Unknown Fever: ‘বিপদ’ অজানা জ্বর, কেন রায়গঞ্জে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা?
Raiganj: কোভিড পরিস্থিতি শিশুমৃত্য়ুর বড় কারণ। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্সকদের একাংশের দাবি, করোনাকালে এমনিতেই পরিবেশগত কারণে সাধারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষেরও রোগপ্রতিরোধক্ষমতা কমেছে।
উত্তর দিনাজপুর: ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অজানা জ্বর। পুজোর আগেই রাজ্য়জুড়ে অজানা জ্বরের (Unknown Fever) দাপটে তটস্থ হয়েছিল বাংলা। একের পর এক শিশুমৃত্যুর জেরে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছিল। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ‘মরসুমি’ জ্বরেই মৃত্যু ঘটছে। পুজোর শেষে ফের দেখা গিয়েছে, রায়গঞ্জে ক্রমেই বাড়ছে শিশুমৃত্যু। শেষ এক সপ্তাহে মোট ১৩ জন শিশুর মৃত্যু (Child Death) হয়েছে। বুধবার রাত থেকে কোনও শিশুর মৃত্যু না হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। কেন আচমকা এই জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে?
সূত্রের খবর, শেষ একমাসে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে রোজই ভর্তি হচ্ছে জ্বরে আক্রান্ত শিশুরা। কখনও একজন-দুইজন, কখনও বা একদিনে ছয়-সাতজন। ক্রমেই বাড়ছে সেই আক্রান্তের সংখ্যা। এই আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই ইটাহার ও রায়গঞ্জের। এছাড়াও দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর-সহ একাধিক এলাকা থেকে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। কিছু ভর্তি হচ্ছে বিহার থেকেও।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর এই শিশুমৃত্যু হয়ে থাকে। মরসুমি জ্বরের কারণে বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হয়। যা অত্যন্ত সাধারণ। কিন্তু এ বছর আচমকা এই মৃত্য়ুহার বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলেই দাবি করছেন চিকিত্সকেরা। প্রথমত, দেখা গিয়েছে যে সকল শিশুদের মৃত্য়ু হয়েছে সেই তারা প্রত্যেকেই হয় প্রিম্যাচিওর সন্তান, বা অনাক্রম্যতা কম। শুধু সেটা নয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে থাকা শিশুদের অনেকেই নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত। কখনও হার্টের অসুখ, কখনও বা অন্য কোন জটিল রোগ। ফলে মৃত্য়ু বাড়ছে।
দ্বিতীয়ত, কোভিড পরিস্থিতি শিশুমৃত্য়ুর বড় কারণ। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্সকদের একাংশের দাবি, করোনাকালে এমনিতেই পরিবেশগত কারণে সাধারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষেরও রোগপ্রতিরোধক্ষমতা কমেছে। পাশাপাশি, মরসুমি প্রভাব তো রয়েছেই। হঠাত্ হঠাত্ আবহাওয়ার বদল এর একটা বড় কারণ। সেখানে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। ডাক্তারি পরিভাষায়, ‘সিভিয়র কন্ডিশন’ হলেই সেই শিশুর মৃত্য হচ্ছে। অন্যদিকে, এ বছর মৃত্য়ুহারের মতো জন্মের হারও বেড়েছে বলে দাবি করেছেন চিকিত্সকেরা।
তবে, শিশুদের অভিভাবক ও হাসপাতালের বেশ কিছু শিশু বিশেষজ্ঞদের দাবি, রায়গঞ্জ মেডিক্য়ালেই একমাত্র শিশুদের জন্য জরুরি বিভাগ ও পৃথক শিশুবিভাগ রয়েছে। জেলার আর কোনও হাসপাতালে এই ব্যবস্থা নেই। ইসলামপুরে শিশুবিভাগ থাকলেও সেখানে শিশুদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ জরুরি বিভাগের ব্যবস্থা নেই। ফলে, গোটা জেলার চাপটাই এসে পড়ে রায়গঞ্জে। এদিকে, হাসপাতালে শিশুদের জন্য আলাদা করে ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেকসময়েই ঘাটতি দেখা যায়।
মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ও এসএনইউসির ইনচার্জ চিকিত্সক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এটা মরসুমি জ্বরের ফলেই হচ্ছে। যেকোনও শিশুর মৃত্যুই দুঃখজনক। প্রতিবছরই এই সময়ে শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হয়। এখন নতুন করে নভেম্বরের ঠাণ্ডা পড়ছে। এরমধ্যে চুল কেটে মুণ্ডন করা যে শিশুদের জন্য কী ভয়ানক তা বলে বোঝানোর নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা!”
অন্যদিকে, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল কৌশিক সমাজদার বলেন, “কেবল ঠাণ্ডা পরার জন্য নয়, পরিবেশও শিশুদের মৃত্যুর জন্য কারণ। হয়ত সেই শিশু জন্মেছেই দুর্বলভাবে। তার কোনও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই হয়ত তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেই শিশু যদি জ্বরে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে বাঁচানো সম্ভব কী করে!”
চিকিত্সক সুমন পোদ্দারের যদিও দাবি, এভাবে জ্বরে আক্রান্তের ক্রমবৃদ্ধির নেপথ্যে কোনও বিশেষ ভাইরাসের জন্য হতে পারে। সেই ভাইরাসের স্যাম্পেল প্রসেস ঠিক মতো করতে পারলে জ্বরের কারণ ধরা পড়তে পারে। তবে সেই পরীক্ষা কতটা করা সম্ভব সেটাই দেখার। প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহে, রায়গঞ্জ মেডিক্যালের এসএনসিইউতে মোট ১৩ জন সদ্যোজাতর মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে একের পর এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে অজানা জ্বরে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসাকে করোনা ভাইরাস, টাইফয়েডকে দায়ী করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু ও আক্রান্তের কারণ স্পষ্ট হয়নি। বিশেষত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এই শিশু আক্রান্ত ও মৃত্যু চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের চিকিৎসক মহল ও প্রশাসনকে। রায়গঞ্জ হাসপাতালে এমন আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ চিকিৎসকদের।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘উত্সব আটকাবে না’, জগদ্ধাত্রী পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধনে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর