Paschim Medinipur : ‘শিক্ষক নিয়োগের থেকে বড় দুর্নীতি’, চন্দ্রকোনায় মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নিয়ে সরব বিরোধীরা

Paschim Medinipur : অভিযোগ, পুর এলাকার একাধিক জায়গায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি ভাবে অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে পুর এলাকায় জলাশয় ভরাটের কাজ। এই নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করেছে বিজেপি ও সিপিআইএম।

Paschim Medinipur : 'শিক্ষক নিয়োগের থেকে বড় দুর্নীতি', চন্দ্রকোনায় মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নিয়ে সরব বিরোধীরা
অভিযোগ, বেআইনি ভাবে চলছে পুকুর ভরাট
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 17, 2022 | 1:03 PM

চন্দ্রকোনা : কোথাও বেআইনি ভাবে জলাশয় ভরাট। কোথাও আবার ভুয়ো নথি দেখিয়ে কিংবা বিনা নথিতেই বেআইনি ভাবে মাটি কেটে তা অন্যত্র পাচার। এমনই অভিযোগে রাজনৈতিক চাপান-উতর শুরু হয়েছে চন্দ্রকোনায়। অভিযোগ, নম্বর প্লেটহীন মাটি বোঝাই ট্রাক্টরেরও দৌরাত্ম্য বেড়েছে। মাটি মাফিয়াদের (Sand Mafia) এই দৌরাত্ম্যের অভিযোগ শুধু চন্দ্রকোনা শহরই নয়, গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও এর দাপট বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধীদের।

সম্প্রতি চন্দ্রকোনা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড লালসাগরে একটি জলাশয় ভরাটের অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে তা বন্ধ করে দেয় চন্দ্রকোনা পুরসভা। অভিযোগ, ওই জলাশয় ভরাটের জন্য বাইরে থেকে মাটি থেকে আনা হচ্ছিল। যার সরকারি কোনও নথি ছিল না। এমনকি পুরসভার তরফে জানানো হয়, তাদের কাছ থেকে কোনও NOC ছাড়াই চলছিল মাটি ফেলে জলাশয় ভরাটের কাজ। প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে ওই জায়গার মালিককে তলব করেছে চন্দ্রকোনা পুরসভা।

শুধু পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড লালসাগর এলাকাই নয়। অভিযোগ, পুর এলাকার একাধিক জায়গায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি ভাবে অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে পুর এলাকায় জলাশয় ভরাটের কাজ। জলাশয় ভরাট তো রয়েছে, তার সঙ্গে চন্দ্রকোনায় বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি খাস জায়গায় রয়্যালটি না কেটে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে মাটি কাটা। এবং মাটি কাটার পর নম্বর প্লেটহীন একাধিক ট্রাক্টরে বোঝাই করে চন্দ্রকোনার বিভিন্ন জায়গায় পাচার ও বিক্রি চলছে। এক্ষেত্রে সরকারি অনুমতি না নেওয়ায় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির মাটি মাফিয়ারা এর সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের দাবি, সবাই সবকিছু জানেন। কিন্তু তাঁরা নিশ্চুপ। মাটি মাফিয়াদের সঙ্গে প্রশাসন বা শাসকদলের ঘনিষ্ঠতা না থাকলে এসব সম্ভব নয়। মাটি বোঝাই গাড়ির দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে চন্দ্রকোনাবাসীকে।

এই বিষয়ে চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিক সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “মাটি কাটা বা মাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির অনুমতি সাধারণত এসডিএলআরও অর্থাৎ মহকুমা ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে দেওয়া হয়। ব্লকে কারা অনুমতি পাচ্ছে আমরা জানতে পারি। কিন্তু অনুমতির বাইরে কোথাও কোনও অভিযোগ আসলে তা দ্রুত বন্ধ করে পদক্ষেপ করা হয়। এই ধরনের কোনও অভিযোগ আসলে অবশ্যই আগামী দিনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে, চন্দ্রকোনা পুরসভার চেয়ারম্যান প্রতিমা পাত্র বলছেন, “পুর এলাকায় জলাশয় বা পুকুর ভরাট নিয়ে কোনও খবর আসলে তা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি এমন কিছু অভিযোগ পেয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে। এবিষয়ে পুরসভা কড়া মনোভাব নিয়ে চলছে।”

পুরসভার চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতর তৈরি হয়েছে। বিজেপি এবং সিপিআইএম একযোগে নিশানা করেছে শাসক তৃণমূলকে। বিজেপির চন্দ্রকোনা দক্ষিণ মণ্ডলের মণ্ডল সভাপতি বিপ্লব মাল বলেন, “শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির চেয়েও বড় দুর্নীতি জলাশয় ভরাট। অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। পুলিশের নাকের ডগায় সব হচ্ছে। কিন্তু, তারা চুপ করে রয়েছে। মানুষ সব দেখছে। তারা ভোটের সময় এর ঠিক জবাব দেবে।” স্থানীয় সিপিআইএম নেতা গুরুপদ দত্তও বলেন, “অবৈধ ভাবে জলাশয় ভরাট হচ্ছে। মাটি কাটা হচ্ছে। আর প্রশাসনকে জানালে তাঁদের যুক্তি, বিষয়টা জানেন না। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবেন।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, জনগণের করের টাকায় যেসব আধিকারিকরা বেতন পান, তাঁরা নিজে থেকে কেনও কোনও ব্যবস্থা নেবেন না ?

মাটি মাফিয়াদের যে দৌরাত্ম্য বাড়ছে, তা স্বীকার করে নিলেন চন্দ্রকোনা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ সাঁতরা। একইসঙ্গে তিনি যুক্তি দেন, “যেখান থেকে এরকম খবর পাওয়া গেছে আমরা তা দ্রুত বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিরোধীদেরই কিছু লোক এসব করছে।”

অন্যদিকে, ক্যামেরার সামনে মুখ না খুললেও মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, ২০২০ সালে ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে কাটা রয়্যালটি রসিদ দেখিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বসন্তপুর এলাকায় সরকারি খাস জায়গা থেকে মাটি কেটেছেন।