কাটমানি, স্বজন-পোষণের অভিযোগ ঘোচাতে তৃণমূলের ‘দুর্নীতি দমন কমিটি’, বিজেপি বলল…
TMC: দলকে স্বচ্ছ রাখতে দুর্নীতি দমন শাখা কমিটি গঠন হচ্ছে। কোনও নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে এই কমিটি। খতিয়ে দেখা হবে অভিযোগের সারবত্তা।
পূর্ব মেদিনীপুর: সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে কাটমানি নেওয়া, স্বজন-পোষণ, আর্থিক দুর্নীতির মতো অভিযোগ ঠেকাতে পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল (TMC) নেতৃত্বের নয়া পদক্ষেপ। বর্ধিত সভায় সিধান্ত হল ‘দুর্নীতি দমন কমিটি’ গঠন। যা নিয়ে বিজেপির (BJP)-র কটাক্ষ, ‘যাক এবার ওদের পাপ স্খলন হবে।’
রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়া, স্বজন পোষণ-সহ দুর্নীতির অভিযোগ নানা সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। এবার সেই কালিমা ঘোঁচাতে কাঁথি জেলার সাংগঠনিক বর্ধিত সভায় ‘দুর্নীতি দমন কমিটি’ গঠিত করা হবে বলে সিধান্ত নিল তৃণমূল। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা (কাঁথি সাংগঠনিক ইউনিট) তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে প্রথম সাংগঠনিক সভা আয়োজিত হল এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুল সভাগৃহে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অভিজিৎ দাস। সভাপতিত্ব করেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক তরুণ মাইতি। রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী অখিল গিরি, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা অধ্যাপক জ্যোতির্ময় কর, প্রাক্তন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, অমিয় ভট্টাচার্য, জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি, বিধায়ক উত্তম বারিক, বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী, জেলা কর্মাধ্যক্ষ পার্থ প্রতিম দাস ও মৃণাল কান্তি দাস, বিকাশ বেজ, কাজল বর্মন, সেখ আনোয়ার উদ্দিন প্রমুখ নেতার উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহিত হল। কাঁথি সাংগঠনিক ইউনিট এলাকায় কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র ও মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের এগরা বিধানসভা কেন্দ্র (৮ টি বিধানসভা কেন্দ্র) সমূহের অন্তর্ভুক্ত মোট ১৪ টি ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ও সহ-সভাপতি এবং বিধানসভার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও শাখা সংগঠন সমূহের কর্মকর্তা ও জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রমুখের উপস্থিতিতে মৎস্যমন্ত্রী বুথ,অঞ্চল, ব্লক-সহ সর্বস্তরে কর্মকর্তা ও শাখা সংগঠন নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের উপর জোর দেন। কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কাজকর্মের উপর নজরদারির বিষয়ে গুরুত্ব দেন। বুথ, অঞ্চল স্তরে দলীয় কর্মকর্তা নির্বাচনে তৃণমূল স্তরে কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান জেলা সভাপতি। কাঁথি ও এগরা পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-কে পর্যদুস্ত করে তৃণমূল কংগ্রেসকে জয়যুক্ত করার লক্ষ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
অন্যদিকে জেলা যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি যুব সমাজ কে সংগঠন শক্তিশালী করার লক্ষে এগিয়ে আসার আবেদন জানান। প্রাক্তন মন্ত্রী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় কর রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে জনগণকে অবহিত করার উপর জোর দেন। বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নতুন প্রজন্মের দিশারী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আগামী দিনে জাতীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।” আর সেখানেই দুর্নীতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তৃণমূল নেতারা। জানানো হয় দলকে স্বচ্ছ রাখতে দুর্নীতি দমন শাখা কমিটি গঠন হচ্ছে। কোনও নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে এই কমিটি। খতিয়ে দেখা হবে অভিযোগের সারবত্তা।
যদিও এ নিয়েও শাসক শিবিরকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি। তৃণমূলের দুর্নীতি দমন শাখা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির কটাক্ষ, “ধার করা চিন্তা ভাবনা নিয়ে তৈরি এই কাঁথি সাংগঠনিক জেলা কমিটি। বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “আজ ওনাদের বৈঠকে আলোচনা হল। শুনে ভাল লাগল তারা এমন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তৃণমূল একটি কাটমানি-খোর দল। হার্মাদ, জেহাদি, লুটেরা, সমাজ সংস্কৃতি আর মহিলাদের সম্মান হরণকারী দল হয়ে ওদের মধ্যে যে চেতনার আবিষ্কার হয়েছে এটাই বড় কথা। তবে সেই সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করছি যে পাপ তো বাপকেও ছাড়ে না। তাই কত দিন লাগবে এই দুর্নীতির পাপ স্খলন করতে, সেই ছবি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।” আরও পড়ুন: ফের ট্যাঙ্কার ধর্মঘট, পেট্রোল-ডিজেলের জন্য অবশিষ্ট কি ‘চাতকের অপেক্ষা’?