‘আমার কোলেই মরে গেল ৫ বছরের বাচ্চাটা’, ঠিক কোন সময়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী

কার্ল জানান, মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা কাঁটাতারের ওপারেই ছিল। পাসপোর্ট যাচাই করার জন্যই তাঁরা এইদিকে এসেছিল, যাদের ভিসা ছিল, তাদের বিমানবন্দরের ভিতরে যেতে দিচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময়ই আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে।

'আমার কোলেই মরে গেল ৫ বছরের বাচ্চাটা', ঠিক কোন সময়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী
বিস্ফোরণের পরের চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 28, 2021 | 4:07 PM

কাবুল: বিমানে উঠবেন বলে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আগের সবার পাসপোর্ট-ভিসা যাচাই করছিলেন মার্কিন আধিকারিকরা। আচমকাই বিকট একটা শব্দ, কেঁপে উঠল সবকিছু। বিস্ফোরণের আঘাত বা আমেরিকায় না যেতে পারার থেকেও নিজের কোলে পাঁচ বছরের একটা ফুলের মতো শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ার আঘাতই সহ্য করতে পারছেন না ওই আফগান ব্যক্তি।

বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের প্রত্য়ক্ষদর্শী ছিলেন তিনি। বরাত জোরে নিজে রক্ষা পেলেও আশেপাশের মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য চাইলেও কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। কার্ল (পরিচয় গোপনে) নামক ওই ব্যক্তি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তিনি কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে কাবুলের হামিদ কারজ়াই বিমানবন্দরের অ্যাবেই গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। খালের পাশ দিয়ে অনেকেই বিমানবন্দরে ঢুকছিলেন। তাদের নথি যাচাই করছিলেন মার্কিন বাহিনীর আধিকারিকরা। আর কয়েকজন পরই তাঁর পালা ছিল বিমানবন্দরে ঢোকার, তার আগেই  ঠিক বিকেল পাঁচটা নাগাদ পিছনেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয়।

হুঁশ ফিরতেই চারিদিকে শুধু আর্তনাদই শোনেন তিনি। নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে উঠে দাড়াতেই দেখেন সারি সারি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে আশেপাশে। বিস্ফোরণের জেরে তাদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। কান্নার আওয়াজ শুনেই যখন তিনি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময়ই একটি পাঁচ বছরের শিশুকে আহত অবস্থায় পান। রক্তে  মাখা শিশুটিকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করছিলেন, সেইসময়ই তাঁর কোলেই মারা যায় শিশুটি। ওই ব্যক্তি বলেন, “বাচ্চাটা আমার কোলে ছিল, ওভাবেই ও মারা গেল।”

কার্ল জানান, মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা কাঁটাতারের ওপারেই ছিল। পাসপোর্ট যাচাই করার জন্যই তাঁরা এইদিকে এসেছিল, যাদের ভিসা ছিল, তাদের বিমানবন্দরের ভিতরে যেতে দিচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময়ই আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে। সূত্রের খবর, কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই প্রথম দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরে আততায়ীরা নির্বিচারে আহতদের উপর গুলিও চালায়। কয়েক ঘণ্টা বাদে ফের দুটি বিস্ফোরণের খবর মেলে। এদের মধ্যে একটি বিমানবন্দরের কাছেই বিস্ফোরণ বোঝাই গাড়িতে তালিবানিদের একটি গাড়ি ধাক্কা মারার কারণে ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদের মধ্যে ২৩ জন মার্কিন বাহিনীর সদস্যও ছিলেন। ২৮ জন তালিবানিও মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠন। ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কোনওমতেই ক্ষমা করা হবে না। উচিত শাস্তি দেওয়া হবে। এরপরই এ দিন সকালে জানা যায়, গতকাল আইসিস-কে ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। আরও পড়ুন: কথা রাখলেন বাইডেন, কাবুল হামলার চক্রীদের উপরই পাল্টা ড্রোন হামলা মার্কিন বাহিনীর