Patharpratima: কুর্নিশ! বাবার অসুখ, সংসার চালাতে অ্যাম্বুল্যান্সের স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিল মেয়ে
Human Story: বাবার চিকিৎসার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে বাবার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বছর কুড়ির তরুণী। কিন্তু অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ বহনের পাশাপাশি অভাবের সংসারের হাল ধরতে অগত্যা লকডাউনের মধ্যে পড়াশোনাটা ছাড়তে হল। এখন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রসূতি মায়েদের মাতৃযানে করে বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াটাই পাথরপ্রতিমার চম্পা বেরার রোজনামচা।
পাথরপ্রতিমার লক্ষ্মীজনার্দনপুর অঞ্চলের মহেশপুর গ্রামের চম্পা বেরা। বয়স খুব বেশি হলে কুড়ি হবে। গরীব ঘর। কোনও মতে টেনেটুনে বাবা সংসার চালাতেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর সংসারে অভাব যেন ক্রমেই মাথা চাড়া দিচ্ছে। মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি করলেও শেষ অবধি তা আর সম্পূর্ণ হল কোথায়! করোনা, লকডাউন ঘরে বসাল সকলকে।
চম্পাও এখন সংসারের জোয়ালই কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সারা মাস মাতৃযান চালিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর থেকে যে টুকু টাকা পান, তা দিয়েই চলে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ। মেয়ের অদম্য জেদ আর লড়াইয়ের কাছে অভাব হার মানায় খুশি বাবা-মা। চম্পার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারাও।
অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি তিন মেয়েকে বড় করেছেন রবীন্দ্রনাথ বেরা। তিন মেয়ের মধ্যে ছোট চম্পা। দুই মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। লকডাউনের মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে রায়দিঘি কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন চম্পা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যন্ত এলাকাগুলি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রসূতিদের হাসপাতালে পৌঁছানো ও নিয়ে আসার কাজ শুরু করেন রবীন্দ্রনাথবাবু।
নার্ভের সমস্যা। আগেই তিনবার অপারেশন করিয়েছেন তিনি। লকডাউনের মধ্যে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রচুর টাকাও ব্যয় হয়ে যায়। এমন কী ঋণ নিতে হয়। ডান পায়ের উপর ভর দিয়ে হাঁটাচলা করার ক্ষমতা শক্তি হারিয়ে ফেলেন রবীন্দ্রনাথ বেরা। এমন পরিস্থিতিতে অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে কী ভাবে চলবে সংসার! মেয়ের পড়াশোনার খরচই বা টানবেন কী করে? ভেবেও বুঝে উঠতে পারছিলেন না বাড়ির কর্তা।
ঠিক সেই সময় বাবার কাছ থেকে শিখে রাখা অ্যাম্বুলেন্স চালানোটাই কাজে লাগে চম্পার। বাবার চিকিৎসার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে বাবার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। পাথরপ্রতিমা ব্লকের আশা কর্মীদের থেকে ডাক পেলেই চম্পা অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে পৌঁছে যান প্রসূতিদের বাড়িতে। এ ছাড়াও খবর পেলে ভাড়ার বিনিময় অন্যান্য রোগীকেও হাসপাতালে নিয়ে যান।
চম্পা বেরা বলেন, “আমরা তিন বোন। দুই দিদির বিয়ের পর বাড়িতে আমি আর মা, বাবা। বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাবা আমাকে আগেই অ্যাম্বুল্যান্স চালানোটা শিখিয়ে দিয়েছিল। এখন আর্থিক সমস্যা। তাই আমিই চালাচ্ছি। পড়াশোনাটা আর করতে পারলাম না। ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষাও দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পর আর সম্ভব হল না পয়সার জন্য।”
আরও পড়ুন: ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ কলকাতা মেডিক্যালের সামনে, নামানো হল র্যাফ