Moral Policing: নীতি পুলিশি! চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ
Murder: চুরির অপরাধে একাধিকবার জেলও খেটেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কথায় বলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিৎ নয়। এরপরও অনেকেই রয়েছেন সেই বিষয়ে কর্ণপাত করে না অনেককেই। একাধিক ঘটনায় সেই উদাহরণ আগেই পাওয়া গিয়েছে। আর আবার দক্ষিণ ২৪ পরগানায় পিটিয়ে মারার ঘটনা সামনে এল।
নিহতের নাম মারফৎ লস্কর (২৮)। সূত্রের খবর, মারফৎ নিজেও একজন অপরাধী। চুরির অপরাধে একাধিকবার জেলও খেটেছে। এলাকায় নেশাখোর হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। রাতে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাঁকে ধরে বেধড়ক মারধোর করে বলে অভিযোগ। লাঠি, রড দিয়ে পেটানো হয় তাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মারফতের।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। যদিও মারফৎয়ের পরিবারের সদস্যদের দাবি, আগে চুরি করলেও এদিন সে দিদির বাড়িতে এসেছিল। সেখান থেকেই রাতে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে পরিকল্পনা করে এলাকার কয়েকজন যুবক মারধর করে। লাঠি, রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করে তাকে। এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার। ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা পলাতক। তবে তিন মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, এর আগও এই ধরনের খবর প্রচুর সামনে এসেছে। সামান্য গরু চুরির অপরাধে রীতিমতো সালিশি সভা বসিয়ে অভিযুক্তদের গণপিটুনি দেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে এল দুই জেলায়।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বালিঘাটায় গরু চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে দুই যুবক। অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্বিচারে লাঠি-ঘুসি চালাতে থাকে গ্রামবাসীরা। মারের চোটে মাথায় বেশ খানিকটা চোট পায় এক অভিযুক্ত। বারবার কাকুতিমিনতি করা সত্ত্বেও চিঁড়ে ভেজেনি। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, “ওরা গরু চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তিনজন এসেছিল। একজন পালিয়ে গিয়েছে। দুজনকে ধরে হালকা মারধর করা হয়েছে।” কিন্তু, প্রকাশ্যে যে ছবি এসেছে তা ভয়ানক! ছবিতে দেখা গিয়েছে, গ্রামের মাঠে একটি গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে দুই অভিযুক্তকে। ঘিরে ধরে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। তারপর এক এক করে এসে মারধর করছেন। লাঠি-কিল-চড় বাদ নেই কিছুই! পরে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের কার্যত গ্রামবাসীদের হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
প্রায় একই ছবি উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়। শুক্রবার, দেগঙ্গার চাঁদপুরের বাসিন্দা মহিবুল লস্কর অভিযোগ করেন মাঠের মধ্যে বেঁধে রাখা তাঁর তিনটে গরু তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। গ্রামের ছেলেদের খবর দিতেই তারা নানাভাবে খোঁজ করতে শুরু করে। তারপরেই, হাড়োয়া রোডের উপরে গরু-সহ দুই অভিযুক্তকে আবিষ্কার করে তারা। সেখান থেকেই টেনেহিঁচড়ে ওই দুই অভিযুক্তকে নিয়ে আসা হয়। বৈদ্য়ুতিক খুঁটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাথি-ঘুসি-কিল-চড় মারতে থাকে উত্তেজিত জনতা। অভিযুক্তদের পেটেও লাথি মারতে বাকি রাখেননি গ্রামের ‘দাদারা’। পরে, পুলিশ এসে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে।
সাম্প্রতিককালে, রাজ্যে পরপর এমন পাশবিক নীতিপুলিশির (Moral Policing) ছবি উঠে এসেছে। কখনও আদিবাসী যুবতীর উপর অত্যাচার, কখনও বা অমানবিক মারধর। প্রতিক্ষেত্রেই একরকম সালিশি সভা বসিয়ে শাস্তির নিদান দিয়েছেন গ্রামের ‘মাতব্বরা’। প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ও আইনের কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও কী করে বারবার নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ? এর সঙ্গে কি কেবলই নীতিপুলিশি (Moral Policing) জড়িয়ে নাকি আরও কোনও গভীর সামাজিক অবক্ষয়, প্রশ্ন ওয়াকিবহাল মহলের
আরও পড়ুন: Raniganj Murder: কয়লা চুরিতে বাধা, ‘খুন’ ইসিএলের নিরাপত্তারক্ষী