উনপঞ্চাশকে একান্ন করতে এসেছি: শুভেন্দু

আরেকজন আমার অধ্যাপক। তাঁকে মানি। কেউ পাত্তা দেয়নি এতদিন। শুভন্দু চলে যাওয়ার পর পাত্তা পাচ্ছেন। পায়ে কাঁটা ফুটলে ল্যাংড়ায় সবাই। শুভেন্দু সেই কাঁটা।

উনপঞ্চাশকে একান্ন করতে এসেছি: শুভেন্দু
শুভেন্দু কাঁথিতে
Follow Us:
| Updated on: Dec 24, 2020 | 8:49 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: যেন ‘দেবদর্শন’এ পুষ্পবৃষ্টি! রাস্তার দু’ধারে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে এলাকার মহিলারা তখন ফুল ছুড়ছেন জনসেবার জন্য অকৃতদ্বার থাকা নেতার উদ্দেশে। সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে শুভেন্দুর বৃহস্পতিবারের রোড শো ছিল দেখবার মতন! উপচে পড়ছে ‘দাদার অনুগামী’দের ভিড়। সব মিলিয়ে ঘরের মাঠে ঘরের ছেলে যে কতটা অধিকার, দাপট তা এদিনের কর্মসূচির মাধ্যমে আগাগোড়া দেখানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ার আগ দিয়ে এবং বিশেষত বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ঘাসফুল নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন মেদিনীপুরের রাজনীতিতে শুভেন্দু বা অধিকারী পরিবার কোনও বড় ফ্যাক্টর ছিল না এবং নেইও। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলেই শুভেন্দুর মতো নেতা তৈরি করে নিতে পারেন। বুধবার কাঁথিতে দাঁড়িয়ে সে কথা নানা ভাবে স্পষ্ট করে বলেছেন সৌগরত রায়, ফিরহাদ হাকিমরা। শুভেন্দু যে এ কথা কোনওভাবেই মেনে নেবেন না এবং পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। হলও তাই। এদিন বিজেপি যুব মোর্চার রোড শো এবং সভা থেকে শুভেন্দুও কার্যত বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অধিকারীরাই নির্ণায়ক ফ্যাক্টর।

এদিনের রোড শো ছিল পাঁচ কিলোমিটারের। সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে একেবারে মন্থর গতিতে এগোয় শুভেন্দুর সুসজ্জিত ট্যাবলো। রোড শো থেকেই নিজের আক্রমণের লক্ষ্য পরিস্কার করে দেন তিনি। স্লোগান তোলেন, ‘ইস বার ২০০ পার…’। পরিবেশ দেখে শুনে মনে হল, রোড শো ছিল শুধুই ট্রেলার, সম্পূর্ণ সিনেমাটা দেখল কাঁথির সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ট। সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ শুভেন্দু অধিকারী যখন সভাস্থলে পৌঁছন, তখন কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই এলাকা জনঅরণ্যে পরিণত হয়েছে। ‘জয় শ্রী রাম’ নিনাদ, শঙ্খধ্বনি, পুষ্পবৃষ্টি আর অগণিত মানুষের করতালি, গোটা চত্বরকে যেন এক অন্য রূপ দিয়েছে।

সৌমিত্র খাঁর প্রাথমিক ভাষণের পরই মাইকের দখল নেন শুভেন্দু। কর্মী-সমর্থক, অনুগামীদের উত্তেজনার স্ফূরণ তখন চিত্রসাংবাদিকদের নজর কেড়েছে। হাত নেড়ে প্রথমে সৌজন্য বিনিময়। তারপরই ‘আগুনে’ বক্তৃতা। তাঁর বলা প্রত্যেকটা কথা,  শব্দচয়নে প্রাক্তন দলকে বিদ্ধ করার অভিপ্রায় স্পষ্ট।

একদা নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক এদিন বলেন,  “বক্তৃতা করেই যদি সব হত, তবে নন্দীগ্রাম হত না।” কথা প্রসঙ্গে এদিন বারবার শুভেন্দুর মুখে উঠে এসেছে অধিকারী পরিবারের কথা। তিনি বলেন, ‘অধিকারী পরিবার না থাকলে মুখ্যনমন্ত্রী হতেন না।’ এদিন পুরনো অনেক কথাই শোনা যায় শুভেন্দুর গলায়। তিনি বলেন, “যে সময় কেউ কিরণময় নন্দ, লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে লড়তে চায়নি সেই সময়  লড়াই করে দলকে বাঁচিয়েছিলাম। লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে কেউ লড়তে চায়নি, আমি লড়েছিলাম।” উল্লেখ্য, বুধবার শুভেন্দুকে ‘পালোয়ান’ বলে কটাক্ষ করে কিরণময় নন্দের বিরুদ্ধে তাঁর নির্বাচনে পরাজয়ের অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।

পরিবারতন্ত্র নিয়ে তৃণমূল তাঁকে যেভাবে বিঁধেছে, এদিন তারও উত্তর দিয়েছেন শুভেন্দু। বলেন, “যদি সত্যিই আমার পরিচয় শিশির অধিকারীর ছেলে হয়ে থাকে, তবে তোমরা এত হাঁপাচ্ছ কেন? এখানকার ছেলে আমি। মানুষ তা আজ বুঝিয়ে দিয়েছে। ” কাঁথির সভা থেকে হুঙ্কার ছাড়েন শুভেন্দু, “পদ্ম ফুটিয়েই ঘুমোতে যাব, একথা জেনে নিন। উনপঞ্চাশকে একান্ন করতে এসেছি।” রাজ্যের ‘তাঁবেদার’ পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে তাঁর হুমকি, “বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে ১০ বছর কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে থাকতে হবে।” এরপরই চ্যালেঞ্জের সুরে তিনি বলেন, ‘দুই মেদিনীপুরে ৩৫টি আসনেই বিজেপিকে জেতাব।’ তবে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, ঠিক এই সময়েই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, দিলীপ ঘোষের সঙ্গে হাত মিলিয়েই গোটা মেদিনীপুর থেকে ৩৫ আসন জিতবেন তাঁরা। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই কথাগুলি আদতে শুভেন্দু তাঁর কর্মীদের মনে এটাই আশ্বাস জোগাতে বলেছেন, যে তিনি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশেই সংগঠনের কাজ করবেন। তৃণমূলে তাঁর গায়ে লেগে যাওয়া ‘একনায়কতন্ত্র’ তকমাটা মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর তিনি।

আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বভারতী অবিচ্ছিন্ন ভারতের ঐতিহ্য, মোদীর ভাষণে বারবার উঠে এল সে কথাই

কাঁথিতে তৃণমূলের সভার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাবি সভা করলেন শুভেন্দু। আগামী ৭ জানুয়ারি সভা করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ খুব ভালোভাবেই জানেন, সেদিনের সভা থেকেও তাঁর উদ্দেশে ধেয়ে আসবে নানা কটাক্ষ। তারও জবাব দিতে পাল্টা ৮ জানুয়ারি সভার ডাক দিলেন ‘কাঁথির ভূমিপুত্র’। এরপরই পের কটাক্ষের ঝাঁঝে বললেন, মুখ্যমন্ত্রী সরকারি ক্ষমতায় লোক আনবেন, আর তাঁর সঙ্গে মানুষ থাকবে ভালবেসে। সব মিলিয়ে সভা-পাল্টা সভায় কাঁথি যে এখন বঙ্গ রাজনীতির ‘এপিসেন্টার’ তা বলাই যায়।