AWAS Yojana: উপপ্রধানের চারতলা ‘রাজপ্রাসাদ’, পেল্লাই ইমারত হাঁকিয়েও পরিবারের চারজনের নাম ‘আবাস’ তালিকায়

AWAS Yojana: কেশবপুর গ্রামে চারতলা বাড়ি রয়েছে উপপ্রধানের। চোখ ধাঁধানো সেই ইমারত। অথচ, আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর স্ত্রী সীমা শেখ, প্রয়াত বাব শেখ মহসিন, ভাই আলমগীর শেখ এবং অপর এক ভাই আজমগীর শেখের।

AWAS Yojana: উপপ্রধানের চারতলা 'রাজপ্রাসাদ', পেল্লাই ইমারত হাঁকিয়েও পরিবারের চারজনের নাম 'আবাস' তালিকায়
উপপ্রধানের বাড়ি (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 10, 2022 | 10:33 PM

পূর্ব বর্ধমান: বিলাসবহুল চারতলা বাড়ি পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের। কিন্তু সেই উপপ্রধানের স্ত্রীর নাম রয়েছে আবাস যোজনার (Awas Yojana) তালিকায়। শুধু স্ত্রীই নয়, উপপ্রধানের দুই ভাইয়ের নামও রয়েছে সেখানে। নাম রয়েছে প্রয়াত পিতারও। আর এই নিয়েই জোর শোরগোল পূর্ব বর্ধমান জেলার রাজনৈতিক মহলে। খণ্ডঘোষের শাঁকারি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গীর শেখ। এখানে কেশবপুর গ্রামে চারতলা বাড়ি রয়েছে উপপ্রধানের। চোখ ধাঁধানো সেই ইমারত। অথচ, আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর স্ত্রী সীমা শেখ, প্রয়াত বাব শেখ মহসিন, ভাই আলমগীর শেখ এবং অপর এক ভাই আজমগীর শেখের। আর গোল বেঁধেছে এখানেই। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা।

এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা গরিব হলেও আবাস যোজনার বাড়ি পাচ্ছেন না। তাঁদের কারও আছে মাটির বাড়ি। কারও আবার সেটাও ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও তাঁদের নামে আবাস যোজনার বাড়ি আসেনি। এই কেশবপুর গ্রামেই থাকেন ষাটোর্ধ্ব বিধবা ননীহারা মিদ্যা। একাই থাকেন তিনি। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেয়েরা মাঝে মধ্যে যেটুকু সাহায্য করেন, সেই টুকু… আর সম্বল বলতে রয়েছে কয়েকটি ছাগল। এই নিয়ে বহু কষ্টে দিনযাপন চলে বৃদ্ধার। পুরনো একটি বাড়ি… ঘরের বেশিরভাগ অংশই ভাঙা।

আক্ষেপের সুরে ননীহারা দেবী জানালেন, বেশ কয়েকবার আবেদন করেছি। উপপ্রধান বলেছিলেন, ঘর পেয়ে যাব… কিন্তু ঘর পেলাম না। অথচ শুনছি উপপ্রধানের বাড়ির লোকেরাই নাকি চার চারটি ঘর পাচ্ছেন। গ্রাম ঘুরে দেখা গেল ননীহারা দেবীর মত সেরিনা বেগম, ফিরোজা বেগমদের গলাতেও খানিক একই ধরণের আক্ষেপের সুর। শাঁকারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলী খাঁ-এর সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, “আমাকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়নি। আমাকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। উপপ্রধান জাহাঙ্গীর সেখ নিজের খুশি মত সব ঠিক করেছেন। এখানে আমার কোনও ভূমিকাই নেই। এই বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলাম।”

যে উপপ্রধানকে নিয়ে এত চর্চা, যোগাযোগ করা হয়েছিল তাঁর সঙ্গেও। টেলিফোনে জাহাঙ্গীর শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সাফাই, তিনি দলের কাজে ব্যস্ত থাকেন। অফিসে খুব একটা যান না। কে বা কারা এই লিস্ট করেছেন, তাও তাঁর জানা নেই। বিষয়টি নজরে আস মাত্রই নাম বাতিলের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। বলেন, “আমি ধানের ব্যবসা করি। বহু টাকার লেনদেন হয় ব্যবসায়। সরকারকে কত টাকার ট্যাক্স দিই তাও দেখাতে পারি। ২০১৬ সালে যখন সার্ভে হয়েছিল, কে নাম দিয়েছে তা জানিও না। তখন আমাদের একতলা বাড়ি ছিল। এখন এই বাড়িটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। তখন হয়ত আমাদের অবস্থা সত্যিই খারাপ ছিল। তখন হয়ত কেউ দেখে মনে করেছিল বাড়ির প্রয়োজন আছে।”

তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী পাকা বাড়ি থাকলে বা আর্থিক অবস্থা ভাল হলে তিনি আবাস যোজনার বাড়ি পাবেন না। এই ক্ষেত্রে কী ভুল ভ্রান্তি হয়েছে, প্রশাসন তা দেখছি। আর এটি আগেকার তালিকা।”

এই বিষয়ে জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে। চারতলা বাড়ির মালিক অথচ তাঁর নামে আবাস যোজনার বাড়ি আসছে।” প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে বিরোধী শিবিরের তরফে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। খণ্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই সব নামগুলি তালিকা থেকে বাতিল করা হয়েছে।