শুভেন্দুর তাস আস্তিনে, কালই কি মমতার ‘ট্রাম্প কার্ড’ অধিকারী গড়ে?
তৃণমূল সুপ্রিমো মুখে শুভেন্দুর নাম না নিলেও আকারে-ইঙ্গিতে তাঁকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলের সাংগঠনিক সভায়। শেষ পর্যন্ত এবার কি প্রকাশ্য সভাতেই শুভেন্দু নিয়ে মুখ খুলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)? এই প্রশ্নেই আপাতত সরগরম রাজনৈতিক মহল।
মেদিনীপুর: শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এপিসোডের ক্লাইম্যাক্স দেখার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে বসে গোটা রাজ্য। বলা ভাল, গোটা দেশ। তিনি নিজের রাজনীতির চাকা কোন পথে গড়ান, তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে বঙ্গ রাজনীতির ভবিষ্যৎ।
তৃণমূল সুপ্রিমো মুখে শুভেন্দুর নাম না নিলেও আকারে-ইঙ্গিতে তাঁকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলের সাংগঠনিক সভায়। শেষ পর্যন্ত এবার কি প্রকাশ্য সভাতেই শুভেন্দু নিয়ে মুখ খুলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)? এই প্রশ্নেই আপাতত সরগরম রাজনৈতিক মহল।
এমন একটা সময় যখন শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন এহেন জল্পনা তৈরি হয়েছে, তখন মেদিনীপুরের মাটিতে মমতা ইতিমধ্যেই পা রেখেছেন। এই মেদিনীপুরকে বরাবর নিজের গড় বলেই দাবি করেছেন শুভেন্দু। তাই তৃণমূল নেত্রীর সোমবারের হাইভোল্টেজ সভার দিকে তাকিয়ে গোটা বাংলা। বলাই বাহুল্য, এই সভার দিকে বিশেষ নজর রয়েছে শুভেন্দু শিবিরেরও। ইতিমধ্যেই তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্লক সভাপতিদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আকারে ইঙ্গিতে শুভেন্দুকেও আক্রমণ করেছেন দলীয় সভায়। তবু তাঁর নাম নিয়ে দলনেত্রী আদৌ বার্তা দেন কিনা এখন সেদিকেই তাকিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর অনুগামীরা।
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেদিনীপুরের সভার আগেই রবিবার নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন শুভেন্দু। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করছেন না তিনি। বরং তাঁর অনুগামীদের, দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার পরই সোমবার অথবা মঙ্গলবারের মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেন শুভেন্দু। স্পষ্ট করতে পারেন নিজের অবস্থান। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মমতার সভার আগে শুভেন্দু নিজের অস্তিন থেকে সব তাস বের করতে চাইছেন না। বরং দেখবেন, মমতা মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে কী বলেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন, তারপরই একে একে নিজের তাসগুলো খেলা শুরু করবেন। মেদিনীপুরের মাটিতে মমতার এই সভার তাৎপর্য কতটা তা বলা নিষ্প্রয়োজন। শুভেন্দু যদি আগেভাগে কিছু বলে দেন, মমতা তখন নিজের সভায় বেছে বেছে তাঁর বলগুলোকে মাঠের বাইরে পাঠানোর ক্ষমতা রাখেন। নন্দীগ্রামের পোড় খাওয়া এই নেতা সেটা মজ্জায় মজ্জায় জানেন। তাই ধীরে চলো এবং ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচের মধ্যপন্থা নিয়েছেন তিনি।
কয়েক দিন আগে ক্ষুদিরাম জন্ম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শুভেন্দু বলেছিলেন, তিনি ‘বাংলার একজন সাধারণ মানুষ’, এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয়। তাঁর ঠিক আগেই সৌগত রায়কে এসএমএস বার্তায় একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দেন বলে সূত্রের খবর। প্রকাশ্যে অবশ্য এখনও চুপ শুভেন্দু। তবে রাজনৈতিক মহলের, আশা শুভেন্দুর নাকের ডগায় মেদিনীপুরে মমতার সভার পরই নীরবতা ভাঙবেন নন্দীগ্রামের ‘রাজপুত্তুর’।
আরও পড়ুন: ‘অনড়াম্বর’ মমতাকে বিঁধতে বিজেপির নয়া ভোট কৌশল কি ‘ভাইপো’!
অন্যদিকে তৃণমূলের প্রেক্ষিতে এই সভার গুরুত্ব বিরাট। মাতঙ্গিনী হাজরার মাটিতে আগামী সময়ও ঘাসফুলের দাপট দেখা যাবে, নাকি গেরুয়া ফুটবে, তার দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে কালকেই। শাসকদলে ইতিউতি বিদ্রোহের মাঝে দলে থেকেই দলছুট হয়ে পড়েছেন অন্তত জনা চারেক উল্লেখযোগ্য নেতা। দলের ভবিতব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতাদের অনেকেই। ঠিক এমন একটা সময়ে সোমবার মেদিনীপুরের জনসভা থেকে গোটা দলকেই অভয় দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলে ‘সম্ভাব্য ভাঙন’ নিয়ে কর্মী সমর্থকরা কিছুটা বিচলিত রয়েছেন। অন্যদিকে দিদির ছত্রছায়ায় ‘দাদা’ হয়ে ওঠা নেতার অনুগামীরা দলের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে করে চলেছেন। এই আবহে দলের অন্দরে নিজের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই একুশের নির্বাচনের আগে মমতার প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। অনেকেই মনে করছেন, প্রতিপক্ষ শিবিরে আঘাত হানার আগে আগামিকাল ঘর-শত্রুদের দিকেই শেল ছুড়তে পারেন তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন: রাজীব কি বিজেপির পথে? দিলীপ বললেন, “ভাল ছেলে, ওকে স্বাগত”