আগুনে জ্বলছে বাড়ি, অগ্নিকুণ্ড থেকে দুই শিশুকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিল দশমের ছাত্র
জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেও মানবতার যুদ্ধে জয় হয়েছে তারই। দশম শ্রেণির একটি কিশোর শিখিয়ে দিয়ে গেল কীভাবে মানুষের জন্য লড়তে হয়, কীভাবে অন্যের বিপদে নিজের প্রাণ-মায়া তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়।
পুরুলিয়া: চোখের সামনে দাউ দাউ করে জ্বলছে বাড়ি। ভিতর থেকে ভেসে আসছে শিশুর আর্ত চিৎকার। কোনও কিছু না ভেবেই সেই আগুনের কুণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়ল ‘হিরো’। এমনটা সিনেমাতে আকছাড়ই দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবেও যে এমনটা হতে পারে পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের অমিত রাজ তা দেখিয়ে দিল। নিজের প্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে দিল দু’টি ছোট্ট শিশুকে।
পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র অমিত। বয়স কতই বা হবে। মেরে কেটে ১৪-১৫ বছর। বাড়ি বিহারের নালন্দায়। পুরুলিয়ায় পড়াশোনা করত সে। মেধাবী ছাত্র। করোনা পরিস্থিতির জন্য এখন স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানেই গত ৩ ডিসেম্বর ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটে।
সৈনিক স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র অরিন্দম গিরি জানান, একটি বাড়িতে আগুন লেগে যায়। সেই বাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসছিল দুই অসহায় শিশুর কান্না। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেনি অমিত।
এলাকার লোকজন বারবার বারণ করেছিল। কিন্তু অমিতের ভিতরকার মানুষটা তাতে পিছু না হঠে ঢুকে পড়ে ওই জ্বলন্ত বাড়িতে। নিজের শরীরের অধিকাংশ পুড়িয়ে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে আনে বাচ্চা দু’টিকে। মারাত্মকভাবে জখম অমিতকে প্রথমে পাটনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এরপর হেলিকপ্টারে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লি। ১৩ ডিসেম্বর সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলে কিশোর অমিত।
জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেও মানবতার যুদ্ধে জয় হয়েছে তারই। দশম শ্রেণির একটি কিশোর শিখিয়ে দিয়ে গেল কীভাবে মানুষের জন্য লড়তে হয়, কীভাবে অন্যের বিপদে নিজের প্রাণ-মায়া তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়।