অভিষেককে কেন রাজনীতিতে এনেছিলেন? এই প্রথম পরিবারের গোপন কথা প্রকাশ্যে জানালেন মমতা

আক্রমণাত্মক ছিলেন বটে, তবে এদিন মমতা অভিষেক প্রসঙ্গে অনেক বেশি আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন, বলছেন রাজনীতির কুশীলবরাই।

অভিষেককে কেন রাজনীতিতে এনেছিলেন? এই প্রথম পরিবারের গোপন কথা প্রকাশ্যে জানালেন মমতা
ছবি- ফেসবুক
Follow Us:
| Updated on: Feb 18, 2021 | 6:38 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কেন ভাইপোকে রাজনীতিতে এনেছিলেন, কেনই বা তাঁকেই বারবার বিজেপি টার্গেট করছে, পৈলানে অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে সেই অজানা ব্যক্তিগত কথাই আজ প্রকাশ্যে জানালেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার একদিকে যখন শাহি-সভার উত্তাপ, তখনই আরেক প্রান্তে মাটি তপ্ত করছে মমতা-অভিষেকের (Abhishek Banerjee) যুগলবন্দি। অভিষেক অবশ্য এদিন নিজের বক্তব্য খুব বেশি দীর্ঘায়িত করেননি। ২৫টি বিধানসভার কর্মীদের সামনে এদিন প্রথম থেকেই চাঁচাছোলা ভাষায় শাহকে আক্রমণ করেছেন মমতা। কখনও তা পৌঁছেছে তুই-তোকারির পর্যায়েও।

এদিন মমতা প্রথম থেকেই অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ছিলেন। লক্ষ্যণীয়ভাবে এদিনের বক্তৃতার বেশিরভাগ জুড়েই ছিল অভিষেক প্রসঙ্গ। ‘পিসি-ভাইপো’কে নিয়ে কেন্দ্রীয় এবং বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে সবসময় মন্তব্য করতে দেখা যায়। এদিন প্রথমবার ভাইপোকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে উঠে যেন সেই সব আক্রমণের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিলেন মমতা। শাহকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের উচ্চতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

তিনি বলেন, “খালি দিদি আর ভাতিজা নিয়ে বলে।আরে আমি বলছি, আগে ভাতিজার সঙ্গে লড়, পরে দিদির সঙ্গে লড়বি।” স্বাভাবিকভাবেই সেসময় মঞ্চে উপস্থিত কর্মী সমর্থকরা উত্তেজনায় ফুটছেন। এদিন আগাগোড়া অভিষেক প্রসঙ্গেই বেশি কথা বলেছেন মমতা। পাশাপাশি চড়াচ্ছিলেন শাহের বিরুদ্ধে সুরও। তখনই কথায় কথায় অভিষেককে কেন তিনি রাজনীতিতে এনেছিলেন, সে প্রসঙ্গ উত্থাপিত করেন। সেই ঘটনার কথা বলতে তিনি পিছিয়ে যান বেশ কয়েক দশক।

সভায় উপস্থিত কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশেই মমতা বলেন, “অভিষেককে কেন রাজনীতিতে নামিয়েছিলাম জানেন? আজ আমার জন্য ওকে এত কথা শুনতে হয়। আমার ওপর যখন হাজরায় আক্রমণ হয়েছিল, ও তখন ছোট্ট, বছর দুয়েক বয়স। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। বাড়িতে আমাকে দেখে ও তখন একটা কংগ্রেসের পতাকা (মমতা তখন কংগ্রেসে) নিয়ে ঘুরে বেড়াত। আর বলত, দিদিকে কেন মারলে জবাব দাও!”

অতীতের কথাগুলো প্রায় এক টানা বলে যাচ্ছিলেন মমতা। প্রসঙ্গ উত্থাপনের শুরুতে তার গলায় যতটা চড়া ভাব ছিল, তা তখন কিছুটা নমনীয়। তিনি বলতে থাকেন, “সেদিন ওকে কংগ্রেসের পতাকা হাতে ওসব বলতে শুনে রাজনীতিতে এনেছিলাম। অভিষেক বিশেষ গুরুত্ব পায় না আমার কাছে।” আবারও সুর চড়ে। বলেন, “অভিষেককে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়নি? আজও একটা চোখে দেখতে পায় না ও। অভিষেককে উপ-মুখ্যমন্ত্রীও করিনি, দলের সভাপতিও করিনি। সাংসদ হতেও বারণ করেছিলাম। রাজ্যসভায় পাঠানো তো হাতের মুঠোয় ছিল। কিন্তু অভিষেক নিজে মানুষের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে কাজ করতে চেয়েছিল।”

প্রসঙ্গ শেষের আগেই জয় শাহর নাম না করে ফের শাহকে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন মমতা। তিনি বলেন, “তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো বাইরে চলে গেছে। অমিত শাহ তোমাকে বলছি, তোমার ছেলেকে রাজনীতিতে নামাও।” অবশ্য অভিষেক প্রসঙ্গে বলার আগেও শাহের ছেলেকে একবার বিঁধেছেন মমতা। অমিত শাহর উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমার ছেলের ওত সম্পত্তি হল কীভাবে? কেউ কিচ্ছু জানে না যেন। তোমার ছেলেও ছাড় পাবে না। তোমার ছেলে তো আমারও ভাইপো!” কার্যত হুমকির সুরেই হিন্দিতে তিনি বলেন, ‘বলব নাকি সব কিছু?’

মমতা এদিন তাঁর বক্তৃতা দীর্ঘায়িত করেননি। শেষে তিনি বলেছেন, বলা ভাল হুমকি দিয়েছেন, “আমার বাড়ির মেয়েদের নিয়ে কোনও কথা বল না। জেনে রাখো, মরা বাঘ ভাল, কিন্তু ঘায়েল বাঘ আরও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।” উল্লেখ্য, অভিষেক-জায়া রুজিরা নারুলার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর হয়ে সোনা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে একাধিকবার সোচ্চারও হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন: আগে ভাতিজার সঙ্গে লড়, পরে দিদির সঙ্গে লড়বি, শাহকে চ্যালেঞ্জ মমতার

এদিনের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে মমতার সোচ্চার হওয়ার মধ্যে বিশেষ তাৎপর্য দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। শুভেন্দু অধিকারীর ‘তোলাবাজ ভাইপো’ মন্তব্য এবং একাধিক বিজেপি নেতার বারংবার অভিষেককে নিশানা করায় পাল্টা আক্রমণকেই রক্ষণের শ্রেষ্ঠ পথ হিসাবে বেছে নিলেন মমতা। শাহদের আগে অভিষেকের সঙ্গে লড়ার কথা বলে অভিষেকের রাজনৈতিক গুরুত্বে যে বিশেষ স্বীকৃতি দিলেন মমতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকের মতেই, এর আগে কখনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজমুখে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দেননি মমতা। ভোটমুখী রাজ্যে বিজেপির নাগাড়ে আক্রমণকে উপলক্ষ করে ভাইপোকে পিসির এই স্বীকৃতি তাই আগামি দিনের রাজনীতির জন্য বিশেষ তাতৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।