হাফ কাচ নামানো গাড়ির জানলা দিয়ে পুলিশের চোখে পড়েছিল একটা দাগ! কান্নায় ভেঙে পড়লেন যুবক

প্রগতি ময়দানের (Pragati Maidan Murder Case) এই গোটা ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপট কোনও থ্রিলার চলচ্চিত্রের চেয়ে কম নয়!

হাফ কাচ নামানো গাড়ির জানলা দিয়ে পুলিশের চোখে পড়েছিল একটা দাগ! কান্নায় ভেঙে পড়লেন যুবক
ধৃত যুবক
Follow Us:
| Updated on: Feb 26, 2021 | 2:07 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাসন্তী হাইওয়ের (Pragati Maidan Murder Case) ধারে পড়েছিল দেহটি। মাথা থ্যাতলানো ছিল। রাস্তার ওপরে ছিল চাপ চাপ রক্ত। টাটকা রক্তের দাগ দেখে প্রথমে ঘাবড়ে যান পথ চলতি সাধারণ মানুষ। খবর যায় থানায়। পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা শুরু করেন তদন্তকারীরা। ঘটনাচক্রে ঠিক তখনই নাকা চেকিংয়ের সময়ে সুন্দরবনের কাছে ধরা পড়েন এক যুবক। আর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই গোটা ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপট কোনও থ্রিলার চলচ্চিত্রের চেয়ে কম নয়!

রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। অনান্য দিনের মতো জীবনতলা সরবেড়িয়াতে নাকা চেকিং চলছিল। তল্লাশি সময়েই দাঁড় করানো হয় একটি গাড়িকে। জীবনতলা থানার পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, গাড়ির সামনেই বসে ছিলেন এক যুবক। পিছনের সিট ফাঁকা ছিল। গাড়ি দাঁড় করালে তাঁর চেহারায় একটা অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করেন পুলিশ কর্মীরা। কাচ খোলা জানলা দিয়ে ততক্ষণে পুলিশের চোখে পড়েছে পিছনের সিটে থাকা রক্তের দাগ।

স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞসাবাদ আরও জোরাল হয়। কথা বলতে বলতেই গাড়ি স্টার্ট দেন যুবক। হুঁশ করে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যান। পুলিশও ধাওয়া করে। কিছুদূর দিয়ে গাড়ি রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে রুদ্ধশ্বাসে দৌঁড়াতে থাকেন তিনি। পুলিশও ছুটতে থাকে। প্রায় ২০০ মিটার এক টানা দৌঁড়ান যুবক। কিন্তু আর পারেননি।

জীবনতলা থানায় নিয়ে আসা হয় ওই যুবককে। চলতে থাকে জিজ্ঞাসাবাদ। জেরায় জানা যায়, নারকেলডাঙার বাসিন্দা ওই যুবকের নাম শারুখ। এদিকে আবার, বাসন্তী হাইওয়ের ধারে উদ্ধার হওয়া সেই মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ছবি পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন থানায়। পুলিশে-পুলিশে খবর হচ্ছে। একটি ছবি যায় জীবনতলা থানাতেও। তদন্তের গতি বাড়াতে সেই ছবি দেখানো হয় শারুখকেও। এরপরই জেরার মুখে ভেঙে পড়েন তিনি। ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন যুবক। জানা যায়, ওই মহিলা আসলে তাঁরই স্ত্রী হেমা কোমার।

কাঁদতে কাঁদতে শারুখ বলতে থাকে, দশ বছর আগে হেমাকে ভালবেসেই বিয়ে করেছিলেন শারুখ। তাঁদের ছ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে তাঁদের দাম্পত্যে ভাঙন ধরেছিল। হেমা যাদবপুরের বিক্রমপুর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন।

কিন্তু সমস্যা মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন শারুখ। বৃহস্পতিবার হেমাকে বোঝাতে তাঁর বাড়িতে আসেন তিনি। এরপর তাঁকে নিয়েই একাধিক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। তাঁকে বারবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে হেমার ফোনে একাধিকবার অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে ফের শুরু হয় অশান্তি। হেমা আবার বাড়ি ফিরতে অস্বীকার করতে থাকেন।

আরও পড়ুন: বিজেপি করার মাশুল? উলঙ্গ করে পিটিয়ে নেতার দু’পা ও হাত ভাঙার অভিযোগ

তখনই অশান্তি শুরু হয়। গাড়ির মধ্যেই অশান্তি চলতে থাকে দু’জনের। তারপরই স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে শারুখ খুন করে বলে জেরায় স্বীকার করেছে। রাস্তায় পড়ে থাকা ইট দিয়ে থেঁতলে দেন স্ত্রীয়ের মাথা। এরপর দেহ ফেলে গাড়ি নিয়ে সুন্দরবনের দিকে রওনা দেন। কিন্তু পথেই ধরা পড়ে যান। পুলিশ শারুখকে গ্রেফতার করেছে। হেমার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।