মৃত্যুর আগে চিকিৎসককেই জানিয়েছিলেন শেষ ইচ্ছা, সেই মতোই মরণোত্তর দেহ দান

ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এই প্রথমবার মরণোত্তর দেহ দান (Body donation after death) করা হল। পড়ুয়াদের গবেষণার কাজে লাগানো হবে হুগলির বিমলেন্দু বাবুর দেহ।

মৃত্যুর আগে চিকিৎসককেই জানিয়েছিলেন শেষ ইচ্ছা, সেই মতোই মরণোত্তর দেহ দান
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 24, 2021 | 11:31 PM

ডায়মন্ড হারবার: মানুষ মাত্রেই মরণশীল। মৃত্যুর পর নশ্বর দেহ সমাধিস্থ করা বা ভস্মীভূত করাই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রীতি। তবে অনেকেই ভাবেন মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যদি কারও কোনও কাজে লাগে। এমনটাই ইচ্ছে ছিল হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বিমলেন্দু রায়চৌধুরীর। তাঁর ইচ্ছে মতই তাঁর মরণোত্তর দেহ দান (Body donation after death) করলে তাঁর ভাই। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম মরনোত্তর দেহ দান করা হল বুধবার। মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে ওই দেহ গ্রহন করা হয়েছে।

মেডিক্যাল কলেজের তরফে জানানো হয়েছে, পড়ুয়াদের গবেষণার কাজে দেহটি ব্যবহার করা হবে। কলেজের অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ জানিয়েছেন, আগামিদিনে দেহ দানে উৎসাহ দিতে কলেজের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক প্রচার চালানো হবে।

হুগলির উত্তরপাড়ার শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী বিমলেন্দু রায়চৌধুরির দেহ দান করা হয় এদিন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার মানিকতলা জে এন রায় হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় বিমলেন্দুবাবুর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তাঁর ইচ্ছেতেই এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসক কৌস্তব ডাকুয়ার তৎপরতায় দেহ দান করা হয়। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল।

শান্তিনগরের বাসিন্দা বিমলেন্দুবাবুরা তিন ভাই। অকৃতদার বিমলেন্দুবাবু একাই থাকতেন। দুই ভাই কর্মসূত্রে মুম্বইতে থাকেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দেহটি দাহ না করে দান করার কথা জানিয়ে যান চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের। সেই মত মৃত্যুর পর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতের কাছে আবেদন জানায় বিলেন্দুবাবুর পরিবার। উদ্যোগ নেন চিকিৎসক কৌস্তভ ডাকুয়া। কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজকে দেহ গ্রহনের কথা জানানো হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কোনও হাসপাতাল সাড়া দেয়নি। অবশেষে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজকে প্রস্তাব দেওয়া হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজি হয়ে যান। বুধবার সেই দেহ গ্রহন করল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এদিন উপস্থিত ছিলেন বিমলেন্দুবাবুর ভাই অমলেন্দু রায়চৌধুরি। তিনি বলেন, ‘দাদার মৃত্যুর আগে আমাদের কাছে তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। সেজন্য মৃত্যুর পর আমরা উদ্যোগ নিই। স্বাস্থ্য দফতর এই কলেজের কথা জানান। আজ দেহ দান করলাম। মেডিক্যাল পড়ুয়াদের গবেষনার কাজে লাগায় আমরা খুশি।’ বিমলেন্দুবাবুর মেজো ভাই নির্মলেন্দু রায়চৌধুরিও মরনোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করেছেন। আপাতত বিমলেন্দুবাবুর দেহটি কলেজে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। পাঁচ বছর এই দেহটি সংরক্ষন করে রাখা সম্ভব।

আরও পড়ুন: ‘ঠিক করেছে পুলিশ’ রাকেশ কাণ্ডে বিস্ফোরক রূপা, পাল্টা দিলেন দিলীপ

এদিন মেডিক্যাল কলেজের তরফে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ , সহকারী অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায়, মহকুমা শাসক সুকান্ত সাহা, সুপ্রিম সাহা। অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ বলেন, ‘কলেজের কাছে এই দিনটি খুব উল্লেখযোগ্য। কারণ দেহ না পাওয়া গেলে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের সমস্যা হয়। আমরা চাই আগামিদিনে মানুষের মধ্যে দেহ দানের প্রবনতা বাড়ুক।’