Financial Crisis: চিনের ফাঁদে পা দিয়েই কি অর্থনৈতিক সংকটে জেরবার এই দেশগুলি?

Financial Crisis: বাংলাদেশও এখন সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই কারণে ভারতের প্রতিবেশী দেশে রাতারাতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।

Financial Crisis: চিনের ফাঁদে পা দিয়েই কি অর্থনৈতিক সংকটে জেরবার এই দেশগুলি?
ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 10, 2022 | 5:20 PM

ঋণের দায়ে জর্জরিত পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক বোঝার একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে চিন থেকে নেওয়া ঋণ। বাংলাদেশও এখন সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই কারণে ভারতের প্রতিবেশী দেশে রাতারাতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। একের পর এক উন্নয়নশীল দেশে এই অবস্থা দেখে চিনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনশিয়েটিভের অথবা বিআরআই আওতায় ঋণ নেওয়ার আগে দু’বার ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর্থিক সংকটের কারণে এই উন্নয়নশীল রাজ্যগুলিতে বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছে। পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। অন্যদিকে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাতে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝার কারণে রাতারাতি নাটকীয় পরিবর্তনে সরকারের পতন হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে দ্বীপরাষ্ট্রে আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নেপালের অবস্থাও অনেকটাও একই রকম। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি আটকাতে সেদেশের সরকার চলতি বছরের শুরুতেই গাড়ি, বিলাসবহুল সামগ্রী আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। কীভাবে চিন থেকে নেওয়া ঋণ এই রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছে।

ফাঁদের নাম বিআরআই

এই প্রত্যেকটি দেশের মধ্যে একটি বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে, প্রত্যেকেই বিআরআইের আওতায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চিনের থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। চিনের এই বিআরআই প্রোজেক্টের আওতা য় বিশ্বের ৭০টি দেশ রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। বিআরআই আওতায় চিনা সরকার বিভিন্ন দেশে বন্দর, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, ড্যাম, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথের মতো পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করে থাকে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ, ভারতের প্রতিবেশী এই তিনটি দেশই চিনের বিআরআই প্রোজেক্টের আওতায় রয়েছে। যার মধ্যে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার আর্থিক পরিস্থিতি সঙ্গীন ও বাংলাদেশেও সংকটের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথবা ওইসিডি জানিয়েছে, বিআরইয়ের মাধ্যমে চিনা সরকার নিজেদের দেশের পাশাপাশি মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়া, ইউরোশিয়ান দেশ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া, পাকিস্তান ও ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইন্দো-চিন অঞ্চলে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে আগ্রহী। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে আর্থিক সংকট নেমে আসার পর ‘মৌনতা’-র রাস্তার হেঁটেছে বেজিং। সেই কারণে বিশেষজ্ঞদের মতে হচ্ছে, কূটনৈতিকভাবে চিন ‘ঋণ ফাঁদ’ নীতি অবলম্বন করেছে।

পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় সংকটের পর সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতি দেখার পর বিশেষজ্ঞরা এই দ্বীপরাষ্ট্রের পরিণতি থেকে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে শিক্ষা নিতে বলেছেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ রসুল নিউজ১৮-কে জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলির বিদেশী ঋণ সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের তুলনায় চিনের দিকে বেশি ঝুঁকতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাদের মতে, ঋণ নীতির মাধ্যমে চিন আন্তর্জাতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চাইছে চিন। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে বিপুল পরিমাণ লাভ করেছে চিন। চিনা ঋণের কারণে এই দেশগুলির অর্থনৈতিক সংকট জোরাল হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও লাওস চিনের পরবর্তী ‘টার্গেট’

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তাফা কামাল সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে চিন থেকে অত্যাধিক ঋণ না নেওয়ার আবেদন করেছেন। এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতকারে শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানিয়েছেন, সেদেশে যাবতীয় চিনা প্রোজেক্ট ব্যর্থ হয়েছে। মুস্তাফা কামালের মতে, দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সবাই চিনকে দায়ী করছে, কিন্তু চিন কোনওভাবেই এই দায় অস্বীকার করতে পারেন না। উল্লেখ্য, গতমাসেই বাংলাদেশ সরকারের তরফে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফের থেকে অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়েছে। বিআরাইয়ের আওতায় বাংলাদেশের থেকে চিনে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ৪০০ কোটি মার্কিন ডলায় যা বাংলাদেশের মোট বিদেশী মুদ্রার ৬ শতাংশ।

অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাওসের আর্থিক অবস্থাও সঙ্গীন। এর কারণও চিন। এই ছোট রাষ্ট্র চিনের থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে বেজিংয়ের দেওয়া ঋণের দায়ে ডুবে আছে লাওস।