বন্ধ খামে মিষ্টিবিলাস, ডাকটিকিটে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা

India Post: ডাক বিভাগের এই উদ্যোগে খুশি বর্ধমান সীতাভোগ মিহিদানা ট্রেডাস ওয়েলফেয়ার এস‍্যোসিয়েশন।

বন্ধ খামে মিষ্টিবিলাস, ডাকটিকিটে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 28, 2021 | 12:54 AM

পূর্ব বর্ধমান: ভারতবিখ্যাত শতাব্দী পুরনো বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা এ বার পৌঁছবে ঘরে ঘরে। সৌজন্যে ডাক বিভাগের নতুন বিশেষ ডাকটিকিট। দুই মিষ্টির জনপ্রিয়তা বাড়াতেই কেন্দ্রের তরফে এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন ডাক বিভাগের (India Post) শীর্ষ আধিকারিকেরা। শুক্রবার, বর্ধমান মুখ্য় ডাকঘরে একটি অনুষ্ঠানে সীতাভোগ-মিহিদানার ছবি দেওয়া ডাকটিকিটের কভার  উদ্বোধন করা হয়। মিষ্টি ব্যবসায়ীদের দাবি, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে কার্যত সরকার স্বীকৃত হল সীতাভোগ-মিহিদানা।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণবঙ্গ রিজিয়নের পোষ্ট মাষ্টার জেনারেল শশী সালিনি কুজুর, বর্ধমান ডিভিসনের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পোষ্ট সৈয়দ ফরজ হায়দার নবী, বর্ধমান সীতাভোগ মিহিদানা ট্রেডাস ওয়েলফেয়ার এস‍্যোসিয়েশনের সম্পাদক প্রমোধ কুমার সিং। এদিন, শশী সালিনি কুজুর বলেন, “বর্ধমানের এই বিখ‍্যাত মিষ্টির প্রচার এবং জনপ্রিয়তার বাড়ানোর লক্ষ‍্যে ভারতীয় ডাক বিভাগ এই উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে বর্ধমান ছাড়াও অনান‍্য জায়গায় সীতাভোগ মিহিদানার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে।”

ডাক বিভাগের এই উদ্যোগে খুশি বর্ধমান সীতাভোগ মিহিদানা ট্রেডাস ওয়েলফেয়ার এস‍্যোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক প্রমোধ কুমার সিং বলেন,  “এই প্রথম কোন সরকারি সংস্থা এইভাবে সীতাভোগ-মিহিদানাকে প্রচারের আলোয় নিয়ে এল। এরফলে সীতাভোগ মিহিদানার চাহিদা আরও বাড়বে। গোটা দেশেই বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানার নাম ছড়িয়ে যাবে।” বস্তুত, ২০১৭-এর ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ভৌগোলিক স্বীকৃতি (‘জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ বা জিআই) তকমা লাভের পরেও কেটে গিয়েছে আরও পাঁচ বছর। কিন্তু মিষ্টি ব্য়বসায়ীদের দাবি, প্রচারের অভাবে সেভাবে পরিচিত হয়নি সীতাভোগ-মিহিদানা। ডাকবিভাগ সেই খামতিই মেটাতে সক্ষম বলে মনে করছেন তাঁরা।

ইতিহাস বলছে, ১৯০৪ সালে বড়লাট জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন বর্ধমানের জমিদার বিজয়চাঁদ মহতাবকে মহারাজা খেতাব দিতে বর্ধমান ভ্রমণ করেন। কার্জনের বর্ধমান আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজয়চাঁদ মহতাব বর্ধমানের জনৈক মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন।  ভৈরবচন্দ্র নাগ সীতাভোগ ও মিহিদানা তৈরি করেন। কথিত আছে যে কার্জন সীতাভোগ খেয়ে এতটাই প্রীত হয়েছিলেন যে সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি সীতাভোগ পরিবেশন করা বাধ্যতামূলক করেন। সেইদিক থেকে দেখতে গেলে সরকারি স্বীকৃতি আগেই পেয়েছিল সীতাভোগ ও মিহিদানা।

এই ভৈরব নাগের আদিবাড়ি ছিল খণ্ডঘোষের সাঙঘাটগোলা গ্রাম। নাগেরা ছিলেন রাজাদের খাস মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক। রাজাদের আমন্ত্রণে ভৈরবের দাদু শ্রীনাথ নাগ পরিবারের লোকদের নিয়ে সেখান থেকে বর্ধমানে চলে আসেন। শ্রীনাথের ছেলে ক্ষেত্রনাথ নাগ। বর্ধমানের রাজা মহতাব চন্দের আমলে এই ক্ষেত্রনাথ নাগ-ই সীতাভোগ আর মিহিদানা প্রস্তুতির আদিপর্ব সেরেছিলেন। কিন্তু তাঁর সীতাভোগ, মিহিদানা ছিল পান্তুয়া ও বোঁদের আকারে। ভৈরবময়রা বানিয়েছিলেন এই দুটির সূক্ষ্ম রূপ। আজ যে আকারে সীতাভোগ ও মিহিদানা পাওয়া যায়, তা তাঁরই সৃষ্টি। অনেক বছর পর দুর্গাপুরে কংগ্রেসের এক অধিবেশনে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু মিহিদানা খেয়ে বিরাট প্রশংসা করেন। বর্তমানে, মিহিদানার পেটেন্ট আইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রদান করা হয়েছে। কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশ্ব বাংলা শোরুমে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে মিহিদানাকে তুলে ধরা হয়েছে।  আরও পড়ুন: ‘দার্জিলিঙের গর্ব বিক্রি করতে চলেছে বিজেপি সরকার’, টয় ট্রেন নিয়েই পথে অনীত