চওড়া হচ্ছে খাল, গৃহহীন হওয়ার মুখে হাজার খানেক পরিবার!
খাল সংস্কারের জেরে বাসস্থান হারাতে বসেছে বাসুদেবপুর, বড়শিমুলিয়া, খেপুত উত্তরবাড়ের হাজার পরিবার
পশ্চিম মেদিনীপুর: নিয়মিতভাবে তাঁরা গ্রাম পঞ্চায়েতে ট্যাক্স দেন। সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি, সরকারি শৌচাগার সব সুবিধাই পেয়েছেন দাসপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লকের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া চন্দ্রেশ্বর খালপাড়ে থাকা হাজার খানেক পরিবার। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সবাই অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েছেন। বসত ভিটে হারানোর আশঙ্কায় নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন কয়েক হাজার মানুষ। উঠছে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন। তীব্র ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বাসিন্দারা?
ঠিক কী ঘটেছে?
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লকের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে চন্দ্রেশ্বর খাল। প্রায় ১৪ কিলোমিটার সেই খাল সংস্কারে হাত লাগিয়েছে সেচ দফতর।প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এদিকে খাল সংস্কারের শুরু হতেই পাড় ঘেঁষে বসবাস করা হাজার খানেক পরিবারকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সেচ দফতর।অর্থাৎ, ৪২ মিটার খাল চওড়া করায় ভিটেমাটি হারাতে বসেছেন দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের বাসুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর, বড়শিমুলিয়ার কয়েকশো পরিবার। একইভাবে দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের খেপুত উত্তরবাড়–সহ খালের ধারে অবস্থিত প্রায় হাজার ও পরিবারেরও একই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। এদিকে সেচ দফতরের দাবি, আইনতই কাজ করছেন তাঁরা। তাহলে দোষ কাদের? কাদের ভুলে বাসস্থান হারাতে বসেছেন এতগুলো পরিবার? এখানেই উঠছে পঞ্চায়েত প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন। কীভাবে দিনের পর দিন সরকারি পরিষেবা পেল খালপাড়ে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা এতগুলি পরিবার? সরকারি যোজনায় বাড়ি করারও বা অনুমতি মিলল কীভাবে? এখন সেচ দফতরের নোটিস পাওয়ার পর কোথায় যাবেন তাঁরা?
আরও পড়ুন: কয়লা কাণ্ডে তদন্তে সিআইডিও, ভোটের মুখে নয়া কৌশল রাজ্যের? কী বলছে রাজনৈতিক মহল?
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও বিকাশ নস্কর প্রায় পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান। তাঁর কথায়, “আগে কীভাবে ওই জায়গার উপর বসবাসকারীরা সরকারি সুবিধা পেয়েছেন তা পঞ্চায়েত সমিতির সাথে আলোচনা করেই বলতে পারব।’’ এতগুলো মানুষের পুনর্বাসনের কী হবে তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। ঘাটাল মহকুমা সেচ দফতরের আধিকারিকদের কথায়, যে সমস্ত বাড়িগুলি খালের ধারে নির্মাণ করা হয়েছিল সেগুলি সেচ দফতরের অনুমতি না নিয়েই হয়েছিল।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, এতদিন সবাই ভোট দিয়ে আসছেন, সরকারি ট্যাক্স জমা করেছেন। এখন বাড়ি ছেড়ে যাবেন কোথায়? প্রশাসনের কাছে দ্রুত পুনর্বাসন প্রকল্পের দাবি করেছেন অনেকে। তাঁদের আরও অভিযোগ, খাল সংস্কারের কাজ শুরুর ঠিক আগেআগে এলাকা খালি করার নোটিস দেওয়া হয়েছে। এদিকে দাসপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি অশিষ হুতাইত জানিয়েছেন, জায়গাটি সেচ দফতরের। এখন অনেকগুলি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। মানবিকতার খাতিরে আমরা তাদের বাসস্থানের ব্যাবস্থা করা যায় কিনা দেখছেন!