‘তেলেভাজা তো শিল্পই!’ পথ দেখাচ্ছেন বর্ধমানের হিমাংশু

Telebhaja: তাঁর দোকানের ইউএসপি কী? স্বাদ তো রয়েইছে। তবে হিমাংশুর চপের দোকানে ভিড়ের মূল কারণ অন্যো। প্রায় ৩০ বছর ধরে তাঁর দোকানের তেলেভাজার মূল্য স্রেফ ১ টাকা।

'তেলেভাজা তো শিল্পই!' পথ দেখাচ্ছেন বর্ধমানের হিমাংশু
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 18, 2021 | 9:50 PM

পূর্ব বর্ধমান: তেলেভাজাও শিল্প। বছর পাঁচেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে কম শোরগোল হয়নি। এখনও রাজ্যের শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করতে গেলে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য তুলে খোঁচা দেন। কিন্তু সত্যিসত্যিই এই তেলেভাজা শিল্প করেই বেকারদের পথ দেখাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের হিমাংশু।

“আমার পাড়ায় কয়েকটি তেলেভাজার দোকান আমি চিনি, যাঁরা তেলেভাজা বিক্রি করে চার-পাঁচ-দশতলা বাড়ি করেছেন। বড় ব্যবসাও করছেন। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।” বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মমতার কথামতো সাতমহলা বাড়ি না হলেও অতিমারির মধ্যে দারুণ ব্যবসা করছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পাঁচড়ার তেলেভাজা বিক্রেতা হিমাংশু সেন।

জ্বালানির আঁচে জ্বলছে গোটা দেশ। অগ্নিমূল্য বাজার দর। কিন্তু তাতে কী! এই সব নিয়ে বিশেষ মাথাই ঘামাতে চান না পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পাঁচড়ার তেলেভাজা বিক্রেতা হিমাংশু সেন। বরং তিনি মনে করেন এই কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও ‘ষোল আনা’ অর্থাৎ ১ টাকা পিস দরে চপ ও অন্যান্য তেলেভাজা বিক্রি করেও দিব্যি বিত্তশালী হওয়া যায়। শুধু মনে করাই নয়, বাস্তবে সেটা তিনি করেও দেখিয়েছেন। চপ বিক্রেতা হিমাংশুবাবুর এমন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডই এলাকার বেকারদের আত্মনির্ভরতার দিশা দেখাচ্ছে। যা চাক্ষুষ করে অনেকে এখন বলতে শুরু করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চপ শিল্প নিয়ে হক কথাই বলেছিলেন।”

জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় বাড়ি হিমাংশু সেনের। বাড়ির কাছেই রয়েছে তাঁর চপ-তেলেভাজার দোকান। প্রতিদিন দুপুর ৩টেয় খুলে যায় তাঁর দোকান। তারপর থেকেই পরিবারের সবাই মিলে দোকান চালান। দোকানের এক ধারে বসে গ্যাসের উনানে গরম তেলের কড়াইয়ে ফুলুরি, সিঙ্গারা, ভেজিটেবল চপ, আলুর চপ- এই সবকিছুই ভাজেন হিমাংশুবাবু। তাছাড়াও ঘুগনি এবং অল্পস্বল্প করে রসোগোল্লা,পান্তুয়া, ল্যাংচাও থাকে দোকানে। সবই তিনি তৈরি করেন নিজে হাতে। চপ বিক্রিই তাঁর একমাত্র পেশা। আর সেই দোকানের ভিড় এমনই যে দোকান সামলাতে কার্যত হিমশিম খান হিমাংশুবাবুর স্ত্রী বন্দনাদেবী, ছেলে কাশিনাথ ও পুত্রবধূ শম্পা।

তাঁর দোকানের ইউএসপি কী? স্বাদ তো রয়েইছে। তবে হিমাংশুর চপের দোকানে ভিড়ের মূল কারণ অন্য। প্রায় ৩০ বছর ধরে তাঁর দোকানের তেলেভাজার মূল্য স্রেফ ১ টাকা। আর সেই তেলেভাজা বিক্রি করেই হিমাংশুবাবু ও তাঁর পরিবার এখন এলাকার  বিত্তশালীদের মধ্যে একজন।

কিন্তু এই বাজারেও ১ টাকা পিস দরে চপ-তেলেভাজা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখার রহস্যটা কি? হিমাংশুবাবুর কথায়, তাঁদের পরিবার এক সময়ে আর্থিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল ছিল। রোজগারের বিকল্প আর কোনও পথ সেভাবে খুঁজে না পেয়ে বাবা বিশ্বনাথ সেন অনেক বছর আগে বাড়ি লাগোয়া চপের দোকান খুলে বসেন। বাবা এলাকার মানুষের আর্থিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তখন  ৮০ পয়সা পিস দরে চপ বিক্রি শুরু করেছিলেন।

এর পর বেশ কয়েক বছর হল তিনি মাত্র ২০ পয়সা দাম বাড়িয়ে ১ টাকা পিস দরেই চপ বিক্রি করেন। দোকানের মহার্ঘ্য বলতে ঘুগনি। সেটার এক প্লেটের দামও মাত্র ২ টাকা। হিমাংশুবাবু দাবি করেন এলাকার গরিব ,নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাই তাঁর দোকানের ১ টাকা মূল্যের চপ ও ২ টাকা প্লেটের ঘুগনির সবথেকে বড় ক্রেতা। তাই কখনও লোকসানের মুখ দেখতে হয়নি তাঁকে।

প্রতিদিন ১০ কেজি বেসনের তেলেভাজা বিক্রি হয় হিমাংশুবাবুর দোকানে। শুধু ১০ কেজি বেসনই নয়। এর সঙ্গে প্রতিদিন লাগে এক বস্তা আলু, ৫ কেজি মটর, হাজার টাকার সরষের তেল সহ অন্যান্য সামগ্রী। হিমাংশু বাবু জানান, এইসব সামগ্রী কিনে দোকান চালানোর জন্যে প্রতিদিন তাঁর প্রায় ৩৫০০ টাকার মতো খরচ হয়। ১ টাকা পিস দরে চপ-তেলেভাজা আর ২ টা প্লেট দরে ঘুগনি বিক্রি গড়ে ভালই লাভ হয়। হিমাংশুবাবুর দোকানে ১ টাকার চপে কামড় দিতে দিতে বহু যুবকই ভাবছেন এবার এরকম একটা ব্যবসা তো খুলে ফেলাই যায়! আরও পড়ুন:বিজেপি করে’, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যুবকের ট্রাই সাইকেল কেড়ে নিয়েছেন তৃণমূল নেতা! অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য

COVID third Wave