TMC and BJP: শুভেন্দুর দলবদলের বর্ষপূর্তিতে তৃণমূলের ‘উচ্ছ্বাস দিবস’-এ ‘কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত’! তুঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন
Suvendu Adhikari: কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এদিন বিকালে ওই বিতর্কিত মাঠ পরিদর্শন ও করেন। দফতরের এই সম্পত্তি সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় বাহিনীও আসছে বলে সূত্রের খবর। সব মিলিয়ে এই জায়গা ঘিরে ঘাসফুল ও পদ্ম শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তুঙ্গে।
পূর্ব মেদিনীপুর: এক বছর আগে মেদিনীপুরের মাঠে অমিত শাহের উপস্থিতিতে তৃণমূল (TMC) ছেড়ে বিজেপি (BJP)-তে যোগদান করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। সেদিন তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল ‘ভাইপো হঠাও’। এবার সেই দলবদলের বর্ষপূর্তি পালন করেছে তৃণমূল। নাম উচ্ছ্বাস দিবস। আর সে নিয়েই শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির অভিযোগ, এ আসলে সন্ত্রাসের উৎসব। শুরু হয়েছে আরেক সঙ্ঘাতের পরিবেশ!
রাজ্যের ভোট পরবর্তীতে সব থেকে চর্চিত বিষয় হল অধিকারী পরিবার ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। ভোটের কয়েকমাস আগেই ধীরে ধীরে তৃণমূল থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছিলে শিশির অধিকারীর মেজ ছেলে শুভেন্দু। এর পর যত সময় কেটেছে ততই মতানৈক্য ও ফাটল বড় হয়েছে। তার পর শেষমেশ ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের কলেজিয়েট ময়দানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে অন্তর্ভুক্তি হয় শুভেন্দুর।
এই দিনটিকেই ‘আপদ বিদায়’ হিসেবে রাজ্য যুব তৃণমূল ও সংখ্যালঘু সেলের উদ্দ্যোগে কাঁথিতে “উচ্ছ্বাস ও সংহতি দিবস পালন” করার আয়োজন হচ্ছে। আর এই কর্মসূচি কে কেন্দ্র করে তৃণমূল বিজেপি রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। আসলে যে জায়গায় তৃণমূলের কর্মসূচি করার কথা ছিল, সেটি আবার কেন্দ্রীয় লবন দফতরের জায়গা। বিজেপি ও অধিকারী পরিবারের অভিযোগ, বিনা অনুমতিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এই কর্মসূচি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রের ওড়িশা ও চেন্নাই প্রতিনিধি দল ওই এলাকা পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেবে বলে জানা যাচ্ছে। আর এই অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল তাদের কর্মসূচির সভা স্থলের মঞ্চের স্থান পরিবর্তন করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই বিষয়ে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন, “দলের আবর্জনা ও আপদ বিদায় হয়েছে। তাই রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে কাঁথির কলেজ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় যুবর পক্ষ থেকে উচ্ছ্বাস দিবস হিসেবে পালন করছি। সংখ্যালঘু সেলের সংহতি দিবস হিসেবেও পালন হবে দিনটি।”
এদিকে বিজেপির তরফে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অসীম মিশ্র বলেন, “বাংলায় আবার একটা খুন সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করার উচ্ছ্বাস দিবসে পালন করতে চলেছে সন্ত্রাসী শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচন পরবর্তীতে কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় দু’জন বিজেপি কার্যকর্তা খুন হয়েছেন তৃণমূলী হার্মাদের হাতে। কাঁথির মানুষ দেখছে, এটা কীসের উচ্ছ্বাস। আগামী দিনে তার যোগ্য জবাব দেবে শান্তিপ্রিয় মানুষ।”
যদিও যুবর এই কর্মসূচিতে কোনো অনৈতিক কিছু দেখছে না তৃণমূল কংগ্রেস। রামনগরে বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী একটি অভিযোগ করেছেন শুনেছি। তৃণমূলের কর্মসূচিতে ওনার অভিযোগের কী আছে! উনি তো তৃণমূলের কেউ নন। ওঁনার অভিযোগে কিছু আসে যায় না।”
এদিকে কাঁথিতে বাংলা আবাস যোজনার ঘর বা এলাকা পরিদর্শনে এসে জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানান, আগামী ২০ তারিখ কাঁথিতে শাসকদল তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আমার কাছে জমা পড়েনি।” যদিও সমগ্র ঘটনা নিয়ে তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর কাথে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে মন্তব্যে করতে রাজি হননি।
আরও জানা যাচ্ছে, গত ১ ডিসেম্বর কাঁথিতে ‘সিনেমা দেখানোর’ হুঙ্কার দিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। ওই দিন বিজেপির কর্মসূচি থাকলেও শাসকদল তৃণমূলের বাইক বাহিনী অধিকারী বাড়ি শান্তিকুঞ্জের বাইরে দিয়ে বারবার টহল দিচ্ছিল বলে সভা থেকে অভিযোগ করেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। জানা গিয়েছে, তার পরই রাজ্যপাল সব ঘটনা জানার পর রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে বিষয়টি জানান। জেলা পুলিশ তার পর কাঁথি থানাকে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলে। সেই মতো শনিবার বিকেলে সাড়ে চারটে নাগাদ কাঁথি থানার পুলিশ অধিকারী বাড়ির সামনে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ করেন।
আর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এদিন বিকালে ওই বিতর্কিত মাঠ পরিদর্শন ও করেন। দফতরের এই সম্পত্তি সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় বাহিনীও আসছে বলে সূত্রের খবর। সব মিলিয়ে এই জায়গা ঘিরে ঘাসফুল ও পদ্ম শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তুঙ্গে।