‘কোনওদিনই সেনা প্রত্যাহারের সঠিক সময় আসত না’, রুক্ষস্বরে পাশে থাকার বার্তা বাইডেনের
বাইডেন জানান, হাজার হাজার মার্কিন বাসিন্দা, যারা এত বছর ধরে আফগানিস্তানে কাজ করেছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে আগামিদিনেও এবং এই কাজে যদি তালিবানরা বাধা সৃষ্টি করে তবে মার্কিন সেনা "মোক্ষম" জবাব দেবে।
ওয়াশিংটন: অবশেষে নিরাবতা ভাঙলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। আফগানিস্তানের (Afghanistan) পরিস্থিতি নিয়ে লাগাতার আমেরিকার সমালোচনা ও প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নিয়ে নিন্দার জবাবে সোমবার তিনি বললেন, “আফগানিস্তানকে সহায়তা করলেও আমি নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকব।”
মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরুর পরই শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছিল তালিবানরা। যত মার্কিন সেনা সরেছে, ততই একের পর এক শহর দখল নিয়েছে তালিবানরা। আফগান সেনা মার্কিন বাহিনীর কাছে সাহায্যের আশা করলেও কার্যত হাত গুটিয়েই বসে ছিল তারা। তালিবানের হাতে গোটা আফগানিস্তানের ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরই দোষারোপ শুরু হয়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে কূচনীতিবিদরা সকসেই সমালোচনা করে বলেছেন, বাইডেনের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই আফগানিস্তানের এই হাল।
এর জবাবেই সোমবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “আমি নিজের সিদ্ধান্তেই স্থির থাকব। দীর্ঘ ২০ বছর পর আমি বুঝতে পেরেছি যে সেনা প্রত্যাহারের সঠিক সময় কোনওদিনই আসেনি”। সেনা প্রত্যাহার নিয়ে যাবতীয় সমালোচনা ঝেড়ে ফেলে ৯/১১ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আফগানিস্তানকে হাতে কলমে গড়ে তোলা কখনওই আমাদের লক্ষ্য ছিল না। ”
বাইডেন জানান, হাজার হাজার মার্কিন বাসিন্দা, যারা এত বছর ধরে আফগানিস্তানে কাজ করেছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে আগামিদিনেও এবং এই কাজে যদি তালিবানরা বাধা সৃষ্টি করে তবে মার্কিন সেনা “মোক্ষম” জবাব দেবে।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতির জন্য আমেরিকা নয়, আফগানরা নিজেই দায়ী বলেও অভিযোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, মার্কিন সেনা অভিযানের দায়িত্ব তিনি নিলেও আফগান প্রশাসনে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, যারা বিগত ২০ বছর ধরে মার্কিন সহায়তা পেয়েছেন, তাদের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আসরাফ ঘানি বিনা যুদ্ধেই তালিবানদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন, তাই প্রশ্ন তাঁকেই করা উচিত বলে ক্ষোভ উগরে দেন বাইডেন।
তালিবান আগ্রাসন প্রতিরোধ করেনি কেন আমেরিকা, এই প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, “আফগানিস্তানকে নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য আমরা যাবতীয় সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই ভবিষ্যতের জন্য তাদের মধ্যে যুদ্ধের ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে পারিনি আমরা।”
তালিবানের আগ্রাসন গতি যে আশাতীত ছিল, তা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যা অনুমান করেছিলাম, তার থেকে দ্রুত তারা (তালিবান) বিস্তার করেছে”। তবে কাবুল বিমাবন্দরে গতকালের মর্মান্তিক ঘটনা প্রসঙ্গ এড়িয়ে বাইডেন সাফ কথা ছিল একটা, বিগত ২০ বছর ধরে তারা যে যুদ্ধ চালিয়েছিল, তা শেষ হওয়ার দরকার ছিল।
রাশিয়া, চিনকে কটাক্ষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “আমাদের আসল প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া, চিন তো চাইবেই যে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কোটি কোটি ডলার অর্থ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য ঢেলে যাই।”
আফগানিস্তানের পরিস্থিতিতে তিনি যে একটুও প্রভাবিত নন, তার প্রমাণ মিলল বৈঠক শেষেই। আফগানিস্তানকে সাহায্যের কথা বললেও, যখন তার উপর গোটা দেশ থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেইসময়ই তিনি ক্যাম্প ডেভিডে চলে গেলেন ছুটি কাটাতে। আরও পড়ুন: জনগণের সরকার হলে তালিবানের জন্য দরজা খোলা: বাংলাদেশ