ণ নন্দ।
একইসঙ্গে সিবিআইয়ের বক্তব্য, বার বার জেরাতেও এই চারজন তথ্য গোপন করছেন। তদন্তে ঠিক মতো সহযোগিতাও করছেন না। সে কারণেই গ্রেফতার করতে হয় তাঁদের। একইসঙ্গে সিবিআইয়ের দাবি, এই গোটা ঘটনার পিছনে বড় ষড়যন্ত্র লুকিয়ে। অনেক প্রভাবশালী নাম রয়েছে কয়লাকাণ্ডে। তাঁদের বিরুদ্ধেও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে। সঠিক সময়ে আদালতের হাতে তা তুলে দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই চারজনই খুব প্রভাবশালী। সাক্ষীদের ভয় দেখানো কিংবা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার মতো ক্ষমতা তাঁদের আছে বলেই সিবিআই মনে করছে। যদিও সিবিআইয়ের সমস্ত বক্তব্য শোনার পরও বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে আদালত চারজনের জামিন মঞ্জুর করে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সিবিআই অনুপ মাজি, ইসিএলের দুই জিএম ও ইসিএলের তিন নিরাপত্তা আধিকারিকের বিরুদ্ধে অবৈধ খনন, চুরি ও কয়লার চোরাচালানের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। সিবিআই পরে এই মামলায় সারাদেশে প্রায় ৩০টি জায়গায় তল্লাশি চালায়। ইতিমধ্যেই লালার ১৭৫.৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট করেছে সিবিআই। অন্যদিকে জয়দেব মণ্ডল, নীরদবরণ মণ্ডল, গুরুপদ মাজি ও নারায়ণ নন্দকে গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে কলকাতায় জেরা করে তদন্তকারীরা। কিন্তু জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে, গরু ও কয়লা পাচারের অন্য একটি মামলায় ফেরার থাকা বিনয় মিশ্রর ভাই বিকাশ মিশ্র বর্তমানে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে কলকাতার এসএসকেএমে ভর্তি রয়েছেন। শনিবার এই মামলাটি আসানসোলে সিবিআই আদালতে উঠে। আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জানান, অসুস্থতার কারণে বিকাশ আদালতে সশরীরে হাজির না হওয়ায় মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৯ জানুয়ারি হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী।