আফগানিস্তানের বুকে হিজাব ছাড়াই গেয়েছিলেন গান, এক লহমায় স্বপ্ন চুরমার সাহসিনীর
পরিস্থিতি বদলাতেই দেশ ছেড়ে চলে গেলেন পপ তারকা আরিয়ানা সঈদ। কাবুল ছাড়তে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করছেন তিনি।
কাবুল: গত ২০ বছরে জন্ম হয়েছিল অনেক স্বপ্নের। একটু একটি করে সে সব স্বপ্নকে রূপ দিতে চেয়েছিলেন আফগানিরা। কিন্তু রাতারাতি যেন ছন্দপতন। স্রোতের মতো চারপাশ ছেয়ে ফেলে তালিবান। সব স্বপ্নকে পিছনে ফেলেই আফগানিস্তানের মাটি ছাড়তে উদ্যত হন বহু মানুষ। যতই ভাবমূর্তি বদলের চেষ্টায় উদারতার কথা বলুক তালিবান, ২০ বছর আগের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিয়েছে, মহিলাদের ভবিষ্যৎ হয়ত এ বার সর্বনেশে। তাই সে দেশ ছাড়তে চাইছেন সন্ত্রস্ত মহিলারা। আর যারা এই ক’বছরে তালিবানের সারিয়া শিকল ভাঙার পথ দেখিয়েছিলেন, তাঁদের যে ছেড়ে কথা বলা হবে না, সেই আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। তাই সুযোগ পেয়েই অবিলম্বে দেশ ছাড়লেন আফগান পপ তারকা আরিয়ানা সঈদ।
আমেরিকার কার্গো বিমানে চেপেই কাবুলের মাটি ছেড়েছেন আরিয়ানা। সোজা উড়ে গিয়েছে কাতারে। তালিবানের হাত থেকে নিষ্কৃতী পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করছেন তিনি। দোহা থেকে সোজা যাবেন ইস্তানবুলে। সেখানকার বাসিন্দা আরিয়ানার স্বামী। দোহা থেকেই তিনি জানান, কয়েকটা বিনিদ্র রাত কাটিয়ে আফগানিস্তান ছাড়তে পেরেছেন তিনি। তবে পুরো অভিজ্ঞতা বলার অবস্থায় নেই এই শিল্পী। তিনি জানিয়েছেনম বাড়ি ফিরে সব কথা জানাবেন তিনি।
৩৬ বছরের এই পপ তারকাকে সম্প্রতি আফগানিস্তানের একটি মিউজিক শো-তে বিচারকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। এক মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন, ২০১৫-তে একটি স্টেডিয়ামে গান গেয়ে আফগানিস্তানের বুকে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তিনি। প্রথমত ছক ভেঙে তিনিই প্রথমবার হিজাবা না পরেই প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে গান করেছিলেন। একজন মহিলা এ ভাবে আগে কখনও গান গায়নি সে দেশে। সারিয়া আইনে বেঁধে দেওয়া আফগান মহিলাদের যাঁরা বোরখার ভিতর থেকে বের করে আনার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আরিয়ানা তাঁদের মধ্যে একজন। এ ছাড়া, এমন একটি স্টেডিয়ামে তিনি গান গেয়েছিলেন যেখানে মহিলাদের প্রবেশাধিকার কেড়ে নিয়েছিল তালিবরা। কিন্তু তালিবানের দখলের পর সে সব স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল।
তবে অনেক আফগান মহিলাই এখনও দেশ ছাড়তে পারেননি। আফগানিস্তানের হাজারা জেলার গভর্নর সালিমা মাজারিকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে তালিবান। মাজারির মতো অনেকেই প্রকাশ্যে তালিবানের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। তাঁদের পরিস্থিতি কী হবে, তা ভেবেই ঘুম উড়েছে আফগান মহিলাদের।
শরিয়া আইন মেনে স্বাধীনতার কথা বলা হলেও সম্প্রতি এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি অফিসে। আরটিএ পাস্তো টিভি চ্যানেলের মহিলা সংবাদ পাঠিকা শবনম দাওরান যখন অফিসে যান, তাঁর অফিসের পরিচয় পত্র দিয়ে গেট খোলে না। এ দিকে বাকি পুরুষ কর্মীরা কিন্তু ঢুকতে পারছেন। কেন তিনি ঢুকতে পারছেন না, জানতে চাইলে তাঁকে বলা হয়, “রাজত্ব বদলে গিয়েছে। তোমার আর প্রবেশাধিকার নেই। বাড়ি যাও।” এ ভাবেই ক্রমশ প্রকট হচ্ছে ফতোয়ার বোঝা। আরও পড়ুন: ‘খারাপ’ রান্না হলেই পুড়িয়ে মারার নির্দেশ, নাবালিকারা যৌনদাসী! আইনজীবীর জবানিতে তালিবানের ‘নারী স্বাধীনতা’