Asansol: মাধ্যমিকে ৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী কম! স্কুলছুটদের বিদ্যালয়মুখী করতে নতুন কর্মসূচি দুয়ারে শিক্ষক

Asansol: এ প্রধানতম কারণ কী? তা জানতে রাজ্য সরকার ও স্কুল শিক্ষা দফতর সমীক্ষা শুরু করেছে।

Asansol: মাধ্যমিকে ৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী কম! স্কুলছুটদের বিদ্যালয়মুখী করতে নতুন কর্মসূচি দুয়ারে শিক্ষক
দুয়ারে শিক্ষক (নিজস্ব ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 14, 2023 | 7:54 PM

আসানসোল: হাতে গোনা মাত্র কয়েকদিন। তারপরই মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু সরকারি সমীক্ষায় এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক ধাক্কায় চার লক্ষ কমে গিয়েছে। গতবছর যেখানে ছিল ১১ লক্ষের মত, এবছর সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষের কাছাকাছি। এ প্রধানতম কারণ কী? তা জানতে রাজ্য সরকার ও স্কুল শিক্ষা দফতর সমীক্ষা শুরু করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব কারণগুলি প্রাথমিকভাবে সামনে আসছে সেগুলি হল, শিক্ষা ক্ষেত্রে করোনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল আসার প্রতি অনীহা, স্কুল ছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম। একইসঙ্গে এখন থেকেই কঠোর হাতে এই সমস্যার সমাধান না করলে আগামী দিনে এর ফল আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা।

শিক্ষা ক্ষেত্রে এই কঠিন সমস্যা সমাধানে আবারও অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেন ‘রাস্তার মাস্টার’ দীপ নারায়ণ নায়েক। তিনি ও প্রশাসনিক কর্তারা ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করার উদ্দেশ্যে পরিহারপুর, বজন্তীপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণগুলি সরজমিনে খতিয়ে দেখেন। একইসঙ্গে তাঁদেরকে পুষ্পস্তবক ও পেন উপহার দিয়ে বিদ্যালয় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। কথা বলেন বিদ্যালয় দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকা ছাত্র-ছাত্রী, তাঁদের অভিভাবক, ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে ছাত্র-ছাত্রীরা কীভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে, লেখাপড়ার প্রতি ভীতি সঞ্চার হয় বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেন। ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের কাউন্সিলিং করেন। প্রাথমিকভাবে যেসব কারণগুলি সামনে উঠে আসে সেগুলি হল পড়াশোনার প্রতি ভীতি, অনীহা, অসুস্থতা, যথাযথ শিক্ষা সামগ্রীর অভাব, বাল্যবিবাহ।

উল্লেখ্য, এই কর্মসূচিতে গত ২০ দিন আগে রাস্তার মাস্টার, চাইল্ড লাইন, পুলিশ ও প্রশাসনের মিলিত সহযোগিতায় একজন নবম শ্রেণীর নাবালিকা ছাত্রীর বিবাহরোধ করেছেন। কিন্তু তারপর থেকে সে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় এদিন তার বাড়িও যাওয়া হয়। তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে কাউন্সেলিং করা হয়। রাস্তার মাস্টার দীপ নারায়ণ নায়েক বলেন, “এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ কমে গেছে এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে, মূলত ছাত্র ছাত্রীদের বিদ্যালয় মুখী করার লক্ষ্যে, স্কুলছুট কমান, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্যই এই ‘দুয়ারে মাস্টার’ কর্মসূচি। যা আগামী দিনে একইভাবে বিভিন্ন গ্রামগুলিতে চলতে থাকবে।” তিনি আরও জানান, “যারা দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে না যাওয়ার কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে, ভীতি সঞ্চার হয়েছে তাদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করানো হবে। যাদের শিক্ষা সামগ্রিক অভাব রয়েছে তাদের জন্য শিক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করানো হবে। সবশেষে তিনি তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকা শিক্ষক অসীম মাজি, শিক্ষক পিন্টু মণ্ডল, শিক্ষক সঞ্জয় মাজি, উজ্জ্বল ঘোষ, স্বপন ওরাও, জামুরিয়া থানা ও শ্রীপুর ফাঁড়ির পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

জামুরিয়ার শ্রীপুর গার্লস হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা প্রনিতা সাহা ও সহ শিক্ষিকা পারমিতা চট্টোপাধ্যায় এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করেন বলে প্রশাসনিক কর্তারা জানান। এদিন রাস্তার মাস্টারের ‘দুয়ারে শিক্ষক’ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা সাব ইন্সপেক্টর পুলিশ অভিজিৎ সিং রায় বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে পুলিশ পাশে দাঁড়াতে পেরেছে তাতে ভাল লাগছে।”

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মাসুমা খাতুনের মা হাসিনা বিবি বলেন, ‘শিক্ষকরা বাড়িতে আমাদের ছেলেমেয়েদের খোঁজখবর নিতে আসছেন। এটা দেখে আমার খুব ভাল লাগছে।’ তিনি বলেন এবার থেকে তিনি তার মেয়েকে প্রতিদিন স্কুলে পাঠাবেন। নবম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা খাতুনের মা তহমিনা বিবি জানান তিনিও শিক্ষকের এই উদ্যোগে খুশি। এবার থেকে তিনিও তার মেয়েকে প্রতিদিন স্কুলে পাঠাবেন। আরেক অভিভাবক হরে কৃষ্ণ মন্ডল রাস্তার মাস্টারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।