‘বাংলার গর্ব মমতা’ বনাম ‘বাংলার গর্ব মনীষী’

ঘোলাজলে বাংলার আবেগকে ধরতে বিজেপিও কোনও ত্রুটি রাখছে না। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির উপস্থাপনা করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, একুশের ভোটে বাংলার সংস্কৃতিকে কোন পর্যায় তুলে ধরতে চায় বিজেপি।

'বাংলার গর্ব মমতা' বনাম 'বাংলার গর্ব মনীষী'
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jan 09, 2021 | 6:08 PM

পূর্ব বর্ধমান: দিলীপ ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগর। কোথাও অরবিন্দ, রামমোহন, নেতাজী। বাদ পড়েননি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসও। করজোড়ে নমস্কাররত মমতার মুষড়ে পড়া কাটআউটের পাশে আবার দাঁড়িয়ে বঙ্কিমও। সবার মাথায় লেখা ‘বাংলার গর্ব’। বর্ধমান শহরের জি টি রোড ধরে যতদূর যাওয়া যায় গেরুয়া পতাকা, ফেস্টুন, দিলীপ- মোদী- নাড্ডাদের ঢাউস কাট আউটের সঙ্গে এনারাও আছেন। ডানে-বামে না থাকলেও ভোটের ময়দানে তাঁদের উপস্থিতি থাকাটাই এখন দস্তুর। একুশের নির্বাচনে এঁরাই নাকি নির্ণায়ক শক্তি!

বাংলার মনীষীদের হাতিয়ার করেই ভোটের ময়দানে নেমেছে বিজেপি। তবে, শনিবারে নাড্ডার জনসভায় মনীষীদের কাট-আউটে যে ‘শব্দবন্ধ’ ব্যবহার হয়েছে, তা অত্যন্ত অর্থবহ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ‘বাংলার গর্ব মমতা’ নামে তৃণমূল যে কর্মসূচি চালু করে সেখানে মমতাকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরা হয়। তারই পাল্টা মনীষীদের আধার করে এধরনের প্রচারে নেমেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতাদের দাবি, প্রকৃত বাংলার গর্ব তো এ সব মনীষীরাই।

নিজস্ব চিত্র

বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ তকমায় ক্রমাগত নিশানা করছে রাজ্যের শাসক দল। এই বহিরাগত তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা, সাঁওতাল শিকারিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন, রবীন্দ্রনাথের ভুল জন্মস্থান বলার মতো প্রসঙ্গকে তুলে ধরছে ঘাসফুল শিবির। সূত্রে খবর, আগামী দিনে ‘বহিরাগত’ তত্ত্বে আরও সুর চড়াতে পারে তৃণমূল। শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে বাংলার সংস্কৃতি রক্ষার সংকল্প নিয়ে নির্বাচনের লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। অর্থাৎ একদিকে বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ বলে ক্রমাগত নিশানা, অন্যদিকে বাংলার সংস্কৃতি-কৃষ্টিতে মমতাকে মিশিয়ে দেওয়ার পথেই হাঁটতে চলেছে কালীঘাট।

নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন- মোদীর নেতাজি কমিটিতে মমতা, বুদ্ধদেব, শুভেন্দু, সৌরভ

এই পরিস্থিতিতে ঘোলাজলে বাংলার আবেগকে ধরতে বিজেপিও কোনও ত্রুটি রাখছে না। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির উপস্থাপনা করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, একুশের ভোটে বাংলার সংস্কৃতিকে কোন পর্যায় তুলে ধরতে চায় বিজেপি। বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা দিবস নিয়ে গেরুয়া শিবিরে এক প্রস্থ উন্মাদনা দেখা গিয়েছে। সামনেই ১২ জানুয়ারি, বিবেকানন্দের জন্মদিন। এ দিন আরও একবার অমিত শাহের আসার কথা বাংলায়। সূত্রের খবর, এই দিনটি বিজেপি কীভাবে উদযাপন করবে তার রোডম্যাপও তৈরি করে ফেলেছে। এসব বিষয়ে হাতগুটিয়ে বসে নেই রাজ্যের শাসকদলও। আবার তারপরই আসছে ২৩ জানুয়ারি, নেতাজীর জন্মদিন। বাংলার মানুষ ভাবছে, কী হয়, কী হয়…