Madhyamik Exam : MA পাশ ফিরদৌসি অনুপ্রেরণা, বয়সকে জয় করে মাধ্যমিকে বসলেন স্কুলছুট মা-দাদা

Manatosh Podder

Manatosh Podder | Edited By: জয়দীপ দাস

Updated on: Feb 28, 2023 | 9:36 PM

Madhyamik Exam : আয়েশা বেগমের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। তাঁর স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষক।

Madhyamik Exam : MA পাশ ফিরদৌসি অনুপ্রেরণা, বয়সকে জয় করে মাধ্যমিকে বসলেন স্কুলছুট মা-দাদা

Follow us on

বর্ধমান : এমএ পাশ (MA Pass) মেয়ের অনুপ্রেরণায় এবার একসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik Exam 2023) দিচ্ছেন বহু কাল আগে স্কুলছুট হওয়া  মা ও ছেলে। মেয়ে ফিরদৌসী উচ্চশিক্ষিত। কিছুদিন আগেই তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। কিন্তু, তাঁর মা ও দাদা মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি বলে ফিরদৌসীর আক্ষেপের অন্ত ছিল না। তাই লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে নিজের মাকে ও দাদাকে লাগাতার অনুপ্রাণিত করে যায়। সেই অনুপ্রেরণায় উদ্ধুব্ধ হয়ে পুনরায় লেখাপড়া শুরু করেন ফিরদৌসির মা আয়েশা বেগম ও দাদা শেখ পারভেজ আলম। এবার মা ও ছেলে মিলে একসঙ্গেই দিচ্ছেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সফল ভাবে পরীক্ষায় পাশ করার ব্যাপারেও তাঁরা দৃঢ়প্রত্যয়ী। 

আয়েশা বেগমের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। তাঁর স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষক। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই দম্পতির পুত্র পারভেজ আলম ছ’বছর আগে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়েছিলেন। কিন্তু, আর্থিক দুরাবস্থাকে সঙ্গী করে লেখাপড়া চালিয়ে যান পারভেজের বোন ফিরদৌসী খাতুন। ইতিমধ্যেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করে ফেলেছে ফিরদৌসী। করছেন চাকরির চেষ্টা। তিনি জানাচ্ছেন নিজে উচ্চশিক্ষিত হতে পারলেও আইসিডিএস কর্মী মা ও দাদার কম শিক্ষিত হয়ে থাকাটা পীড়া দিত ফিরদৌসীকে। সে কারণেই তাঁদের জ্ঞানের আলোকে ফিরিয়ে আনতে লাগাতার চেষ্টাও চালিয়ে যেতেন। তাঁর চেষ্টাতেই শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে রাজি হন মা-দাদা। ঘাটশিলা সিদ্দিকীয়া সিনিয়ার হাই মাদ্রাসায় ভর্তিও হয়ে যান। শুরু হয়ে যায় মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। স্ত্রী ও ছেলের একসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্তে মেয়ের মতই খুশি ফিরদৌসীর বাবা সাইফুল আলম। 

জেলার মেমারি হাই মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে বসে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন আয়েশা বেগম ও তাঁর ছেলে পারভেজ। আয়েশা জানান, তাঁর শৈশব জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। ছোট বয়স থেকেই তিনি তাঁর বাবাকে কাছে পান নি। মামার বাড়িতেই কষ্টের মধ্যে বড় হন। প্রায় ২৫ বছর আগে সেখানকার স্কুলে  সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার তিন মাস পর থেকে তাঁকে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। তারপর বিয়ে হয়ে গেলে সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ছেলে ও মেয়েকে বড় করে তুলে তাদের লেখাপড়া 

শেখানোর দায়িত্ত্বও তাঁকে কাঁধে নিতে হয়। তারই মধ্যে ২০১০ সাল বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজে যোগ দেন। আয়েশার কথায় ,“সংসার ও আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ সামলেও যে লেখাপড়া করে  মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় এই অনুপ্রেরণা আমার মেয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। মেয়ের অনুপ্রেরণাতেই সংসার সামলে রাতে পড়াশোনা করেছি।” একইভাবে এরপর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ারও ইচ্ছা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়েশা বেগম।

আয়েশার মত তাঁর ছেলে পারভেজ আলমও দাবি করেছেন, তিনি তাঁর বোন ও বাবার অনুপ্রেরণাতেই  আবার পড়াশোনার জীবনে ফিরে এসেছেন। পারভেজ বলেন,“আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। অনটনই ছিল আমাদের পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অবস্থায় শুধুই মনে হত কোন কাজে যোগ দিয়ে আমাকে উপার্জন করতে হবে। নয়তো আমাদের সংসারটা ভেসে যাবে। তাই ছয় বছর আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেই আমি লেখাপড়ায় ইতি টানি। তবে বেশি পড়াশোনা করতে না পারায় একটা আক্ষেপ মনে থেকে গিয়েছিল।”

পরীক্ষা কেন্দ্র মেমারি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তোরাব আলী বলেন ,“প্রকৃত অর্থেই আয়েশা বেগম ও তাঁর ছেলে পারভেজ আলম সমাজে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। মা ও ছেলে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন।”

Latest News Updates

Related Stories
Most Read Stories

Click on your DTH Provider to Add TV9 Bangla