Fake Employees in Purulia Municipality: বেতন নিচ্ছেন ‘অস্তিত্বহীন’ ১০০ পুরকর্মী! তৃণমূল পরিচালিত পুরসভায় লক্ষাধিক টাকার কেলেঙ্কারি
TMC: পুরসভা সূত্রে খবর, কাজের জন্য যেসকল কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের মাথা পিছু বেতন ৩হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু, দেখা গিয়েছে প্রায় ১০০ জন কর্মী ওই তালিকায় এমন রয়েছেন যাঁরা টাকা তো নিচ্ছেন কিন্তু কখনওই পুরসভার কোনও কাজে তাঁদের দেখা যায় না।
পুরুলিয়া: কথায় বলে ‘টাকা ওড়ে’। পুরুলিয়া পুরসভার ক্ষেত্রে তেমনটাই যেন সত্যি! পুরসভায় নিয়োজিত রয়েছেন কর্মীরা। কিন্তু তাঁদের দেখা যায় না। অথচ মাসের শেষে তাঁরা টাকা তুলে নেন! শাসকদলের পরিচালিত পুরসভায় কী করে এমন ঘটনা সম্ভব? তাও এক-আধদিন নয়, দিনের পর দিন। অথচ নজরে পড়ল না কারোর! এইভাবে প্রায় ১০০ টি ভুয়ো নামের তালিকা পাওয়া গিয়েছে। আর এতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুরসভার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছে পদ্ম শিবির।
ঠিক কী অভিযোগ? পুরসভা সূত্রে খবর, কাজের জন্য যেসকল কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের মাথা পিছু বেতন ৩হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু, দেখা গিয়েছে প্রায় ১০০ জন কর্মী ওই তালিকায় এমন রয়েছেন যাঁরা টাকা তো নিচ্ছেন কিন্তু কখনওই পুরসভার কোনও কাজে তাঁদের দেখা যায় না। তাহলে কী করে বেতন পাচ্ছেন এই কর্মীরা? শুধু তাই নয়, সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই কর্মীদের নিয়োগ কীভাবে করা হয়েছে তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন? আদৌ তাঁরা পুরসভার কর্মী কি না তাও নিশ্চিত নয়। সেই হিসেবে ধরলে প্রায় লক্ষাধিক টাকার নয়ছয় হয়েছে এই পুরসভায়, অন্তত অভিযোগ এমনটাই।
এদিকে, পুরসভার কর্মীদের যে গোলমাল রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন নবেন্দু মাহালী। তাঁর কথায়, “আমি নতুন এসেছি। সব কিছু জানি না। তবে এটা ঠিক যে এখানে কিছু কর্মী ধরা পড়েছে যারা কাজে থাকে না কিন্তু টাকা তোলে। তারা কারা জানা নেই। তবে অভিযোগ এসেছে এই ভুয়ো কর্মীদের সঠিক তথ্য যাচাই করা হচ্ছে না। এরকম প্রায় ১০০ কর্মীর একটি তালিকা পেয়েছি। খুব দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।”
এ নিয়ে পুরুলিয়া শহরের বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ভুয়ো কর্মীর সংখ্যা ১০০ নয়, আরও অনেক । তিনি বলেন, “ভুয়ো কর্মীর টাকা তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলররা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতেন ।” তিনি তৃণমূলকে ‘চোরদের দল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এখন এ বলছে ও চোর ৷ ও বলছে তুই চোর, এই অবস্থা ।”
গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, এই ভুয়ো কর্মীরা সকলেই তৃণমূলের মদতপুষ্ট। ভুয়ো কর্মী নিয়োগ করে এই বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত্ করেছেন তৃণমূলের কাউন্সিলররাই বলে অভিযোগ পদ্মের। যদিও, তৃণমূল শিবিরের পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত গত বছরের নভেম্বরেই পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলীতে পরিবর্তন আনা হয়। শামিমদাদ খানের পরিবর্তে পুরুলিয়া পুরসভার নতুন প্রশাসকের দায়িত্ব পান প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো। পুরুলিয়া পুরসভার পাঁচ জনের যে পুরপ্রশাসকমণ্ডলী ছিল, তার মধ্যে চার জন সদস্যকে সরিয়ে নতুন চার জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাদের তালিকায় শামিমবাদ ছাড়াও ছিলেন, তৃণমূলেরই তিন কাউন্সিলর মৌসুমি দত্ত, মৌসুমি ঘোষ ও ময়ূরী নন্দী। নতুন করে যে চারজন নিয়োজিত হন সেই তালিকায় ছিলেন, কাউন্সিলর দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। বাকিদের মধ্যে ছিলেন, শহর তৃণমূলের সহ-সভাপতি কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব তৃণমূল নেতা রানাপ্রতাপ সিংহ ও মৃগাঙ্কবাবু। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই রাজ্যের বাকি পুরসভায় পুরভোট মিটে যাওয়ার কথা। তারআগে এইভাবে তৃণমূল শাসিত পুরসভায় এমন কীর্তিতে কার্যত বেশ খানিকটা অস্বস্তিতে শাসক শিবির বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।