আমাকে টাইট দিতেই দু’টো যুব সংগঠন করা হয়েছিল: শুভেন্দু

গেরুয়া বেলুন আর ফুলে সাজানো গাড়ি, সামনে বাজছে ধামসা-মাদলের বোল, উড্ডীন বিজেপির পতাকা। এসবের মাঝখান থেকেই হাত নেড়ে রাস্তার দু'ধারের মানুষকে অভিবাদন জানিয়েছেন সদ্য তৃণমূল ত্যাগী শুভেন্দু।

আমাকে টাইট দিতেই দু'টো যুব সংগঠন করা হয়েছিল: শুভেন্দু
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Dec 27, 2020 | 8:16 PM

মেদিনীপুর: রাজনীতির উত্তাপে বছরের শেষ রবিবারের দুপুরটা বেশ হাই ভোল্টেজই গেল। একদিকে ডায়মন্ড হারবার থেকে নারদ-সারদা প্রসঙ্গ তুলে যখন নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে বিঁধছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতা শুভেন্দুও তখন মেদিনীপুরের দাঁতন থেকে আবার স্লোগান তুলেছেন ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’। এদিনও শুভেন্দুর গলায় আর্তি, ‘মোদীজীর হাতে বাংলা তুলে দিতে না পারলে রাজ্যটাকে বাঁচানো যাবে না।’ সঙ্গে আগাম জানিয়ে দিলেন, একুশের ভোট হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে। রাজ্য পুলিস কিছুই করবে না।

আরও পড়ুন: ক্রিসমাস ক্যারলের ছন্দে বিজেপিকে বিঁধে টুইট মহুয়ার

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এই প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুরে সভা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। দাঁতনে প্রথমে রোড শো, তারপর সরাইবাজারে জনসভা। অবিভক্ত মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রর রবিবাসরীয় এই কর্মসূচি ঘিরে মানুষের ভিড় ছিল নজরকাড়া। রাজনৈতিক মহলের নজরও ছিল স্থির। জেলা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কী বার্তা দেন তিনি সকলেই সজাগ ছিল। যদিও তুলনামূলকভাবে এদিন ততটা জমল না শুভেন্দু-পর্ব। তৃণমূলকে ‘ছিন্নমূল’ বলে কটাক্ষ, ‘সিপিএমের ছেড়ে যাওয়া চটি গলিয়ে সাড়ে ৯ বছর সরকার চালানো’, ‘কাটমানি, গরু পাচার’, ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে বিষোদগার ছাড়া তেমন কোনও কড়া বার্তাই দিলেন না শুভেন্দু।

বরং ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন অনেক বেশি আক্রমনাত্মক ছিলেন। শুভেন্দু যে প্রতি মঞ্চে ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’-এর স্লোগান দেন, এদিন তারই জবাব দিয়ে গেলেন অভিষেক। নাম না করে যেভাবে শুভেন্দুকে তুলোধনা করলেন, লাইমলাইটটা তাঁর দিকেই ঘুরে গেল। ‘তোলাবাজ’ প্রসঙ্গে অভিষেকের শাণিত বাক্যবাণ “নারদায় তো খবরের কাগজ মুড়ে আপনাকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। তাহলে আমি কীভাবে তোলাবাজ হলাম? সারদায় সিবিআইয়ের খাতায় তো আপনার নাম রয়েছে, তাহলে আমি কীভাবে তোলাবাজ হলাম? আমি সারদায়ও নেই, নারদাতেও নেই। পিঠ বাঁচাতে আপনি মেরুদণ্ড বেঁচে বিজেপিতে গেলেন, আর আমি হয়ে গেলাম তোলাবাজ?”

আরও পড়ুন: শিল্প না হলে, চাই জমি ফেরত’, মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফরের আগেই পড়ল কৃষকদের পোস্টার

তবে এদিন কিছু ‘ক্ষোভের’ বহিঃপ্রকাশ শুভেন্দুর মুখে শোনা গেল। যেমন তিনি অভিযোগ তোলেন, দক্ষিণ কলকাতার লোক ছাড়া তৃণমূলে কেউ মন্ত্রী হন না। জেলার লোক বলে গুরুত্ব কম দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “এই লড়াই গ্রামের লড়াই। জেলার লড়াই। উত্তর কলকাতা পুরনো কলকাতাকে বলব সঙ্গ দিন। আপনার জেলা বাটখারা মন্ত্রী পেয়েছে। ৫০০ বছরের পুরনো হাওড়া সমবায় মন্ত্রী পেয়েছে, পরে আবার বনমন্ত্রী। দক্ষিণ কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী। কলকাতার তিন চারটে লোকের হাতে সব মন্ত্রী। একজনেরই পোস্ট। বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট।” একইসঙ্গে অভিযোগ তোলেন, তাঁকে ‘টাইট’ দিতেই নাকি তৃণমূলে দু’টি যুব সংগঠন করা হয়। এখানেও ‘ভাইপো’ তোষণের অভিযোগ তোলেন তিনি।

আরও একটি বিষয় নিয়ে এদিন ‘মুখ খোলেন’ শুভেন্দু। জেহাদিদের বুথের সামনে বসিয়ে নাকি ডায়মন্ড হারবারে ভোট হয়েছিল। শুভেন্দু বলেন, এই আসন কীভাবে জেতা হয়েছে তা বাংলার মানুষ জানেন। ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটেই তৃণমূল দলটা উঠে গিয়েছিল। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ভোট আসলে বলা হয় শঙ্করপুর বন্দর হবে। কিন্তু বন্দর করতে গেলে তো জমি লাগবে। যা ল্যান্ড পলিসি তাতে কিছুই হবে না। স্কুল পড়ুয়াদের সাইকেল প্রদানও আসলে তৃণমূলের ’ভাতিজা ভেট’ বলে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের আশ্বস্ত করে শুভেন্দু বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে চাকরি দেবে। ভাল বেতন দেবে। যাতে ভাল বাড়ির মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হতে পারে। গুছিয়ে সংসার করতে পারে।

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের ‘সবটা খারাপ’ বলে বারবার সরব হচ্ছেন শুভেন্দু। পাল্টা তৃণমূল নেতৃত্বও বলছে, এই খারাপগুলো এতদিন কেন চেপে রেখেছিলেন শুভেন্দু। এদিন তারও উত্তর দেন তিনি। বলেন, “যখন বলার তখনি বলব। আমরা বিদ্যাসাগরের জেলার লোক। মাথায় কিছুটা বুদ্ধি তো আছেই। এখন তাড়ানো যাবে তাই এখন বলব।”