Padmashree: ১২ বছর আগে থানার ‘সাহেবের’ এক কথায় পুরুলিয়ার ‘সুখ’ ফেরান এই দুখু, তিনিই আজ দেশের গর্ব
সিন্ডরি গ্রামে এখন তাঁকে ঘিরে সাজো সাজো রব। এতদিনে তাঁকে অনেকেই 'গাছ-পাগল' বলেছেন, তাঁরাই আজ পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপক দুখুকে নিয়ে মাতোয়ারা। নাওয়া খাওয়া ভুলে গাছ লাগান। ছেলে মেয়েকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন স্ত্রী।
পুরুলিয়া: গাছ লাগাও, প্রাণ বাঁচাও। এ লাইনের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে তাঁর সময় লেগেছিল অনেকে। গ্রামের থানায় এসেছিলেন এক ‘সাহেব’। তাঁর কাছে কাজের কথা বলেছিলেন। কথায় কথায় সেই সাহেব তাঁকে বলেছিলেন ‘গাছ লাগাও’। গ্রামের চাষাভুষা দুখু মাঝি বোঝেননি ‘কী বলছেন সাহেব!’ টাকা যেখানে ফুরোয় সংসারের চাল নুন কেনার গার্হস্থ্য অনুশাসনেই, সেখানে গাছ লাগাতে বলছেন সাহেব! সে তো বিলাসিতা। কিন্তু সাহেব সেদিন সেই নিরক্ষর দুখু মাঝিকেই বুঝিয়েছিলেন কেন গাছ লাগাবেন তিনি। গাছ লাগালে, তবেই যে মিলবে অক্সিজেন! আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর নাম তিনি শোনেননি, তিনি কী বলেছিলেন, সেই সব বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যা, তার কাছে রকেট সায়েন্সের চেয়েও বেশি! দুখু মাঝির কাছে আচার্য বসু তো ছিলেন সেই ‘সাহেব’ই , যিনি তাঁকে গাছ লাগাতে বলেছিলেন। তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, গাছ না লাগালে একটা সময়ে গোটা পৃথিবীটাই আর শ্বাস নিতে পারবে না। সাহেবের সেই কথাকে একেবারে ‘বেদবাক্য’ মনে করে ১০-১২ বছর গাছ লাগিয়ে চলেছেন পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সিন্ডরির দুখু মাঝি। ১০-১২ বছর ধরে পাঁচ হাজারেও বেশি গাছ লাগিয়েছেন তিনি। এখনও লাগিয়ে চলবেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত গাছ লাগাবেন। আজ সেই দুখু মাঝিই পদ্মশ্রী পুরস্কার পাচ্ছেন।
সিন্ডরি গ্রামে এখন তাঁকে ঘিরে সাজো সাজো রব। এতদিনে তাঁকে অনেকেই ‘গাছ-পাগল’ বলেছেন, তাঁরাই আজ পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপক দুখুকে নিয়ে মাতোয়ারা। নাওয়া খাওয়া ভুলে গাছ লাগান। ছেলে মেয়েকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন স্ত্রী। তাঁরা আজ চাষবাস করেন। কিন্তু এতদিন বাবার নেশা যে দেশের গর্ব হয়ে উঠতে পারে, তা কখনও ভাবেননি তাঁরা।
একেবারে আঞ্চলিক ভাষাতেই দুখু বলেন, “খুব ভাল লাগছে। আমি কখনও ভাবিনি। আমার নেশা গাছ লাগানো। তার জন্য পুরস্কার পাব, কখনও আশা করিনি। ১০ -১২ বছর ধরে গাছ লাগিয়ে চলেছি। এক সাহেব বলেছিলেন, অক্সিজেনের অভাব হবে একদিন। নাড়িয়ে দিয়েছিল মনটা। পুরুলিয়ার অনেক গাছ আমি লাগিয়েছি। আরও লাগাব।” পদ্মশ্রী পুরস্কার পাচ্ছেন দুখু মাঝি। খুব খুশি গোটা গ্রাম।